গাড়িতে বসতে পারে বাড়তি কর
ডিজেলে দু’ধরনের দাম চালু করা কঠিন, মনে করছে অর্থ মন্ত্রকই
ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের জন্য ডিজেলে ভর্তুকি তুলে দেওয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করলেও তা কার্যকর করা যথেষ্ট কঠিন বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
গত কাল অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় সংসদে জানিয়েছিলেন যে, বাস-ট্রাকের মতো গণপরিবহণ বাদে ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের জন্য ডিজেলে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বাস-ট্রাকের মালিক বা কোনও কৃষক পাম্প চালানোর ডিজেল কিনতে গেলে যে দাম দেবেন, ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের তার থেকে অনেক বেশি দাম দিয়ে ডিজেল কিনতে হবে। অর্থাৎ, বাজারে দু’রকম দামে ডিজেল পাওয়া যাবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কালোবাজারির সম্ভাবনা যে যথেষ্ট, তা-ও মানছে অর্থ মন্ত্রক। কী ভাবে? কেউ চাষের পাম্প চালানোর জন্য ডিজেল কিনে গাড়ির মালিককে বিক্রি করে দিতে পারে। বেসরকারি পেট্রোল পাম্প মালিকরা নিজেরাই কালোবাজারি করতে পারেন। আবার তেমনই ট্রাক-মালিকরাও ট্যাঙ্ক ভর্তি করে ডিজেল কিনে কালোবাজারে বিক্রি করতে পারেন।
অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, দু’ধরনের দামের ব্যবস্থা রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রেও চালু রয়েছে। সেখানে গৃহস্থদের জন্য রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়া হয়। আর হোটেল-রেস্তোরাঁ-সহ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের জন্য দাম বাজারদরের সমান রাখা হয়েছে। তার জন্য দু’ধরনের সিলিন্ডারও চালু রয়েছে। কিন্তু তার পরেও সাধারণ পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে যাচ্ছে হোটেল-রেস্তোরাঁয়। ব্যবহার হচ্ছে গাড়িতেও। একই ভাবে গরিবদের কথা ভেবে কেরোসিনে লিটার প্রতি ২৩ টাকা ৭৪ পয়সা ভর্তুকি দেওয়া হলেও সেই কেরোসিনই ডিজেলের ভেজাল হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, ডিজেলে দু’ধরনের দাম চালু করার বিষয়টিও নতুন নয়। ২০০৮ সালেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এ বিষয়ে একটি পদ্ধতি তৈরির জন্য তৎকালীন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী মুরলী দেওরাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সব দিক খতিয়ে দেখে গত বছর নভেম্বরে দেওরা সিদ্ধান্ত নেন, এর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বর্তমান পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি বলেন, “এখন আবার অর্থ মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে ভাবনা শুরু করেছে।”
অর্থ মন্ত্রক মনে করছে, একটি উপায় হতে পারে ডিজেল গাড়ির উপরেই কর বসানো। ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার ফলে সরকারের যে আর্থিক ক্ষতি হয়, ওই কর বসিয়ে তা পূরণ করা হবে। একটি গাড়ি বছরে গড়ে কত কিলোমিটার চলে, সেই অনুযায়ী কত ডিজেল খরচ হয়, তার দাম হিসেব করেই করের পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব। ঠিক যেমন রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রেও সরকার ভাবছে, গৃহস্থ পরিবার পিছু ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া সিলিন্ডারের সংখ্যা বছরে চারটেতে বেঁধে দেবে। এর উপরে কিনতে গেলেই পুরো দাম দিতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আবার সুপারিশ করেছে, বাৎসরিক ৬ লক্ষ টাকার উপরে যাঁদের আয়, তাঁদের জন্য রান্নার গ্যাসের উপর ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে দেওয়া হোক।
ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে ডিজেলে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পিছনে যুক্তি হল, অধিকাংশ বিলাসবহুল গাড়ি ও এসইউভি ডিজেলে চলে। সরকারি হিসেবে প্রতি ১০০ ব্যারেল ডিজেলের ১৫ শতাংশই এই সব গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডিজেলের তুলনায় পেট্রোলের দাম যে হেতু প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি, তাই গত এক বছরে ডিজেল গাড়ির বিক্রি ৫০ শতাংশ বেড়েছে। দেশে যত গাড়ি বিক্রি হয়, ২০০৪-’০৫-এ তার ২০ শতাংশ ছিল ডিজেল গাড়ি। এখন তা ৩০ শতাংশের বেশি। ২০১৫ সালে ওই হিসেব ৫০ শতাংশে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিকে প্রতি লিটার ডিজেলে ৬ টাকা ৮২ পয়সা ভর্তুকি দেয় সরকার। বছরে এই ভর্তুকির মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।
শরদ যাদবের মতো ‘সমাজবাদী’ নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, ব্যক্তিগত গাড়ির মতো মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকেও কেন ভর্তুকি মূল্যে ডিজেল বিক্রি করা হবে? পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের হিসেবে, দেশ জুড়ে ৪ লক্ষ মোবাইল টাওয়ার ও বেস স্টেশনে যে ডিজেল পুড়েছে, গত বছর তার পরিমাণ ছিল ৩০০ কোটি লিটার। যার দাম ১২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এই সংস্থাগুলিকেও ভর্তুকি-মূল্যে ডিজেল বিক্রি করার কোনও যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রক।
Previous Story Business Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.