|
|
|
|
মমতাকে দেখে ভরসা হয়, বলছে পাহাড় |
নমিতেশ ঘোষ • দার্জিলিং |
বিজয় প্রধান দার্জিলিঙের সুদিন চান। সে তো সবাই চান। যিনি কাটারি দিয়ে মাংস কাটছেন তিনি চান, যিনি চা বিক্রি করছেন তিনি চান, যিনি ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে তিনি চান, যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে স্কুলে যাচ্ছে সে চায়।
বিজয়বাবুর সঙ্গে আমজনতার ফারাক হল, সুদিনের আশায় তিনি সুবাস ঘিসিংয়ের সঙ্গে আন্দোলনে নেমেছিলেন। তখন বয়স কম ছিল। স্বপ্নও ছ্লি অনেক। ২৮ মাস লড়াইয়ের পর জন্ম হয় গোর্খা হিল কাউন্সিল বা পার্বত্য পরিষদের।
দাজির্লিং ম্যালে ভানুভক্তের মূর্তির গা ঘেঁষে চেয়ারে বসেছিলেন বিজয়বাবু। বয়স ৫২। চুলে পাক ধরেছে। বললেন, “তখন ভাবলাম আমাদের লড়াই সার্থক। আমরা থাকব আমাদের মতো। কিন্তু কয়েকদিনেই বুঝলাম কিছু হয়নি। আমরা যেমন ছিলাম, তেমনই আছি। গত তিন-চার বছর ধরে পাহাড়ে অশান্তির শেষ নেই। রাতে ঘুম হয় না। এ বার বোধহয় শান্তি এল।”
বিজয়বাবু ম্যালের ধারের দোকানে রাখা টিভিতেই সব দেখেছেন। তিনি বললেন, “খুব ভাল লাগছে। টগবগে নেতা বিমল গুরুঙ্গ নিশ্চয়ই দার্জিলঙে সুদিন আনবেন।” |
|
উৎসবে মেতেছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। সোমবার। সুমন বল্লভ |
শুধু কি বিমল গুরুঙ্গ? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। বললেন, “বিরোধী নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী, কী লড়াইটা না করেছেন! ওঁকে দেখলে বিশ্বাস তৈরি হয়। উনি পাহাড়ে যাতায়াত করছেন। প্রচুর সদিচ্ছা রয়েছে। উন্নয়ন তাঁর হাত ধরেই আসবে। আমরা মেতে উঠব উৎসবে।”
উৎসবের দিন ঘোষণা করে দিয়েছেন গুরুঙ্গ। আজ, মঙ্গলবার থেকে উৎসবের কথা ঘোষণা করেছেন। কার্শিয়াঙে তা শুরু হবে। বুধবার হবে কালিম্পঙে। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙে হবে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
চকবাজারের বাসিন্দা বসন্ত লামাও পরিবর্তনপন্থী। তিনিও একদা ঘিসিংয়ের সঙ্গে ছিলেন। বললেন, “এত বন্ধ হয় দার্জিলিঙে। একা বন্ধই সব শেষ করে দিল। ব্যবসাপত্র চৌপাট। সবাই মনমরা। আমাদের পাশে সিকিম তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দিন দিন পিছিয়ে পড়েছি। এ বার বোধহয় সুদিন আসবে। মমতাকে দেখে ভরসা হয়।”
বিজয়বাবু অসুস্থ। আগে ঠিকাদারি করতেন। এখন ছুটতে পারেন না। হাঁফ ধরে। উচ্চ রক্তচাপ। বললেন, “গুরুঙ্গের কাছে একদিন গিয়ে বলব, আমাদের একটা আয়ের উপায় করে দিন।” মমতার কাছে যাবেন না? বিজয়বাবুর জবাব, “যাব প্রণাম করতে।”
প্রবীণরা তো বটেই, খুশিতে মেতে উঠেছেন নবীনরাও। দুপুর থেকেই টিভির সামনে জটলা। যেন বিশ্বকাপের ফাইনাল। চুক্তি ঠিক কী হল, অনেকেই জানেন না। তবে এটা জানেন, ভাল একটা কিছু হল। শিস দিয়ে হিন্দি গানের সুর ভাঁজছিলেন বিশর থাপা। ওঁর দু’জায়গায় আস্তানা। শিলিগুড়ি ও দার্জিলিংয়ে। সকালে দার্জিলিং মেল এনজেপি-তে পৌঁছলে যাত্রী বোঝাই করে ছোটেন পাহাড়ে। বললেন, “দার্জিলিঙে বেশি আসা হয় না। ছেলেমেয়ে শিলিগুড়িতেই থাকে। দু’বছর ধরে সিকিমেই বেশি যাই। মনে হচ্ছে, এ বার দার্জিলিঙের বাড়িটা আবার সাফসুতরো করতে হবে। সেখানে হবে খানাপিনা।”
গান ভেসে আসছে বহু দোকানপাট থেকে। হঠাৎ যেন বন্ধ ঘরের জানলা খুলেছে। ঝটপটিয়ে ঢুকে পড়ছে বাইরের ঠান্ডা হাওয়া। সেই হাওয়ায় আবিরের গন্ধ। যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব বিলকুল হাওয়া পাহাড় থেকে। |
|
|
|
|
|