বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস জাপানি মেয়েদের
যুক্তরাষ্ট্র-২ (১) (মর্গেন, ওয়ামবাচ)
জাপান ২ (৩) (মায়ামা, সাওয়া)
মেয়েদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর শ্যাম্পেন খোলার উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই ফিফার।
কিন্তু শেপ ব্লাটারের হাত থেকে জাপান ট্রফিটা নেওয়ার পর স্টেডিয়ামের আকাশ থেকে যেন নেমে এল অসংখ্য শ্যাম্পেন ফোয়ারা।
“যারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আমাদের সমর্থন করেছ তাদের ধন্যবাদ’’ইংরেজিতে লেখা বিশাল এই ব্যানার নিয়ে যখন দৌড়োচ্ছেন মায়ামা-কাহোরি-সাওয়ারা তখন স্টেডিয়ামে শব্দব্রহ্ম। মনে হচ্ছিল ফ্রাঙ্কফুর্ট নয়, বসে আছি টোকিওতে। প্রযুক্তির অসামান্য মিশেলে স্টেডিয়ামের ছাদ থেকে নেমে আসছে সোনালি-রুপোলি ছোট-বড় রিবনের অসংখ্য টুকরো। তাতে এমনভাবে আলো ফেলা হচ্ছিল যেন শ্যাম্পেন-ধারা। বাইরে একই সঙ্গে বাজির রোশনাই। এশীয় ফুটবলের ঐতিহাসিক জয়গাথা রচনার দিনে নানা রংয়ের মায়াবী আলো আর নীল জার্সির হাত ধরাধরিতে যা তৈরি করে দিল স্বপ্নের পরিবেশ। তীব্র শীতের রাতেও।
ভারতীয় সময় সোমবার ভোর রাতে শেষ হওয়া ফাইনাল কত উত্তেজক ছিল খেলার আধঘণ্টা পরেও তা মালুম পাওয়া গেল, গ্যালারিতে অসংখ্য চুম্বনরত মানুষকে দেখে। জার্মানরা কাদের সমর্থন করবে তা নিয়ে গত দু’দিন ধরে কাগজে-টিভিতে জল্পনার পারদ উঠেছিল, যতদূর ওঠা সম্ভব। ‘ফরেস্ট-স্টেডিয়াম’-এর (ইউরোপের অন্যতম সেরা মাঠটিকে ওই নামেই ডাকা হয়) এই ম্যাচটির উত্তেজনার পারদও ওঠানামা করল দর্শক বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই।
বিরতি পর্যন্ত জাপানকে সঙ্গ দিলেন ‘ফুটবল ঈশ্বর’। যুক্তরাস্ট্রের একটি শট পোস্টে লেগে ফিরল। বিপক্ষের একটা শট নিজেদের গোল লাইন থেকে ফেরালেন জাপান ডিফেন্ডার। ম্যাচের সেরা জাপান গোলকিপার কোহরি বাঁচালেন আরও একটা নিশ্চিত গোল। টুর্নামেন্টের ফেভারিট যুক্তরাস্ট্র গোলটা পেল দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি। বদলি হিসাবে নামা মর্গেনের কোণাকুণি বাঁ পা থেকে ছিটকে বেরোল বল। খেলা শেষ হওয়ার নয় মিনিট আগে জাপানের ১-১। মায়ামার গোলে। অতিরিক্ত সময়ে ফল ১-১। একই ভাবে। ওয়ামবাচের গোলের পর জাপানের ‘মেসি’ সাওয়া (গোল্ডেন বুট ও বল পেলেন) গোল করলেন। টাইব্রেকারে অতিমানবী হয়ে উঠলেন জাপান গোলকিপার কোহরি। ধনুকের মতো বেঁকে গিয়ে শরীর ছুঁড়ে পা দিয়ে আটকালেন যুক্তরাষ্ট্রের লয়েডের কিক। পরের কিকটাও আটকে গেল কোহরির হাতে। জার্মানির কাগজ যাঁর নাম দিয়েছিল ‘অলিভার কান’ সেই যুক্তরাষ্ট্র গোলকিপার সোলো টুর্নামেন্টের সেরা হলেও, এ দিন আটকাতে পারলেন না টাইব্রেকারে করা জাপানের একটি কিকও।
কোনও সন্দেহ নেই পাসিং, ড্রিবলিং, শক্তি-র ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে ছিল অনেকটাই। কিন্তু ছোটখাটো জাপানি মেয়েরা তাদের হার না মানা মনোভাব আর প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলে জয় করে নিল ফুটবল বিশ্ব। প্রথমবার মেয়েদের বিশ্বকাপ গেল উদিত সূর্যের দেশে। ছেলেদের মতোই মেয়েদের বিশ্বকাপের দখল এত দিন কার্যত একচেটিয়া ছিল অন্য গোলার্ধের। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রফি জয় আটকে জাপান সেই অর্থে এশীয় ফুটবলের সেরা বিজ্ঞাপন হয়ে গেল এ দিন। জাপান কোচ নারিও সসাকিও বলে দিলেন, “জাপানের জয় এশীয় ফুটবলে জয়।”
২০০৬-এর ছেলেদের বিশ্বকাপের আর্জেন্তিনা এবং ব্রাজিল-সহ পাঁচটি ম্যাচ হয়েছিল এখানে। ম্যাচ চলার ফাঁকে স্টেডিয়ামের মাঝ বরাবর ঝোলানো টিভিতে দেখানো হল, ‘সব আসন ভর্তি, ২০০৬-কেও টপকে গেছি আমরা’। তখন আড়াআড়ি দু’ভাগ হয়ে যাওয়া ‘গর্বিত জার্মান’-দের কী উচ্ছ্বাস! টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের বিদায় নেওয়ার দুঃখ বুকে চেপে স্বামী বা প্রেমিককে নিয়ে মাঠে এসেছিলেন অসংখ্য জার্মান মেয়ে। কেউ জাপানের পতাকা আবার কেউ যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা নিয়ে। লাল-নীল রং মুখে মেখে। গলায় একই রং-এর মালা। যেন উৎসব লেগেছে।
জাপান অবশ্য উৎসব করেনি! সুনামি আর পারমাণবিক বিপর্যয়ে মৃত স্বজনদের উৎসর্গ করার জন্য মেয়েদের বিশ্বকাপটা দেশে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন অসংখ্য জাপানবাসী। দেশ থেকে ই-মেলে, চিঠি লিখে। ফেসবুক উপচে পড়েছিল আর্জিতে। মায়ামা-সাওরা কথা রেখেছেন। বিশ্বকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। কিন্তু শ্যাম্পেনের বোতল খোলেননি।
সুনামিতে হারানো স্বজনদের পরিবারকে ‘স্বস্তি’ দেওয়ার ট্রফি জয়ের দিনে শ্যাম্পেন যে একেবারেই বেমানান। জাপানের মনোভাবের সঙ্গে যা একেবারেই খাটেও না।
Previous Story Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.