|
|
|
|
ছায়া পড়ল ভারতেও |
বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজারে ধস |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আশঙ্কা আর আশ্বাস।
শুক্রবার কার্যত এই দু’য়েরই মল্লযুদ্ধের সাক্ষী থাকল ভারতের শেয়ার বাজার। ফের বিশ্ব জোড়া মন্দার আতঙ্কে এ দিন এক সময় ৭০০ পয়েন্টেরও বেশি খুইয়েছিল বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স। নেমে গিয়েছিল ১৭ হাজারের নীচে। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-র আশ্বাসে তা কিছুটা হলেও ফিরে পায় পায়ের তলার মাটি। আতঙ্কের ৭০২ পয়েন্ট ধস ‘কমে দাঁড়ায়’ ৩৮৭ পয়েন্টের পতনে। দিনের শেষে সূচক থিতু হয় ১৭,৩০৫.৮৭ অঙ্কে। ২০১০ সালের জুনের পর গত ১৪ মাসে যা সব থেকে কম।
আমেরিকা হাঁচলে সারা পৃথিবীর ঠাণ্ডা লাগে। যেন এই প্রবাদকে ‘সত্যি করে’ই এ দিন বিশ্ব জুড়ে পড়েছে শেয়ার বাজার। কাল মার্কিন বাজারে ধসের জেরে এ দিন নিম্নমুখী থেকেছে ইউরোপ ও এশিয়ার অধিকাংশ দেশের বাজার। যার প্রভাব পড়েছে ভারতেও। আর তাই খোলার পরই বড় মাপের ধস নেমেছে সেখানে।
কিন্তু কেন হঠাৎ তৈরি হল এমন দুনিয়াজোড়া আতঙ্ক? বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল কারণ ৩টি
• মার্কিন অর্থনীতিতে ফের মন্দার সিঁদুরে মেঘ দেখার আতঙ্ক। বাজার থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার ঊর্ধ্বসীমা বাড়াতে সরকারি ব্যয় সঙ্কোচের শর্ত মেনে নিতে হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। এই ঘটনাকে আদৌ ভাল ভাবে নেননি সিংহভাগ মার্কিন নাগরিক। কারণ তাঁরা মনে করছেন, পুরোপুরি মন্দা কাটিয়ে ওঠার আগে সরকারি ব্যয়ে এই বাধ্যতামূলক কাটছাঁটের জেরে চাইলেও আর ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করা কঠিন হবে ওবামার পক্ষে। পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রগুলিতে সরকারি ব্যয় কমাতেও বাধ্য হবেন তিনি। ফলে, কমবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। যার জেরে ফের এক বার মন্দার দিকে ঢলে পড়তে পারে অর্থনীতি। মূলত এই আশঙ্কা থেকেই গতকাল ধস নেমেছিল মার্কিন শেয়ার বাজারে। যদিও আজই আবার ৮৫ হাজারের পূর্বাভাস ছাপিয়ে গিয়ে জুলাইয়ে ১.১৭ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের কথা ঘোষণা করেছে ওবামা প্রশাসন। |
|
• ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট। দেনার দায়ে ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট লাগামছাড়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারণ, ঋণের বোঝায় ইতিমধ্যেই টালমাটাল গ্রিস, আয়ার্ল্যান্ড এবং পর্তুগাল। এখন সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছে ইতালি আর স্পেন-ও। বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের আশা ছিল, কোনও ঝুঁকি না নিয়ে প্রথম তিন দেশের মতো স্পেন এবং ইতালিকেও সরকারি বন্ড কিনে অর্থ জোগাবে ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। কিন্তু সেই সম্ভাবনা আপাতত খারিজ করে দিয়েছে তারা। বিশ্ব জুড়েই যার ‘হতাশা’ প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারে।
• ভারত ও চিনের বে-লাগাম মূল্যবৃদ্ধি। প্রথম দু’টির মতো অত জোরালো ভাবে না-হলেও, মূল্যবৃদ্ধির কাঁটা বিঁধছে বিশ্বের (বিশেষত এশীয় দেশগুলির) শেয়ার বাজারকে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির পুরোদস্তুর ঘুরে দাঁড়ানো অনেকখানিই নির্ভর করছে এই দুই দেশের উপর। অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে দুই দেশেরই শীর্ষ ব্যাঙ্ক ক্রমাগত সুদের হার বাড়ালে, নগদের জোগান কমবে বাজারে। ফলে, কমবে চাহিদা। তা ছাড়া, সুদ বৃদ্ধির জেরে বাড়বে প্রকল্পের খরচও। শ্লথ হবে বৃদ্ধির হার।
মূলত এই তিন আশঙ্কাতেই গত আটটি লেনদেনের দিনে লাগাতার পড়েছে বিশ্ব বাজার। বৃহস্পতিবার যে আতঙ্ক ক্রমশ জমাট বেঁধে ধস নামিয়েছে মার্কিন মুলুকের শেয়ার বাজারে। বিশেষজ্ঞদের মতে অবশ্য এমনটা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ, শেয়ার বাজার এক অর্থে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে লগ্নিকারীদের আস্থার প্রতিফলন। যে আস্থায় ঘাটতি পড়লে শেয়ার বেচে ঝুঁকিপূর্ণ বাজার থেকে অর্থ সরিয়ে নেন তাঁরা। লগ্নি করেন সোনা কেনা বা ব্যাঙ্ক আমানতে। ভারতেও যে এমনটা হচ্ছে, তার প্রমাণ রেকর্ড সোনার দাম। এ দিন কলকাতায় প্রতি ১০ গ্রামে যা ছিল ২৪,৫৩৫ টাকা।
ভারতের বাজারে ধস রুখতে অবশ্য এ দিন লগ্নিকারীদের আশ্বস্ত করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই পতনে দেশীয় অর্থনীতির কোনও ভুমিকা নেই। বরং বাজার পড়ছে বিশ্ব বাজারের জেরে। মার্কিন মুলুক ও ইউরোপের মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায়।” যে কারণে, এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে দাবি করেছেন তিনি। ব্যাঙ্কগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন অনুৎপাদক সম্পদ কমানোর ব্যবস্থা নিলেও, ঋণ দেওয়ার পরিমাণ না কমাতে। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন সেবি-র চেয়ারম্যান ইউ কে সিন্হা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর সুবীর গোকর্ণ জানিয়েছেন, “মন্দার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।” ফের বিশ্ব জুড়ে মন্দা শুরুর ভয় এবং সারা পৃথিবীতেই জিনিসের দাম সামান্য হলেও কমতে শুরু করা সেপ্টেম্বরে ঋণনীতি পর্যালোচনার সময় বিবেচিত হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ভারতীয় অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট মজবুত বলে দাবি করেছেন অর্থ বিষয়ক সচিব আর গোপালন-ও। মূলত এই আশ্বাস আর পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার প্রবণতার জেরেই এ দিন পরের দিকে সূচক কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।
তবে চলতি সপ্তাহেই সারা বিশ্বে শেয়ার বাজারে শেয়ারের সম্মিলিত মূল্যায়ন কমেছে ২.৫ লক্ষ কোটি ডলারেরও বেশি। এ দিনই ভারতে এই অঙ্ক ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা। বিশ্ব অর্থনীতির হাল ফেরাতে সব দেশের মধ্যে পারষ্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান
জানিয়েছে চিন এবং জাপান। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আমেরিকার সব থেকে বেশি ঋণ রয়েছে এই দুই দেশের কাছেই। মন্দার ‘প্রত্যাবর্তন’ রুখতে বৈঠকে বসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী জো লুই রড্রিগেজ জাপাতেরো। |
|
|
|
|
|