কাউন্সিলের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব প্রকাশ্যে
মেন্টর গ্রুপের প্রতিধ্বনি করেই প্রেসিডেন্সি নিয়ে চিঠি সুরঞ্জনের
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মেন্টর গ্রুপের মতপার্থক্য সামনে এসেছিল দিন কয়েক আগেই। মেন্টর গ্রুপের সঙ্গে সহমত হয়ে এবং নিজের মতামত জানিয়ে এ বার প্রেসিডেন্সির উপাচার্যকে চিঠি দিলেন প্রেসিডেন্সির কাউন্সিল সদস্য তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।
প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অমিতা চট্টোপাধ্যায়কে শুক্রবার চিঠি পাঠিয়ে কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তে তাঁর আপত্তির কথা সরাসরি জানিয়েছেন সুরঞ্জনবাবু। প্রেসিডেন্সির জন্য গড়া মেন্টর গ্রুপ আগেই ওই সব ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে অমিতাদেবী যা বক্তব্য, তাতে অবশ্য কাউন্সিল এবং মেন্টর গ্রুপের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই সামনে আসছে। একটি চালু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মমাফিক কাজকর্ম চালাতে গিয়ে মাঝেমাঝে হোঁচট খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যের কথায়, “প্রতিষ্ঠানটি যদি একেবারে নতুন করে শুরু হত, তা হলে পরিস্থিতি অন্য রকম হত। কিন্তু যে হেতু চালু রয়েছে, তাই সেটি চালাতে গিয়ে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়।” এ বছর কয়েকটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম শুরু করা নিয়ে যেমন মেন্টর গ্রুপের সঙ্গে প্রেসিডেন্সির কাউন্সিলের মতপার্থক্য ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ এবং পিএইচ ডি চালু করা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মেন্টর গ্রুপের সদস্যেরা। সুরঞ্জনবাবুও আজ এই বিষয়গুলি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। বিজ্ঞানের বিষয়গুলি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তাঁর নেই এ কথা স্বীকার করে নিয়েই সুরঞ্জনবাবু লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্সিতে সমাজবিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে ন্যূনতম পরিকাঠামো এবং শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এ কথা মেন্টর গ্রুপও মেনেছে।’ অর্থাৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরও মত হল, উপযুক্ত বন্দোবস্ত না করে স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন শুরু করে দেওয়া কার্যত ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়া।
এ দিন মেন্টর গ্রুপের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে আরও একটি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন সুরঞ্জনবাবু। সেটি হল, প্রেসিডেন্সির স্নাতকোত্তরে ওই প্রতিষ্ঠানের স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখা। সুরঞ্জনবাবুর মতে, প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন চাইলে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে এই ধরনের শর্ত রাখা উচিত নয়। রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে এখন বহিরাগত ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত আছে। তিনি নিজে এই নিয়ম বদলানোর পক্ষপাতী। কিন্তু প্রেসিডেন্সির মতো নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরনো নিয়ম বজায় রাখার কোনও যুক্তি নেই। পিএইচ ডি চালু করা নিয়েও কিছু প্রশ্ন তুলেছেন সুরঞ্জনবাবু। প্রেসিডেন্সিতে বিভিন্ন বিভাগে পিএইচ ডি কমিটি আছে কি না, পিএইচ ডি-র নিয়ম তৈরি করা হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে অমিতাদেবী বলেন, প্রেসিডেন্সিতে বহু দিন ধরেই গবেষণার কাজ চলছে। সেখানে গবেষণা করতে অনেকে আগ্রহও প্রকাশ করছেন। তাই কোন দফতরে কত ছাত্রছাত্রী পিএইচ ডি করতে পারবেন, সম্প্রতি বিভাগগুলির কাছ থেকে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভর্তি হল এ বারই প্রথম। বামফ্রন্ট সরকার প্রেসিডেন্সি পরিচালনার জন্য একটি কাউন্সিল গড়েছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উদ্যোগী হয়ে প্রেসিডেন্সির জন্য মেন্টর গ্রুপ গড়েন। যার মুখ্য উপদেষ্টা অমর্ত্য সেন এবং চেয়ারম্যান সুগত বসু। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়ে দেন, মেন্টর গ্রুপ প্রেসিডেন্সির উন্নয়নে স্বাধীন ভাবে কাজ করবে। কিন্তু ঘটনা হল, প্রেসিডেন্সি কাউন্সিলের সঙ্গে মেন্টর গ্রুপের সম্পর্ক ঠিক কী হবে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সেই ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট দিশা দেওয়া হয়নি। সেই কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মমাফিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে রোজকার সিদ্ধান্ত কী ভাবে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে। যেমন স্নাতকোত্তর খোলা প্রসঙ্গে অমিতাদেবী জানিয়েছিলেন, মেন্টর গ্রুপ তার সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল। স্নাতক পরীক্ষা ফল প্রকাশ হওয়ার পরে এ নিয়ে অপেক্ষা করার উপায়ও ছিল না।
অমিতাদেবী এ কথাও স্পষ্টই বলেন যে, প্রেসিডেন্সির কাউন্সিলের সঙ্গে মেন্টর গ্রুপের বৈঠক খুবই ভাল হয়েছে। প্রেসিডেন্সির উন্নয়নে উভয় গোষ্ঠীই পরস্পরকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। মেন্টর গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে যে সহায়তা চেয়েছেন, সর্বতো ভাবে তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু অমিতাদেবীকে পাঠানো চিঠিতেই সুরঞ্জনবাবু লিখেছেন, ‘দেশের যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন দেখভাল করে স্নাতকোত্তর বোর্ড। এই বোর্ডগুলিতে বাইরের বিশেষজ্ঞদেরও রাখা হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্সিতে এ রকম কোনও বোর্ড হয়েছে বলে ২২ জুলাইয়ের কাউন্সিল বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়নি।’ সুরঞ্জনবাবুর চিঠির কি জবাব দেবেন অমিতাদেবী? তিনি বলেন, “সুরঞ্জনবাবুর চিঠি এখনও পাইনি। পাওয়ার পরে প্রয়োজন বুঝলে জবাব দেব। তবে এখনও পর্যন্ত প্রথমটি ছাড়া কাউন্সিলের অন্য কোনও বৈঠকে সুরঞ্জনবাবু উপস্থিত থাকেননি। পরের বৈঠকগুলিতে যা হয়েছে, সে ব্যাপারে ওঁকে সময় মতো জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” কাউন্সিল এবং মেন্টর গ্রুপের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে কাউন্সিলের অন্য কয়েক জন বর্ষীয়ান সদস্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অমিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কাউন্সিল সদস্যদের পক্ষ থেকে আচার্য তথা রাজ্যপালকে চিঠি দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান কাউন্সিল সদস্যেরা। কিন্তু রাজভবন থেকে এখনও সাড়া মেলেনি।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্সিতে মেন্টর গ্রুপ এবং কাউন্সিলের মধ্যে মতপার্থক্য মেটাতে উদ্যোগী হবেন তিনি। কিন্তু এ দিন কাউন্সিল সদস্য সুরঞ্জন দাসের চিঠিতে অসন্তোষের আরও এক দফা বহিঃপ্রকাশ সম্পর্কে নতুন করে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। ব্রাত্যবাবু বলেন, “এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”
First Page Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.