|
|
|
|
হঠাৎ পরিদর্শনে শিল্পায়নের হাল দেখে স্তম্ভিত শিল্পমন্ত্রী |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
সব মিলিয়ে প্রায় দু’বিঘা জমি। সেখানেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের দোতলা অফিস। টেবিল-চেয়ার সবই রয়েছে। অথচ কোনও অফিসার নেই। বহু খুঁজেপেতে একজন কর্মীর দেখা মিললেও তিনি কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারলেন না।
শিলিগুড়ির সেবক রোডের উপরে বিশাল এলাকা জুড়ে শিল্প তালুক। নাম হল, ‘ডাবগ্রাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট’। যেখানে কাগজে-কলমে ৬০টির উপরে সংস্থাকে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ার জন্য জমি দেওয়া রয়েছে। হাতে গোনা কিছু কারখানা চলছে। অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশ্ন করে জানা গেল, বাকি জমির অধিকাংশেই শিল্প হয়নি। শুধু ঘর তৈরি করে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কেউ কেউ ভাড়াও দিয়েছেন।
সংক্ষেপে এই হল শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার শিল্পায়নের হাল। সোমবার শিলিগুড়িতে পৌঁছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে সঙ্গে নিয়ে আচমকা পরিদর্শনে এমনই উপলব্ধি হল শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। যা দেখার পরে প্রথমে তিনি স্তম্ভিত হয়ে যান। পরমুহূর্তে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কেন এই হাল, অফিসারদের লিখিত ভাবে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে যাঁরা শিল্পের নামে জমি নিয়ে ফেলে রেখেছে তা ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশও দেন। যে শিল্পোদ্যোগী কারখানা গড়ার নামে ঘর তৈরি করে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন তাঁদেরও নোটিস পাঠিয়ে জমি ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। |
|
সেবক রোডে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের কাজকর্ম খতিয়ে দেখছেন
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি। |
শিল্পমন্ত্রী বলেন, “এ তো আজব ব্যাপার! শিল্পের পরিকাঠামো আছে। পরিকাঠামো তৈরির জন্য অফিসও আছে। কিন্তুই শিল্পই হয়নি! আসলে শিল্পায়নের বার্তাটা এখানেও পৌঁছয়নি। এ সব আমরা বরদাস্ত করব না। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে শিল্প গড়তে বদ্ধপরিকর। সে জন্য অফিসারদের রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। তাঁরা তা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে দেবেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনার পরে শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের হাল ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ দিন সকালে দার্জিলিং মেলে এনজেপি পৌঁছন শিল্পমন্ত্রী। দুপুরে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সইয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে বেলা ১১টা নাগাদ চমকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে ডেকে নেন। তিনি যেখানে উঠেছেন, সেই অতিথি নিবাস থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের দোতলা অফিস। সেটা জানার পরে সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে যান।
আর গিয়ে ব্যাপার দেখে চোখ কপালে উঠে যায় শিল্পমন্ত্রীর। সুনসান অফিসের দেওয়ালে ঠিকাদারদের নামের তালিকা টাঙানো। কোনও কর্মী নেই। খোঁজাখুঁজির পরে একজন আসেন। প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “স্যার, সকলে রাণীনগরে মূল অফিসে রয়েছেন।”
ওই অফিসের আওতায় থাকা দু’বিঘা জমির অনেকটা দখল হয়ে গিয়েছে। সেখানে ট্রাক টার্মিনাস তৈরি হয়েছে। যা শোনার পরে শিল্পমন্ত্রী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।সেখান থেকে ডাবগ্রামের শিল্প তালুকে যান। সেখানে অফিসের দায়িত্বে থাকা সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দীপক দাসের কাছে শিল্পমন্ত্রী জানতে চান, কত কারখানা রয়েছে, কত হয়নি, কতজন গুদাম করেছেন। সেই সব প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তরই দিতে পারলেন না দীপকবাবু। তাঁকে বলতে শোনা গেল, “স্যার, আগে থেকে জানা থাকলে সব খোঁজ নিয়ে রাখতাম।” তা শুনে ফাইল আনিয়ে নথি খে নিজেই খুঁজে বার করলেন ক’টি কারখানা রয়েছে, কতগুলো গুদাম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তার পরে বললেন, “বলে-কয়ে মন্ত্রীরা আসবেন। সাজানো রিপোর্ট দেবেন। কাজের কাজ হবে না! এ সবের দিন শেষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন। এটা মনে রাখবেন।” তার পরেই নির্দেশ দেন, “যাঁরা শিল্প গড়ার জন্য জমি নিয়ে গুদাম করেছেন, তাঁদের নোটিস পাঠিয়ে জমি ফিরিয়ে নিন।” |
|
|
|
|
|