তালিকায় ৭৮
মাওবাদী নেতাদেরও মুক্তি চেয়ে সুপারিশ
রাজ্যের মোট ৭৮ জন বিচারাধীন রাজনৈতিক বন্দির নিঃশর্ত মুক্তির সুপারিশ করল বন্দিমুক্তি কমিটি। এঁদের মধ্যে এমন কয়েক জন রয়েছেন, যাঁরা ধরা পড়ার সময় মাওবাদী সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ পদাধিকারী ছিলেন। সোমবার মহাকরণে নতুন সরকারের তৈরি রাজ্য বন্দিমুক্তি কমিটির তৃতীয় বৈঠকের পর এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে কমিটির চেয়ারম্যান মলয় সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, “সেই অর্থে কেউ মাওবাদী নেই।” কিন্তু কমিটির সদস্যরাই জানাচ্ছেন, তালিকায় রয়েছেন সিপিআই (মাওবাদী) দলের প্রাক্তন তিন রাজ্য সম্পাদক। রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাও। সুপারিশের তালিকায় থাকা অন্তত দু’জনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছেন, ৪৬ জন রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেবে রাজ্য সরকার। কিন্তু এ দিন ৭৮ জনের মুক্তির সুপারিশ করেছে বন্দিমুক্তি কমিটি। তার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রাক্তন বিচারপতি মলয়বাবু বলেন, “যাঁদের নাম সরকারের কাছে সুপারিশ করা হচ্ছে, তাঁদের প্রত্যেককেই রাজনৈতিক বন্দির স্বীকৃতি দিয়েছে আদালত। আদালত যাঁদের রাজনৈতিক বন্দির স্বীকৃতি দিয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককেই আমরা ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছি। তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ধারায়, কী মামলা চলছে, তা আমাদের বিচার্য নয়। তাঁরা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তা-ও আমাদের বিবেচনায় ছিল না।” তবে বাকিদের ক্ষেত্রে কমিটির সুপারিশ সরকার মানবে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত নয়।
মাওবাদী নেতাদের মুক্তির পক্ষে সরকারের একটি অংশের যুক্তি হল, জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরাতে উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই উদ্দেশে সম্প্রতি জঙ্গলমহল সফর করে উন্নয়নের একাধিক প্রকল্পও ঘোষণা করেছেন তিনি। পাশাপাশি, আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের জন্য নতুন পুনর্বাসন প্যাকেজ-ও ঘোষণা করেছেন। রাজ্য চায়, মাওবাদীরা নির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। এই অবস্থায় জেলবন্দি মাওবাদী নেতাদের মুক্তি দিলে আলোচনার পথ প্রশস্ত হবে।
কিন্তু সরকারের অন্য অংশ এবং বিভিন্ন মহল থেকে বন্দিমুক্তি কমিটির সুপারিশ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই অংশের বক্তব্য, কিছু দিন ‘শান্ত’ থাকার পর সম্প্রতি মাওবাদীরা জঙ্গলমহলে ফের সক্রিয় হতে শুরু করেছে। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় তারা ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও সম্প্রতি এই মর্মে রাজ্য সরকারকে বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক হতে বলেছে। এখন বন্দিমুক্তি কমিটির সুপারিশ মতো মাওবাদী নেতাদের ছাড়া হলে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের হাত শক্ত হবে। কারণ, এই নেতাদের পরামর্শেই অতীতে জঙ্গলমহলে মাওবাদী সংগঠন প্রসারিত হয়েছিল।
রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সিঙ্গুরের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে ৭৭ জনের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা চলছে, তাঁদেরও রেহাই দেওয়ার সুপারিশ করেছে বন্দিমুক্তি কমিটি। কমিটি মনে করে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ওঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। তাই মামলাগুলি প্রত্যাহার করা হোক। এ ছাড়া দায়রা আদালতেও কিছু মামলা চলছে। কমিটির সদস্য সুজাত ভদ্র জনান, সিঙ্গুরে সেশন কোর্টে যাঁদের মামলা চলছে, তাঁদের বিষয়েও খোঁজ খবর নেওয়া চলছে। পরের পর্যায়ে তাঁদের ব্যাপারে সুপারিশ করা হবে।
মলয়বাবু বলেন, “এখনও বিক্ষিপ্ত ভাবে আমাদের কাছে আরও কিছু বন্দির নাম আসছে। তাঁদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে বন্দিমুক্তি রিভিউ কমিটির সদস্যদের কয়েকটি দল দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, বর্ধমান, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, কোচবিহার এবং পুরুলিয়ার জেলগুলি পরিদর্শনে যাবেন। তাঁদের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর আরও কয়েক জন বন্দির মুক্তির সুপারিশ করা হতে পারে।”
First Page Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.