|
|
|
|
স্বাভাবিক শিলিগুড়ি ও ডুয়ার্স |
বন্ধ উপেক্ষা করেই রাস্তায় মানুষ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
তৃণমূল নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নামেননি। প্রশাসনিক কর্তাদেরও সেভাবে রাস্তায় নামতে হয়নি। বন্ধে তিতিবিরক্ত শিলিগুড়ির বাসিন্দারাই উপেক্ষা করলেন বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটির ডাকা বন্ধ। পাহাড়ে স্বশাসন নিয়ে চুক্তির প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে রাজ্যে ৪৮ ঘণ্টার বাংলা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়। বন্ধ উপেক্ষা করে এ দিন রাস্তায় নামলেন সাধারণ মানুষ।
কিছু দোকানপাট বন্ধ থাকলেও এ দিন শহরের বেশির ভাগ বাজারহাট ছিল স্বাভাবিক। রাস্তায় রিকশা, অটো, ব্যক্তিগত গাড়ি চলেছে। বিমানবন্দরও ছিল স্বাভাবিক। নিয়ন্ত্রিত বাজারেও লেনদেন হয়েছে। খুব বেশি বেসরকারি বাস রাস্তায় দেখা না গেলেও সরকারি বাস ছিল প্রচুর। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও চা বাগানে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। সরকারি দফতর তো বটেই, খোলা ছিল বেশ কিছু ব্যাঙ্কও।
এ দিন আইন ভেঙে হাসমি চকে সভা করার চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ ‘আমরা বাঙালি’র এক নেতাকে গ্রেফতার করে। বিনা অনুমতিতে মাইক বাজিয়ে পথসভা করার অভিযোগে পুলিশ এ দিন তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস এলাকা
থেকে আরএসপি’র দার্জিলিং জেলা সম্পাদক বিনয় চক্রবর্তী-সহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করে। প্রতিবাদে, আজ, মঙ্গলবার বিকেলে শিলিগুড়িতে ধিক্কার মিছিলের ডাক দিয়েছে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “আরএসপি জেলা সম্পাদক বিনয় চক্রবর্তী বিনা অনুমতিতে মাইক বাজিয়ে পথসভা করছিলেন। সে জন্য জেলা সম্পাদক-সহ ১৯ জনকে ধরা হয়।” রাস্তা অবরোধ এবং মোর্চা সমর্থকদের গাড়ি বেআইনি ভাবে আটকের চেষ্টার অভিযোগে ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় আরও ৩ জনকে। |
|
বন্ধ উপেক্ষা করেই কর্মব্যস্ততা শিলিগুড়ির এয়ারভিউ মোড়ে। সোমবার। - সন্দীপ পাল |
গত শুক্রবার আমরা বাঙালি-সহ ৮টি সংগঠন এবং শনিবার আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ডাকা বন্ধের জেরে শিলিগুড়িতে জনজীবন বিপর্যস্ত ছিল। রবিবার ছুটির দিন কাটিয়ে ফের একটি কর্মনাশা বন্ধ যে শহরের বাসিন্দারা মানবেন না সেটা সকাল থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। বাংলা ও বাংলাভাষা বাঁচাও কমিটির সভাপতি মুকুন্দ মজুমদার অবশ্য বন্ধ ‘সর্বাত্মক’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “আজ যে চুক্তি হল তাতে বাংলা ভাগের পথ ত্বরান্বিত হবে।” বন্ধে সামিল না হলেও আরএসপি’র প্রবীণ নেতা বিনয় চক্রবর্তী গ্রেফতার হওয়ায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেন দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশ সরকার বলেন, “আমরা চুক্তির বিরোধিতা করছি না। তার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। বিনয়বাবুকে গ্রেফতার করে গণতন্ত্রকেই লজ্জিত করা হল।”
তৃণমূল থেকে অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “কেউ আইন ভাঙলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। শিলিগুড়ির বাসিন্দারা যে উন্নয়নের পক্ষে দাঁড়িয়ে বন্ধ উপেক্ষা করবেন সেটা আমরা জানতাম। মঙ্গলবার জনজীবন পুরোপুরি স্বাভাবিক থাকবে।”
শিলিগুড়ির মতো এ দিন ডুয়ার্সেও বন্ধের প্রভাব ছিল আংশিক। ডুয়ার্সের মালবাজার, নাগরাকাটা, ময়নাগুড়ি, বীরপাড়া, ফালাকাটা, গয়েরকাটা, বানারহাট, আলিপুরদুয়ার, কালচিনি, হ্যামিলটনগঞ্জের মতো এলাকায় বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক, পোস্টঅফিস খোলা ছিল। বেসরকারি বাস রাস্তায় না নামলেও সরকারি বাস মিলেছে। বহু নিত্যযাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করেন। বেশির ভাগ চা বাগানে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। মালবাজারে জনচেতনা সংস্থা ‘কালা দিবস’ পালন করে। গোলমালের আশঙ্কায় ডুয়ার্সের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা ছিল।
বন্ধকে নৈতিক সমর্থন জানালেও আদিবাসী বিকাশ পরিষদ রাস্তায় নামেনি। পরিষদের রাজ্য নেতা তেজকুমার টোপ্পো বলেন, “বাগান বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা মজুরি পাবেন না। সে কারণে আমরা বাগানে বন্ধ হতে দিইনি।” |
|
|
|
|
|