|
|
|
|
রবিঠাকুর-স্বাধীনতা-জন্মাষ্টমীর সৌজন্যে ঠাঁই নেই কোথাও |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
শান্তিনিকেতন?
ভুল বুঝবেন না। রাঙামাটির দেশে এলে এটাই আপনার প্রিয় আস্তানা, জানি। কিন্তু এ মাসে অনুগ্রহ করে অনুরোধ করবেন না,দাদা।
মন্দারমণি?
সরি, স্যার। রুম তো দূরের কথা, অনেকে বিচেও টেন্ট খাটিয়ে থাকতে চাইছেন। অগস্টে কোনও ‘চান্স’ নেই স্যার।
তা হলে, বিষ্ণুপুর?
ঘর-টর নেই যে গো। মন্দির শহরে তিন দিনের ছুটিতে আসানসোল, কলকাতাটা ভেঙে পড়েছে যে!
দিঘা, বকখালি, মাইথন? উত্তর, না, না এবং না! সপ্তাহান্তের ছুটিতে শহর-ক্লান্ত মানুষের অপেক্ষায় বসে থাকা রাজ্যের বড়-মেজ পর্যটন ঠাঁইগুলোয় দেড়-দু’দিনের জন্য আস্তানার আব্দার করলে হালে এমনই উত্তর মিলছে। নম্র কিংবা চড়া সুরে স্থানীয় লব্জে হোটেল-লজের রিসেপশন থেকে ফিরে আসছে একটাই উত্তর, ‘না, ঘর নেই।’
কেন? শনি-রবির চেনা ছুটির সঙ্গে আগামী তিন সপ্তাহে সোমবারটাও যোগ হয়ে যাওয়ায় প্রলম্বিত উইক-এন্ডে দিঘা, শান্তিকেতন তো বটেই, ‘ঠাঁই-হীন’ হয়ে পড়েছে গড়পঞ্চকোট, শঙ্করপুর এমনকী ডায়মন্ড হারবারের মতো কম ভিড়ের ছোট্ট পর্যটন কেন্দ্রগুলিও। |
|
তিন দিনের স্বল্প মেয়াদি ছুটিতে উত্তরবঙ্গ কিংবা আপাত শান্ত দার্জিলিং, কালিম্পঙের পাহাড় পাড়ি দেওয়া চলে না। পড়ে থাকল অস্থির জঙ্গলমহলের টাঁড় বনের ঝাড়গ্রাম, ঝিলিমিলি, বেলপাহাড়ি কিংবা মুকুটমণিপুর।
কিন্তু ছোটনাগপুর মালভূমির অপার সৌন্দর্য নিয়ে পড়ে থাকা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া আর পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই জায়গাগুলিতে যাওয়ার ভরসা কোথায়?
আগামী তিন-তিনটে সোমবার, বাইশে শ্রাবণ (রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষে রাজ্য সরকার এ বার কবির প্রয়াণ দিবসেও ছুটি ঘোষণা করেছে), স্বাধীনতা দিবস এবং জন্মাষ্টমী (কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত ছুটি), সরকারি ছুটির তালিকায় ঢুকে পড়ায় সপ্তাহান্তে তিন দিনের পড়ে পাওয়া ছুটিতে কলকাতা তো বটেই, রাজ্যের মাঝারি মাপের শহর আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান কিংবা খড়্গপুর, হলদিয়ার মতো জনপদ থেকেও ছোট্ট-ছুটির সফরে ঝেঁটিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন মানুষ। আর বকখালি থেকে বক্রেশ্বর কিংবা বহরমপুর থেকে সজনেখালি, হোটেল-ঘরের খোঁজ করলে বেজার কন্ঠে শুনতে হচ্ছে, ‘নেই’।
এক মাসের ছুটিতে, দীর্ঘ এক দশক পরে কলকাতায় এসে আশপাশের কোথাও বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন মার্কিন মুলুক প্রবাসী এক পরিবার। পেশায় শিক্ষক ভদ্রলোক আক্ষেপ করছিলেন, “পুত্র প্রথম দেশে এল। ভেবেছিলাম গ্রাম বাংলা দেখাব। তা সুন্দরবন থেকে লালবাগ, দক্ষিণবঙ্গের কোনও মুলুকেই ঠাঁই মিলল না।” ভরা বর্ষায় ব্যান্ডেল চার্চ আর হুগলি ইমামবাড়া দেখেই তাই সাধ মেটাতে হচ্ছে তাঁদের।
দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলছেন, “টানা তিন সপ্তাহ ধরে শনি-রবির সঙ্গে সোমবারটাও জুড়ে গিয়েছে। এমনটা সাম্প্রতিক কালে হয়নি। ফলে এই ক’দিন হোটলগুলিতে ভিড় হবে আন্দাজ করা গিয়েছিল। কিন্তু তা যে এমন উপচে পড়া চেহারা নেবে ভাবতে পারিনি।”
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের কোনও লজেও অগস্ট জুড়ে ঘর খালি নেই বলে জানান পর্ষদের প্রশাসক সৌমেন পাল। আর মন্দারমণি সম্পর্কে স্থানীয় সি-বিচ হোটেলিয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবদুলাল দাস মহাপাত্র বলেন, “মানুষ তো জায়গা না পেয়ে বেলাভূমিতেই থাকতে চাইছেন।”
বাঁকুড়ার মন্দির শহর বিষ্ণুপুরে এখন অন্তত খান চল্লিশেক হোটেল। স্থানীয় হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অসিত চন্দ্র বলছেন, “প্রায় সব বেসরকারি লজ বুক্ড হয়ে গিয়েছে। দু’টি সরকারি লজেরও একই ছবি।” পর্যটকদের দখলে অনেক আগেই চলে গিয়েছে শান্তিকেতন।
বোলপুরের মেজ-সেজ হোটেলগুলিতেও একই অবস্থা। বোলপুর-শান্তিনিকেতন হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিকাশ রায়চৌধুরী জানান, “এখানে তো সারা বছরই পর্যটকের ভিড় থাকে। তার উপরে পর পর তিন সপ্তাহে টানা ছুটি দেখে দেড় মাস আগে থেকেই এখানে বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছে।”
তা হলে?
সান্ত্বনা দিচ্ছে হোটেল রিসেপশন‘সেপ্টেম্বরের কোনও উইকএন্ড বুক করে রাখুন না স্যার!’ |
|
|
|
|
|