|
|
|
|
প্রকাশ্যে ‘কাছাকাছি’ এলেন কারাট-বুদ্ধদেব |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
ঘুরে দাঁড়াতে ‘আত্মসমালোচনা’, মানুষের কাছে গিয়ে ‘ভুল স্বীকার’ এবং তা সংশোধনের অঙ্গীকার শেষ পর্যন্ত ‘কাছাকাছি’ নিয়ে এল প্রকাশ কারাট এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে!
স্থান, মহাজাতি সদন। উপলক্ষ, মুজফ্ফর আহমেদের ১২৩ তম জন্মদিবস পালন অনুষ্ঠান।
বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পরে এত দিন সিপিএমের এই দুই শীর্ষ নেতাকে প্রকাশ্যে পাশপাশি বসে কথা বলতে দেখা যায়নি। বরং যাতে কারাটের মুখোমুখি হতে না হয়, তার জন্য দিল্লি ও হায়দরাবাদে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। তবে রাজ্য কমিটিতে ইতিমধ্যে দু’বার পাশাপাশি বসে দলীয় সহকর্মীদের সমালোচনা শুনতে হয়েছে দু’জনকেই। অবশেষে শুক্রবার প্রকাশ্যে পাশাপাশি দেখা গেল দু’জনকে। সহাস্যে! আগামী দিনে বামপন্থীদের ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ দুই নেতাই একই দাওয়াই দিলেন। |
|
কাছাকাছি: মুজফ্ফর আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রকাশ কারাট
ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুক্রবার মহাজাতি সদনে। - দেশকল্যাণ চৌধুরী |
দু’জনেই বললেন, পরাজয়ের কারণ নিয়ে ‘আত্মসমালোচনা’ করতে হবে। খুঁজে বার করতে হবে কোথায় ‘ভুল’ হয়েছে। সেই সঙ্গে মানুষের দরজায় গিয়ে বলতে হবে, যে সব কর্মী ‘ভুল’ করেছেন, দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। বুদ্ধ-কারাট দু’জনেই মনে করেন, এই পথেই পুনরায় রাজ্যবাসীর আস্থা ফিরে পাবেন বামপন্থীরা। দলের শীর্ষ স্তরের দুই নেতাকে এ ভাবে এক সুরে কথা বলতে দেখে সভায় উপস্থিত সিপিএমের কেন্দ্রীয়, রাজ্য, জেলা বা লোকাল কমিটির নেতারা ‘স্বস্তি’র নিঃশ্বাস ফেললেন।
আলিমুদ্দিনে পলিটব্যুরোর বৈঠক সেরে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর সঙ্গে বুদ্ধবাবু, কারাট একই সঙ্গে মঞ্চে প্রবেশ করেন। বসেনও পাশপাশি। পিছনের সারিতে সীতারাম ইয়েচুরি, নিরুপম সেন। ভোটে বামফ্রন্টের পরাজয়ের পরে এই প্রথম কারাট কলকাতায় এসে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন। কেন্দ্রীয় কমিটি পরাজয়ের কারণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে, তা জানিয়ে কারাট বলেন, “বামফ্রন্ট হেরে গেলেও পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল থেকে বামপন্থাকে হঠানো যাবে না। কারণ, বামপন্থীরাই মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে ভূমিহীনদের জমি বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের দাবিতে আন্দোলন করে।” আগামী দিনে দলের নেতা-কর্মীদের কর্তব্য কী হবে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কারাট বলেন, “আমাদের মানুষের কাছে গিয়ে বিনম্র ভাবে বলতে হবে, আমরা কিছু ভুল করেছি। এখন সেই ভুল সংশোধনের জন্য নানা কার্যকর পদক্ষেপ করছি। এ ভাবেই মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়া সম্ভব।”
একই সুরে বুদ্ধবাবুও বলেন, “কী করা উচিত ছিল, কী করতে পারিনি, তা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। আমরা শ্রমিকের স্বার্থেই শিল্পায়ন চেয়েছি। কিন্তু শিল্পায়ন করতে গিয়ে কোথাও কি শ্রমিক-স্বার্থের অভিমুখে ভুল হয়েছে? কোথায় শ্রমিক, কৃষক গরিব মানুষের মনে আঘাত লেগেছে, তা খুঁজে বার করে আত্মসমালোচনা করতে হবে।” দলের বিরাট সংখ্যক সদস্য ও তাঁদের নিষ্ঠার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বুদ্ধবাবু বলেন, “কেন কিছু কর্মীর আদর্শ-নিষ্ঠায় ভুল হল? কেন কিছু মানুষ বললেন, তোমাদের যা ভুল হয়েছে, তা কমিউনিস্টদের হবে কেন? আমাদের এই ভুল সংশোধন করে মানুষকে দেখাতে হবে।” বিমানবাবুও বলেন, “এমন ভাবে কর্মীদের নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে, যাতে জনগণও বুঝতে পারে, ওরা যা করেছে, ভুল করেছে। তাই নিজেদের পরিবর্তন করছে।”
পলিটব্যুরোর বৈঠকে এ দিন সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী দিনে মূল্যবৃদ্ধি ও কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আন্দোলন আরও তীব্র করা হবে। বস্তুত, বৃহস্পতিবার মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে লোকসভায় কংগ্রেস-বিজেপি একই সঙ্গে ভোট দেওয়ায় আগামী দিনে দু’পক্ষকেই একই সঙ্গে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারাট এ দিন বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতি রোধে কেবল ব্যর্থ তা-ই নয়, কোনও কার্যকর পদক্ষেপ করছে না।” ভবিষ্যতে দলের চলার পথ নির্ধারণ করতে কেরলের কোঝিকোডে আগামী বছর ৪ থেকে ৯ এপ্রিল ২০ তম পার্টি কংগ্রেস বসবে বলেও এ বারের বৈঠকে প্রাথমিক ভাবে ঠিক করেছে পলিটব্যুরো।
রাজ্যে যে ভাবে বাম কর্মীদের উপরে অত্যাচার হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রচারের পাশপাশি প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথাও বলেন কারাট। তাঁর কথায়, “কেরলে বামপন্থীদের উপরে বারবার আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু বামপন্থা শেষ করা যায়নি। এখানেও করা যাবে না। কারণ, বামপন্থীরা বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে মানুষের স্বার্থে লড়াই করে।” বুদ্ধবাবুও বলেন, “যে ভাবে কৃষকদের জমি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে, আমরা তা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।
আমরা ছেড়ে দেব না! পার্টিকে সর্বশক্তি নিয়ে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।” |
|
|
|
|
|