সনিয়া গাঁধী ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। তবে সফল হয়েছে তাঁর অস্ত্রোপচার। এই কথা জানানোর পাশাপাশি কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব আজ বুঝিয়ে দিলেন, সভানেত্রীর অসুস্থতার কারণে কংগ্রেসে কিছু থেমে নেই। নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ীই ভাল ভাবে চলছে সব। কংগ্রেসের তরফে এক বিবৃতিতে আজ বিকেলে জানিয়ে দেওয়া হল, “সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী দলের কিছু বিভাগ এবং কয়েক জন সাধারণ সম্পাদক ও সচিবের দায়িত্বে কিছু রদবদল করেছেন।” এই রদবদলের তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।
আপাত ভাবে এই রদবদলে পুনর্বাসন পেয়েছেন দলের কিছু নেতা-নেত্রী। তবে রাজনৈতিক ভাবেও এই রদবদলকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কারণ, দলের সমন্বয় সংক্রান্ত কমিটি গঠনের ঘোষণাও করা হয়েছে এ দিন। বিভিন্ন প্রসঙ্গেই দল ও সরকারের মধ্যে দূরত্ব বা সমন্বয়ের অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সম্প্রতি। সনিয়া যে এই সমস্যা দূর করতে তৎপর সেই বার্তাও রয়েছে আজকের এই রদবদলে।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী আজ সকালেই জানান, “গত কাল সনিয়া গাঁধীর শরীরে অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। তাঁকে এখন ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে।” জনার্দন এ-ও জানান, সনিয়ার দেখভালের জন্য রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা ও রবার্ট বঢরা সেখানে রয়েছেন। বিষয়টি যে-হেতু তাঁর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত, তাই এগুলিকে চর্চার প্রসঙ্গ না করে তোলার আবেদন জানানো হয়েছে গাঁধী পরিবারের তরফে। ফলে স্পষ্ট যে, কোথায় বা কী রোগের চিকিৎসা চলছে সনিয়ার, আজও কংগ্রেসের তরফে অন্তত তা বলা হয়নি। |
তবে কংগ্রেস সভানেত্রীর অসুস্থতার খবরে যে দলের সর্বস্তরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা-ও পরিষ্কার। পাশাপাশি, তাঁর অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিক বিষয় পরিচালনার জন্য রাহুল গাঁধী, আহমেদ পটেল-সহ চার নেতাকে নিয়ে কমিটি গঠন করে দেওয়ার ব্যাপারে দলের মধ্যে আলোড়ন-আলোচনা অব্যাহত ছিল এ দিনও। এই অবস্থায় কংগ্রেসের তরফে আজ সুকৌশলে দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে পরিবর্তন ঘটানোর বিবৃতি দেওয়া হল বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। কৌশলে ওই বিবৃতিতে এ-ও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, রদবদলের এই সিদ্ধান্ত সনিয়া গাঁধীরই। চার সদস্যের কমিটির নয়। বস্তুত চার সদস্যের মধ্যে অন্যতম সদস্য রাহুল এখন সনিয়ার সঙ্গেই রয়েছেন।
ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকেই কি সনিয়া এই রদবদলের নির্দেশ পাঠিয়েছেন? এ বিষয়ে কিন্তু বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, সিদ্ধান্তগুলি সনিয়া আগেই নিয়েছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই সব সিদ্ধান্তই দল আজ ঘোষণা করল, শীর্ষ নেত্রী হিসেবে সনিয়াকে ‘একই রকম সক্রিয়’ হিসেবে তুলে ধরতে।
এখানেই শেষ নয়। দলনেত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়ে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনায় দশ জনপথের সামনে যে কংগ্রেস সমর্থকদের ঢল নামতে পারে এমন আশঙ্কা গত কাল থেকেই ছিল। তা যাতে না হয়, সে জন্য গত কাল রাতেই হাইকম্যান্ডের তরফ থেকে দলের সর্বস্তরে কঠোর বার্তা দেওয়া হয় যে, কেউ যেন দশ জনপথের সামনে ভিড় না করেন। স্বাভাবিক ভাবেই সেই নির্দেশ কেউই লঙ্ঘন করেননি। বরং অন্য দিনের তুলনায় কংগ্রেস সদর দফতর ছিল অনেকটাই ফাঁকা। তার লাগোয়া দশ জনপথের গেটের সামনেটাও ছিল সুনসান। এর পরেই আজ বিকেলে রদবদলের বিবৃতিটি প্রকাশ করেন জনার্দন দ্বিবেদী।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক রদবদলে জয়ন্তী নটরাজনকে পরিবেশ মন্ত্রী করা হয়েছে। জয়ন্তী ছিলেন কংগ্রেস মুখপাত্র। তাঁর জায়গায় নতুন মুখপাত্র করা হয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের রেণুকা চৌধুরীকে। শাকিল আহমেদকে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য করে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দেওয়ায় দলের আর এক মুখপাত্রের পদটিও এত দিন শূন্য ছিল। সেই পদে উত্তরপ্রদেশের সংখ্যালঘু নেতা রশিদ আলভিকে মুখপাত্র করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় এই পদক্ষেপ প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
এরই পাশাপাশি আরও দুই নেতা-নেত্রীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন সনিয়া। প্রথম জন সুরেশ পচৌরি। মধ্যপ্রদেশের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে পচৌরিকে সরিয়ে দেওয়ার পর তাঁর পুনর্বাসন অনেক দিন ধরেই বকেয়া ছিল। তাঁকে দলের সমন্বয় ও গবেষণা বিভাগের আহ্বায়ক করা হয়েছে। বস্তুত বুড়ারিতে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পর এই বিভাগটি তৈরি করেন সনিয়া। কারণ, দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে চাইছেন তিনি। তাই এই কমিটিতে এক দিকে যেমন জনার্দন দ্বিবেদী, দিগ্বিজয় সিংহ, মণীশ তিওয়ারিকে সদস্য করা হয়েছে, তেমনই রাখা হয়েছে অম্বিকা সোনি, গুলাম নবি আজাদ, জয়রাম রমেশ, পবন বনশল, আনন্দ শর্মার মতো মন্ত্রীদের।
একই ভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে গিরিজা ব্যাসের। গিরিজা এক সময়ে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাঁরও কোনও পদ নেই। কংগ্রেসের ‘বিচার বিভাগ’-এর সভানেত্রী ও দলীয় মুখপত্র ‘সন্দেশ’-এর সম্পাদক করা হয়েছে তাঁকে।
চুম্বকে দলের মধ্যে সব কিছু যে স্বাভাবিক রয়েছে, আজ সেই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু প্রশ্ন হল, বার্তা গেল কী? সনিয়ার অনুপস্থিতিতে দলে রাহুলের ভূমিকা ও গুরুত্ব যে বাড়বে গত কালই সনিয়া তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দলের অন্দরে এ নিয়েও আলোচনা চলছে যে, রাহুল কতটা সফল ভাবে সেই বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? বিশেষ করে দল ও সরকার যখন সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলছে। |