|
|
|
|
|
বর্ধমান মেডিক্যাল |
হুঁশ ফেরেনি আগুনেও
নিজস্ব সংবাদদাতা • বর্ধমান |
|
মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে নয়।
বধর্মান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগে আগুনের ফুলকি দেখা গিয়েছিল শিশুদের উষ্ণ রাখার ‘ওয়ার্মার’ যন্ত্রে। এমনকী, সেই সময় ওই যন্ত্রের মধ্যেই শুইয়ে রাখা হয়েছিল দু’টি শিশুকে।
মায়েদের চোখ পড়ায় দ্রুত ওয়ার্মার থেকে শিশুদের কোলে তুলে নেন তাঁরা। কপাল-জোরে কোনও মতে শিশু দু’টির জীবন রক্ষা পেলেও বর্ধমান মেডিক্যালে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল। কিন্তু, এত বড় ঘটনার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গয়ংগচ্ছ মনোভাবে কোনও বদল আসেনি।
সুপার সুবোধ ভট্টাচার্য বলেছেন, “হাসপাতালের বিদ্যুৎবাহী তার পাল্টানোর কাজ চলছে। বিদ্যুৎ দফতরকে বলা হয়েছে, জরুরি বিভাগ, শিশু বিভাগের মতো দফতরে কাজ দ্রুত সারতে।’’ কিন্তু হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, বিভিন্ন বিভাগে পুরনো তার বদলের কাজ সামলাচ্ছে হাসপাতালের পূর্ত বিভাগ-ই (ইলেকট্রিক্যাল)। কেন সেই তার বদলানোর কাজ করতে এত সময় লাগছে, তার সদুত্তর এ দিনও মেলেনি সুপারের কাছ থেকে। তাঁর বরং দাবি, “এক দিকে যখন তার বদলানো হচ্ছে, অন্য দিকের তার পুরনো হয়ে যাচ্ছে।” |
|
এই ওয়ার্মারেই লেগেছিল আগুন। শিশুদের রেখেই চলছে কাজ। সোমবার ছবিটি তুলেছেন উদিত সিংহ। |
কিন্তু প্রকৃত তথ্য হল, হাসপাতালের তার আমূল বদলে দেওয়ার যে প্রস্তাব মাস চারেক আগে বিদ্যুৎ দফতরের কাছে গিয়েছিল, সেই প্রস্তাবে এ দিনও কোনও নাড়াচাড়া পড়েনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ দফতরের এক আধিকারিকই বলেছেন, “হাসপাতালের কোন কোন ওয়ার্ডের তার যথেষ্ট পুরনো হয়ে পড়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।” অর্থাৎ, আসল কাজ এখনও রয়ে গিয়েছে ধামাচাপা পড়ে।
ওয়ার্মার যন্ত্রের ছ’টি টিউব। রবিবার তার মধ্যে দু’টি ছিল বন্ধ। বিদ্যুৎবাহী তার যেখানে ওই যন্ত্রে এসে মেশে আচমকাই বিদ্যুতের ফুলকি দেখা দেয় সেখানে। আর তাতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শিশু ওয়ার্ডে। ধোঁয়ায় ভরে যায় চার দিক। শিশুদের কোলে নিয়ে দুড়দাড় করে পাঁচ তলা থেকে নীচে নেমে আসেন মায়েরা। সার দিয়ে বেরিয়ে হাসপাতালের সামনের মাঠে আশ্রয় নেন সদ্য প্রসূতিরাও। ছড়ায় নানা গুজব। এক হাতে স্যালাইনের বোতল, অন্য হাতে সদ্যোজাতকে আঁকড়ে ধরে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েন অনেক মা-ই। সেই আতঙ্কের রেশ থেকে গিয়েছে এ দিনও।
কিন্তু মোবাইলের চার্জার থেকে আগুনের ফুলকির কথা কী করে রটেছিল?
সোমবার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ওয়ার্মার পরীক্ষা করে দেখছিলেন হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিভাগের সহ-অধিকর্তা বিপ্লব দাস। তাঁর দাবি, “ভোল্টেজ ওঠানামা করার জন্যই ওই স্ফুলিঙ্গ দেখা দিয়েছিল। মোবাইলের ঘটনা গুজব মাত্র।” শিশুদের শরীরের উত্তাপ বৃদ্ধির জন্য ওয়ার্মার যন্ত্রটি অত্যন্ত জরুরি। তাই যন্ত্রটিকে পরীক্ষা করে দেখা হয় সোমবার। বিপ্লববাবুর অবশ্য দাবি, “ওয়ার্মার যন্ত্রে শিশুদের রাখায় কোনও বিপদ আপাতত নেই।” সেখানে শিশুদের শরীর গরম করার কাজ এ দিন যথারীতি চলেছে।
সোমবার হাসপাতালের সুপার সুবোধবাবু বলেছেন, “হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল প্রায় ২৫০ শিশু। তার মধ্যে বেশ কয়েক জন মা শিশু নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। দু’ঘন্টা বাইরে থাকার পরে, পরিস্থিতি আয়ত্তে এসেছে বলায় তাঁরা ফের শিশু ওয়ার্ডে ফিরে আসেন।” হাসপাতালের শিশু বিভাগ সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, ২৫০ জন শিশুর মধ্যে ১৭০ জন শিশুকে নিয়েই মায়েরা বের হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের সকলে কি শেষে ফিরে এসেছিলেন? সুপারের দাবি, “কেউ ফেরেননি বলে আমার অন্তত জানা নেই। শিশুদের মধ্যে কেউ নিখোঁজ হলে তো থানায় জানাতে হত। তাই সবার প্রথমে আমাকে জানাতেন ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তেরা।” |
|
|
|
|
|