বোমায় বিধ্বস্ত বাড়ি দেখল ফরেন্সিক দল
ড়িয়ে ছিটিয়ে দোমড়ানো হাঁড়ি, কড়া, থালা।
রক্তমাখা খড়, মাটি, বোমা তৈরির মশলা, সুতলি, জর্দার কৌটো।
খড়ের চাল উড়ে গিয়ে লটকে আছে গাছের ডালে।
শুক্রবার দুপুরে মঙ্গলকোটের ভেলের পাড়ে গিয়ে এই দৃশ্যই দেখলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। নমুনাও নিলেন ওই সব হাঁড়ি-খড়-কৌটোর। সিপিএম বোমা মেরেছিল, না কি বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে দুই তৃণমূল সমর্থকের মৃত্যু ঘটে, তা স্পষ্ট করে জানতেই পুলিশ তাঁদের ডেকে এনেছে। তবে এ দিন তদন্ত নিয়ে তাঁরা কিছু জানাননি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ অভিযুক্ত সিপিএম নেতা ডাবলু আনসারিকে ধরতে যেতেই অশান্তি শুরু হয় মঙ্গলকোটে। সিপিএম এবং তৃণমূল দু’দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ তুলেছে। ওই সময়েই ভেলের পাড়ে বোমা ফেটে জাকির শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মী মারা যান। আহত হন তিন জন। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লিয়াকত আনসারি নামে আর এক তৃণমূল সমর্থকের মৃত্যু হয়।
নিজস্ব চিত্র
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছিল, বোমা বাঁধতে গিয়েই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের অভিযোগ, ডাবলু আনসারির নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা বোমা মেরে দু’জনকে খুন করেছে। বৃহস্পতিবার রাতেই জাকির শেখের মা আরশা বিবি মঙ্গলকোট থানায় ডাবলু-সহ ২৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। রাতে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর এবং জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরেই জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, ফরেন্সিক দলকে দিয়ে বিস্ফোরণের তদন্ত করানো হবে। রাতে পুলিশ সুপার সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (সিএফএসএল) ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলেন।
সেই মতো এ দিন দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ সিএফএসএল-এর ডেপুটি ডিরেক্টর কেপিএস কার্থা-র নেতৃত্বে চার সদস্যের ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে যায়। সঙ্গে ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। ভেলের পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, একটি মাটির বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে। উড়ে গিয়ে গাছে আটকে রয়েছে খড়ের চাল। ঘরের ভিতরে মাটি বসে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে দেওয়াল। বাড়ির কাছে থাকা গাছগুলিতেও বিস্ফোরণের চিহ্ন স্পষ্ট। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বাড়ির আশপাশে তল্লাশি চালায় চালিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। পরে মঙ্গলকোট থানায় গিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গেও তাঁরা দেখা করেন।
গত দিন পুলিশ বোমা বাঁধতে গিয়েই এই বিস্ফোরণ বলে ‘প্রাথমিক ভাবে অনুমান’ করলেও এ দিন কিছুটা ভিন্ন সুরেই কথা বলেছে। বিকেলে মঙ্গলকোটে বসে পুলিশ সুপার বলেন, “বোমা বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। সেই কারণেই ফরেন্সিক দলটিকে ডাকা হয়েছে। ওঁরা নমুনা নিয়েছেন। আমাদের কিছু প্রশ্নও ওঁদের জানিয়েছি। নমুনা পরীক্ষা করে ওঁরা মতামত জানাবেন।”
সিপিএমের অভিযোগ, গোড়ায় বোমা বাঁধার কথা বললেও তৃণমূলের চাপে পুলিশ-প্রশাসন পিছু হটেছে। প্রাক্তন শাসকদলের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের বক্তব্য, “গত কালই পুলিশ জানিয়েছিল, সম্ভবত বোমা বাঁধতে গিয়ে দু’জন মারা গিয়েছে। কিন্তু এখন ক্ষমতাসীন তৃণমূল পুলিশ-প্রশাসনকে চাপ দিয়ে দিনকে রাত করার চেষ্টা করছে। আমরা নিশ্চিত, ফরেন্সিক তদন্তে পুলিশের প্রাথমিক অনুমানই সত্য বলে প্রমাণ হবে।”
তবে সিপিএমের পক্ষে পুরোপুরি হাত ধুয়ে ফেলাও সম্ভব নয়। ডাবলুকে ধরতে না পারলেও বৃহস্পতিবার তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ দু’জনকে অস্ত্র-সহ পাকড়াও করেছিল পুলিশ। কাজল শেখ ও মুজিবর শেখ নামে ওই দু’জনকে এ দিন কাটোয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেন। মঙ্গলকোটের তৃণমূল নেতা অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “ফরেন্সিক তদন্তে সিপিএমের হামলার কথাই প্রমাণ হবে।”
Previous Story Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.