|
|
|
|
হুমকি চলবে না, হুঁশিয়ারি সুশান্তকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিধানসভার গত নির্বাচনে ফের জিতেও গা-ঢাকা দিয়েই আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। কলকাতা হাইকোর্ট সোমবার শর্তসাপেক্ষে তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে। আগামী এক মাসের মধ্যে তাঁকে নিম্ন আদালতে আবেদন করে সেখান থেকেই জামিন নিতে হবে।
এ দিন চারটি শর্তে ওই সিপিএম নেতার আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে হাইকোর্টের বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত ও বিচারপতি রঘুনাথ ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। শর্তগুলি হল:
• পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য বিচারকের অনুমতি ছাড়া সুশান্তবাবু ওই জেলায় ঢুকতে পারবেন না।
• তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কাউকে ভয় দেখাতে পারবেন না বা হুমকি দিতে পারবেন না।
• তিনি যেখানে থাকবেন, সেই ঠিকানা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য বিচারককে জানাতে হবে।
• তদন্তের কাজে সব রকম সাহায্য করতে হবে তদন্তকারী অফিসারকে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বেনাচাপড়া গ্রাম থেকে গত ৪ জুন দু’টি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে একটি কঙ্কাল তাঁর বাবার বলে শনাক্ত করেন নিখোঁজ অজয় আচার্যের ছেলে শ্যামল আচার্য। অন্য ছ’জনের সঙ্গে ২০০২ সাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন অজয়বাবু। কঙ্কাল উদ্ধারের পরে ওই মামলায় নতুন করে এফআইআর করা হয়। তাতে সুশান্ত ঘোষের নামও যুক্ত হয়। তার পরেই ওই প্রাক্তন মন্ত্রী আগাম জামিনের জন্য আবেদন করেন হাইকোর্টে। সুশান্তবাবু তখন থেকেই ‘অজ্ঞাতবাসে’ চলে যান। গত দেড় মাসে তাঁকে এক বারের জন্যও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। বিধানসভার অধিবেশনেও গরহাজির ছিলেন তিনি। গড়বেতা থেকে এ বারের নির্বাচনে জিতে আসা ওই সিপিএম বিধায়কের নিরাপত্তা নিয়ে বিধানসভাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তিনি কোথায় আছেন, সেই ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছে তাঁর দল সিপিএম-ও।
কয়েক দিন ধরে সুশান্তবাবুর আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি চলে। রাজ্য সরকারের পক্ষে আগাম জামিনের বিরোধিতা করে সওয়াল করেন আইনজীবী শেখর বসু। তাঁর অভিযোগ ছিল, প্রাক্তন সিপিএম মন্ত্রীর নির্দেশেই পশ্চিম মেদিনীপুরের পিয়ারাশালা
ও সংলগ্ন এলাকায় ওই সাত জনকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। সেই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের গোপন জবানবন্দিতেও সুশান্তবাবুর নাম আছে বলে জানান সরকারি আইনজীবী।
সুশান্তবাবুর পক্ষে সওয়াল করেন প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বলাই রায়। তিনি কঙ্কাল শনাক্তকরণের উপরে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। বলাইবাবু বলেন, অজয় আচার্য়ের ছেলে জানিয়েছেন, তিনি ধুতি ও গেঞ্জি দেখে কঙ্কালটি তাঁর বাবার বলে শনাক্ত করেন। আদালতের কাছে বলাইবাবুর প্রশ্ন ছিল, ন’বছর মাটির নীচে ধুতি ও গেঞ্জির কোনও অস্তিত্ব থাকতে পারে কি না?
ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন তাদের রায়েও সেই প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলেছে, কঙ্কালের গায়ে যে-পোশাক পাওয়া গিয়েছে, তা কী ভাবে এত বছর পরে ঠিক রয়ে গেল, রাজ্য সরকারের তরফে সেটা বলা হয়নি। বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিতে অভিযুক্তেরা এই বিষয়ে যা বলেছে, সেটা ওই ঘটনার সঙ্গে সুশান্ত ঘোষের যোগাযোগের যথেষ্ট প্রমাণ নয় বলেই মনে করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
আগাম জামিন মঞ্জুর করে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ২০০২ সালের সাত জনের নিখোঁজের ঘটনার সঙ্গে সুশান্তবাবুর যোগাযোগ প্রমাণ করা যায়নি। তারা বলেছে, ওই কঙ্কাল যে অজয় আচার্যের, তা প্রমাণ করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা হওয়া দরকার। মৃতদেহটি কার, পরনের পোশাক কিংবা দাঁত দেখে তা শনাক্ত করা যায় না। কঙ্কালটি অজয়বাবুর বলে ‘শনাক্তকরণ’-এর পরিপ্রেক্ষিতেই সুশান্তবাবুর নামে এফআইআর করা হয়েছিল। অথচ দেহটি অজয়বাবুরই কি না, সেটা নিশ্চিত নয়।
|
হাইকোর্টের চার নির্দেশ |
•পশ্চিম মেদিনীপুরে ঢুকতে জেলার মুখ্য বিচারকের অনুমতি নিতে হবে।
•কোথায় আছেন, জানাতে হবে মুখ্য বিচারককে।
•প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ভয় দেখানো বা হুমকি দেওয়া যাবে না।
•তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করতে হবে। |
|
|
|
|
|
|