চুক্তির বয়ান জেনেই পথে নামবে ফ্রন্ট
যে পদ্ধতিতে পাহাড়-চুক্তি হচ্ছে, তার বিরোধিতায় আন্দোলনের পথে যাচ্ছে বামফ্রন্ট। চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বয়ান জানার পরেই আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক করা হবে বলে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সোমবার জানিয়েছেন। পলিটব্যুরোর সদস্য তথা সংসদীয় দলনেতা সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, যে ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার এই চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, তাতে তাদের ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ স্পষ্ট হয়েছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেছেন বলে বামেদের অভিযোগ।
পাহাড়-চুক্তি নিয়ে তাদের অবস্থান ঠিক করতে এ দিন আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বৈঠকের পরে বিমানবাবু বলেন, “রাজ্যের জনগণ, বিধানসভার জনপ্রতিনিধি, রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে অবহিত না-করে যে ভাবে চুক্তি হল, তা অগণতান্ত্রিক। এই চুক্তির ফলে রাজ্যের ঐক্য ও সংহতি ধ্বংস হবে। পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী একে অন্যকে অবিশ্বাস করবে। ভষিষ্যতে সেই অবিশ্বাস সংষর্ষের রূপ নিলে তা ভয়ঙ্কর হবে।” বাংলা আবার ভাগ হবে কি না, মানুষ তা বুঝতে পারছে না এই অভিযোগ করে বিমানবাবু বলেন, “এত বড় স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজ্য সরকার একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত না-নিলেই ভাল করত। সর্বদল বৈঠক ডাকা উচিত ছিল। ১৯৮৮ সালে সুবাস ঘিসিঙের সঙ্গে চুক্তির সময়ে সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এই চুক্তি সার্বিক ভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে না।”
সিপিএমের তরফে আগেই অভিযোগ করা হয়েছিল, বামফ্রন্টের আমলে এ বছর ২১ জানুয়ারি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের যে অবস্থান ছিল, নতুন সরকারের আমলে তা পরিবর্তন হয়েছে। তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছিলেন, গোর্খা পার্বত্য পরিষদের মধ্যেই নতুন পরিষদের সীমানা হবে। এখন পাহাড়-চুক্তিতে সম্মতি দেওয়ার পিছনে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ আছে বলে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেছেন ইয়েচুরি। অন্ধ্রপ্রদেশে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবি নিয়ে প্রায়ই একই ধরনের সমস্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সব দলকে ডেকে আলোচনা করেছিল। ইয়েচুরির প্রশ্ন, এ বার দার্জিলিঙের ক্ষেত্রে কেন তা হল না?
রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরে শংসাপত্র নিতে বিধানসভায় এসে পাহাড়-চুক্তিতে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ দিন ইয়েচুরি বলেন, “বিভিন্ন বিষয়েই কেন্দ্রীয় সরকার মত অদলবদল করছে, দ্বিধাগ্রস্ততায় ভুগছে! এই দোলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারলে আরও সমস্যা বাড়বে।” ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার শীর্ষ নেতা বিমল গুরুঙ্গের সই না-করার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ইয়েচুরি। তাঁর কথায়, “মোর্চার শীর্ষ নেতা শুধু সাক্ষী থাকছেন। সই করছেন না। তার মানে এই চুক্তিকেই চূড়ান্ত বলে মনে করতে ওঁদেরও সংশয় রয়েছে। এটা বিপজ্জনক ইঙ্গিত। ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। রাজ্য সরকারকে এটা মাথায় রাখতে হবে।”
দু’দিন আগে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক চলাকালীনই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছিলেন, যে ভাবে পাহাড়-চুক্তি হচ্ছে, বামেরা তার বিরুদ্ধে। বামফ্রন্টের বৈঠক ডেকে চুক্তির বিরোধিতায় এ দিন শরিক দলগুলিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পাশে নিল সিপিএম। শিলিগুড়িতে চুক্তির বিরোধিতায় আরএসপি-র পথসভা পুলিশ যে ভাবে ভেঙে দিয়েছে, তা ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে বর্ণনা করে বিমানবাবু বলেন, “আরএসপি সন্ত্রাসবাদী দল নয়! তারা পথসভা করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চুক্তির বিরোধিতা করছিল।”
বামেদের অভিযোগ, তড়িঘড়ি চুক্তি করতে গিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দাবির কাছে রাজ্য সরকার ‘আত্মসমর্পণ’ করেছে। বিমানবাবু বলেন, “মোর্চার প্রথম থেকেই দাবি ছিল, তরাই ও ডুয়ার্সের কিছু অংশকে যুক্ত করতে হবে। কিন্তু বামফ্রন্ট তাতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত মোর্চা নেতৃত্ব পুরানো পার্বত্য পরিষদের সীমানাই মেনে নিয়েছিলেন। তরাই ও ডুয়ার্সের কোনও অংশকে যুক্ত করা হবে কি না, তা নিয়ে নতুন সরকার কমিটি গঠন করেছে। অথচ তরাই ও ডুয়ার্সের কোনও জনপ্রতিনিধি সেই কমিটিতে নেই!” তরাই ও ডুয়ার্সের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিমানবাবু বলেন, “সেখানকার বেশির ভাগ মানুষ এর বিরুদ্ধে। বন্ধও হচ্ছে।” এই বন্ধের পিছনে বামেদের সমর্থনের কথা স্বীকার করেননি বিমানবাবু। কিন্তু তাঁর কথা থেকে স্পষ্ট, রাজনৈতিক কারণেই এই বন্ধের পিছনে বামেদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে।
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.