অনেক দিন ধরেই চলে আসছে, প্রায়ই হয় বলছেন খোদ প্রধান শিক্ষক। স্কুল চত্বরে বিয়েবাড়ি হচ্ছে। অথচ তাঁর তো নয়ই, পরিচালন সমিতির কর্তাব্যক্তিদেরও কোনও হেলদোল নেই।
শুক্রবার সকাল থেকেই ব্যস্তসমস্ত লোকের আনাগোনা হিরাপুরের ডিহিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরের মাঠে। বিয়েবাড়ির ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে। পিছন দিকে উনুন ধরিয়ে চলেছে রান্না। দূরদূরান্ত থেকে আসা আত্মীয়-পরিজনদের গাড়িও রাখা হয়েছে।
মাত্র কয়েক হাত দূরেই চলছে ক্লাস। ছাত্রছাত্রীরা কখনও নাক উঁচিয়ে শুঁকছে ভেসে আসা রান্নার সুঘ্রাণ, কখনও উঁকি মেরে দেখছে লোকজনের কাণ্ডকারখানা, কান খাড়া করে শুনছে গাড়ির ঢোকা-বেরোনোর আওয়াজ। পড়ায় মন বসবে কী করে? বসছে না। কিন্তু তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। প্রধান শিক্ষকের তো নয়ই, অনেক অভিভাবকেরও নয়। |
প্রধান শিক্ষক মানস মণ্ডল বরং দাবি করেন, প্রায়ই তাঁদের স্কুলের মাঠে ম্যারাপ পড়ে এবং তার জন্য পঠনপাঠনে কোনও অসুবিধাই হয় না। তাঁর কথায়, “গ্রামে এ রকম ভাল জায়গা আর নেই। তাই স্কুল চত্বরেই সব কিছু হয়। গ্রামের বাসিন্দারাই ভাড়া নেন।” তিনি জানান, স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক বীরেন্দ্রনাথ মাজিই এ দিনের বিয়েবাড়ির অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু ডিহিকা গ্রামের বাড়িতে গিয়েও তাঁর দেখা মেলেনি। মোবাইল ফোনেও ধরা যায়নি।
কিছু গ্রামবাসী তথা অভিভাবকও এর মধ্যে খারাপ কিছু দেখছেন না। কার্যত প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে এক অভিভাবক কানাই সেনগুপ্ত যেমন বলেন, “গ্রামে কোনও কমিউনিটি সেন্টার নেই। তাই উৎসব-অনুষ্ঠানে স্কুলের মাঠ ব্যবহার করা হয়।”
তবে স্কুল বা গ্রামের সকলেই যে এ রকম নির্বিকার, তা নয়। কিছু অভিভাবক যেমন মনে করেন, এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু অনেক দিন ধরে দেখতে-দেখতে সকলেরই চোখ সয়ে গিয়েছে। তাই অন্যায় বলে মনে হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন শিক্ষকের মতে, ছাত্রছাত্রীদের তো বটেই, তাঁদেরও পড়াতে অসুবিধা হয়। স্কুল চত্বরে বাইরের লোকের আনাগোনাও যথেষ্ট অস্বস্তিকর। তবে গ্রামের প্রভাবশালী লোকজন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়ার ভয়ে তাঁরা প্রকাশ্যে মুখ খোলেন না।
রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে অবশ্য ডিহিকাতেও কিছু ‘পরিবর্তন’ হয়েছে। স্কুল চত্বরে বাইরের অনুষ্ঠান করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস শিক্ষা সেল। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার পবিত্র মাজিও বলেন, “স্কুলচত্বরে বিয়েবাড়ির ম্যারাপ বাঁধা অত্যন্ত গর্হিত কাজ।” তাঁদের শিক্ষা সেলের বর্ধমান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক রুদ্র বলেন, “এত কাল যা হয়েছে, হয়েছে। কিন্তু আর না। পঠনপাঠন চলাকালীন স্কুল চত্বরে ম্যারাপ বাঁধা চলবে না।”
আসানসোলের সহকারী জেলা স্কুল পরিদর্শক দেবপ্রসন্ন বন্দোপাধ্যায় বলেন, “কেন এই ঘটনা ঘটল, বুঝতে পারছি না। খুবই অন্যায় হয়েছে।” তাঁরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। অশোকবাবু জানান, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষের শাস্তির জন্য তাঁরা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দরবার করবেন। |