শেষ বেড়েছিল প্রায় দশ বছর আগে।
প্রায় এক দশক পরে ট্রেনের যাত্রী-ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিল রেল মন্ত্রক। রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী আজ বলেন, “বাতানুকূল শ্রেণিগুলোয় যাত্রী-ভাড়া পুনর্বিন্যাস নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।” তবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবুজ সঙ্কেত দিলেই তাঁর মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে এগোবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। তিনি এখনও সব পথ খোলা রাখলেও বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য মনে করছেন, যাত্রী ও পণ্য পরিবহণে লাগাতার লোকসান ঠেকাতে হলে দু’টো ক্ষেত্রেই ভাড়া বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই।
ভারতীয় রেলে যাত্রী-ভাড়া শেষ বেড়েছিল এনডিএ জামানায়, ২০০২-০৩ অর্থবর্ষে। নীতীশকুমার তখন রেলমন্ত্রী। তার পরে লালুপ্রসাদ থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেউই ভাড়া বৃদ্ধির মতো ‘অপ্রিয়’ সিদ্ধান্ত নিতে চাননি। বরং কিছু ক্ষেত্রে তা কমানো হয়েছে। প্রাক্তন রেলমন্ত্রীরা এই ‘জনমোহিনী’ পথ না-ছাড়লেও যোজনা কমিশন গত ক’বছর ইস্তক রেল মন্ত্রককে অনবরত ভাড়া বৃদ্ধির জন্য চাপ দিয়ে আসছে। এমনকী, আজ সংসদে পেশ হওয়া সিএজি রিপোর্টেও (২০০৯-১০) যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের মাসুল নিয়ে রেলমন্ত্রককে ‘যুক্তিযুক্ত’ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রক কী ভাবছে?
দীনেশ আজ বলেন, “স্লিপার বা সাধারণ শ্রেণির ভাড়া বৃদ্ধির কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে বাতানুকূল শ্রেণির ভাড়া বাড়ানো যায় কি না, তা খতিয়ে দেখার কথা ভাবা হচ্ছে।” এবং সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্লিপার ও সাধারণ শ্রেণির ভাড়া কমানোও হতে পারে বলে জানিয়ে রেখেছেন রেলমন্ত্রী। বস্তুত যোজনা কমিশন, সিএজি থেকে শুরু করে খাস প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফেও যাত্রী-ভাড়া বৃদ্ধির জন্য যে রকম চাপ আসছে, তার প্রেক্ষিতে খুব দ্রুত এই মর্মে সিদ্ধান্ত হয়ে যেতে পারে বলে রেল-সূত্রের খবর। পাশাপাশি ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে যাত্রী-ভাড়ায় ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’-এর কথাও ভাবা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় ডিজেলের দাম ওঠা-নামা করলে টিকিটের দামও বাড়বে-কমবে।
কিন্তু কী করা যেতে পারে না-পারে, সে সম্পর্কে দীনেশ সবার আগে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা করে নিতে চান। রেলমন্ত্রীর কথায়, “নেত্রী সম্মতি দিলে তবেই আমরা এ বিষয়ে মনমোহন সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করব।” যদিও রেল মন্ত্রকের একাংশের মতে, বাতানূকুল শ্রেণির ভাড়া বাড়লে তা অযৌক্তিক কিছু হবে না। এই মহলের বক্তব্য, এসি-র টিকিট কাটার ক্ষমতা রাখেন যাঁরা, তারা টিকিটের পিছনে আরও পঞ্চাশ-একশো টাকা স্বচ্ছন্দে খরচ করতে পারবেন। দীনেশ নিজেও বলেন, “যাত্রীরা ট্রেনে উঠে ভাল খাবার, পরিচ্ছন্ন বেডরোল, সাফসুতরো শৌচাগার পেলে ওই বাড়তি টাকা দিতে আপত্তি করবেন না ধরে নেওয়া যায়।”
এবং সেই কারণেই ভাড়াবৃদ্ধির আগে আপাতত নিজেদের পরিকাঠামো উন্নতিতে জোর দিতে চাইছে মন্ত্রক। অন্য দিকে আজ সিএজি-রিপোর্টে যে ভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণে রেলের ‘ক্ষতি’র ছবিটা তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতে তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ সালে যেখানে পণ্য পরিবহণের বৃদ্ধির হার ছিল ১২.৬৫%, সেখানে পরের অর্থবর্ষে তা কমে হয়েছে ৯.৪৯%। যাত্রী-ভাড়া থেকে আয় কমেছে প্রায় ৩.৫%। ফলে অপারেটিং রেশিও (একশো টাকা আয় করতে যত খরচ হয়) বেড়েছে। ১৬টি জোনের মধ্যে ৮টিতেই তা একশোর উপরে চলে গিয়েছে! যার অর্থ, রেলের সার্বিক আয় কমে গিয়ে হু হু করে বেড়েছে খরচ। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া অন্য উপায় দেখছেন না বিশেষজ্ঞেরা। |