|
|
|
|
ভিড়িঙ্গি মোড় |
টাকা নেই, বিপন্ন শিশুশিক্ষা |
রাজশেখর মুখোপাধ্যায় • দুর্গাপুর |
জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষে বাঁশ, দরমা ও টালি দিয়ে তৈরি এক চিলতে ঘর। ভিতরে কয়েকটি ভাঙাচোরা চেয়ার-টেবিল। স্যাঁতসেতে পরিবেশে আনাগোনা রয়েছে সাপ, বিড়াল, কুকুরেরও। পাশে নর্দমা, পিছনে পুকুর, লাগোয়া বাক্স কারখানা ও গাড়ির প্রকট আওয়াজ। এ সবের মধ্যেই শিশু শিক্ষাকেন্দ্র চলছে দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি মোড়ে।
২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দুর্গাপুর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি শুরু হয় ২০০২-এর ২৭ জুন। তার আগে এখানে সিটুর অফিস ছিল। ছোট জায়গায় একচালা ঘর। শিক্ষিকাদের জন্য রয়েছে একটি ভাঙা টেবিল ও দু’টি চেয়ার। ছাত্রছাত্রীরা বসে মেঝেতে বস্তা পেতে। পিছনের ঘরটিতে রয়েছে মিড-ডে মিল রান্নার সামগ্রী। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের পাশাপাশি রয়েছে যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনার ভয়। স্কুলের কাছে ব্যস্ততম ভিড়িঙ্গি মোড় বা জাতীয় সড়কে কোনও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারালে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
বর্তমানে এই শিক্ষাকেন্দ্রে পড়ুয়ার সংখ্যা ৫৩। শুরু থেকে দায়িত্বে রয়েছেন দু’জন শিক্ষিকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। শিক্ষিকা পাপিয়া সোম বলেন, “পরিকল্পনা অনুযায়ী আড়াই বছর আগে জাতীয় সড়কের সামান্য দূরত্বে স্কুলের পিছনে নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হলেও তা শেষ হয়নি। কারণ বাজেট ধরা হয়ছিল সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। বিধায়ক কোটায় পঞ্চাশ হাজার ও পুরসভা থেকে ষাট হাজার টাকা পাওয়ার পরে আর কোনও টাকা পাওয়া যায়নি। তাই কাজ থেমে রয়েছে। শিক্ষিকারা জানান, স্কুলের যা পরিবেশ তাতে পড়াশোনা করানো মুশকিল। বারবার পুরসভার শিক্ষা দফতরকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। শিক্ষিকা স্বপ্না দাশগুপ্ত বলেন, বাচ্চাদের খাবারে রাস্তার ধুলো এসে পড়ে। ওদের জন্য নিজেদেরই খারাপ লাগে।” তাঁর কথায়, “বৃষ্টিতে টালি ফুটো হয়ে জল পড়ে। তখন কোনও রকমে এক কোণে বাচ্চাদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। বেশি বৃষ্টিতে স্কুল বন্ধ রাখতে হয়।” |
|
জীর্ণ ক্লাসঘরে চলছে পড়াশোনা। ছবিটি তুলেছেন বিকাশ মশান। |
স্কুলে একমাত্র ফ্যানটিও এখন ঘোরে না। স্বপ্নাদেবী বলেন, “বিল বাকি থাকায় বিদ্যুৎ দফতর লাইন কেটে দিয়েছে। পুরসভা বিলও দেয় না, কোনও ব্যবস্থাও করে না।” পড়ুয়া রিমা বিদ, নীলাঞ্জনা মুর্মু, গৌতম মাহাতো, গায়ত্রী সরেনরা বলে, “এখানে পড়োশানা করতে খুব কষ্ট হয়। গরমে হাঁসফাস করি। বর্ষায় ভিজতে হয়।” অভিভাবিকা পিঙ্কি বিদ, পূর্ণিমা মাহাতোদের কথায়, “ভয় হয়, যদি কোনও ভাবে ওরা রাস্তায় চলে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। অন্য কোথাও পড়তে পাঠানোর সামর্থ্য নেই। তাই এখানেই পাঠাতে হয়।”
মিড-ডে মিল নিয়েও রয়েছে বহু অভিযোগ। শিক্ষিকাদের অভিযোগ, “পুরসভার যে টাকা পাই তাতে চালানো সম্ভব নয়। প্রতি দিন যদি ৫৩ জন পড়ুয়াই আসে তাহলে মাসে অন্তত ১০ দিন ছেলেমেয়েরা খেতে পাবে না। তা ছাড়া, আমরাও দু’মাস বেতন পাইনি।” তাঁরা জানান, পুরসভার শিক্ষা দফতরকে সমস্যার কথা জানিয়েছি। তাঁরা এসে দেখেও গেছেন। কোনও ফল হয়নি। রান্নার দায়িত্বে থাকা সুশীলা দত্ত, কাজল মণ্ডলরা বলেন, “চার দিকে বেড়াল, কুকুর ঘুরে বেড়ায়। পিছনে পুকুর, নর্দমার জন্য সাপ, মশা-মাছি, পোকা-মাকড়ের উপদ্রবে টেকা দায়। জলের ব্যবস্থা নেই, দু’দিন রান্না করতে পারিনি।” তাঁরাও চার মাস বেতন পাননি বলে জানান।স্কুলের সম্পাদক সাধন দাসের ক্ষোভ, স্কুলের হাল ফেরাতে দীর্ঘ দিন চেষ্টা করেও কোনও ফল হয়নি। কাউন্সিলর অনুপ দাস বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় নতুন স্কুলের জন্য অর্থের কথা বলেছি। আশা করছি শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে।” এ বিষয়ে পুরসভার শিক্ষা আধিকারিক সঙ্ঘমিত্রা দাশগুপ্ত জানান, “কাউন্সিলরকে একটি এস্টিমেট ফাইল দিতে বলেছিলাম। তা না পেয়ে নিজেরাই একটি ফাইল তৈরি করছি যাতে বাকি কাজটা শেষ করা যায়।” তিনি আরও জানান, দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। নতুন স্কুল তৈরির আগে এখনকার ভাঙা স্কুলটি যাতে ঠিক করে দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করা হবে। |
|
|
|
|
|