|
|
|
|
‘জরিমানা’ আদায়ের হুমকি, অভিযুক্ত তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
এ রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা বদলের পর থেকেই বর্তমান শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাম কর্মী-সমর্থকদের উপরে নানা অত্যাচার ও ‘জরিমানা’ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সব ক্ষেত্রে ঘটনা থানা-পুলিশ অব্দি গড়ায়নি। আরামবাগ মহকুমায় মৌখিক ভাবে অনেকেই অত্যাচার ও জরিমানা আদায়ের অভিযোগ জানালেও থানায় নালিশ করার ‘সাহস’ পাননি কেউই। সম্প্রতি একটি ঘটনায় অবশ্য আরামবাগ থানায় জরিমানা আদায়ের জন্য হুমকি দেওয়ার লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে ৯ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের চক আহমেদ গ্রামের। শেখ সালামত হোসেন নামে এক ব্যক্তি গত শুক্রবার ওই অঞ্চলের তৃণমূল নেতা মহম্মদ হোসেন, মহম্মদ হানিফ, মহম্মদ হাবিব, নুরুল ইসলাম, নূর আলম-সহ ৯ জনের নামে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় তৃণমূল নেতা কালাম মুন্সি এবং জাকির হোসেনের বক্তব্য, “আমাদের নেত্রী কোনও অরাজকতা বরদাস্ত করবেন না বলেছেন। দলে দুষ্কৃতীদের ঠাঁই নেই। দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে বলা হয়েছে, অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হোক।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, বাতানল পঞ্চায়েতের রসুলপুর, চক আহমেদ, বাতানল, তেলুয়া, ভালিয়া, চক জালান প্রভৃতি গ্রামে ‘জরিমানা’ এখন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা তো বটেই ছোট ব্যবসায়ী, স্কুল শিক্ষক, রেশন ডিলার-সহ বহু মানুষই এর শিকার বলে অভিযোগ।
সালামত হোসেনের দাবি, গত ৩ জুলাই তাঁকে রসুলপুরের একটি ক্লাবে ডেকে পাঠায় তৃণমূলের লোকজন। সালামত গিয়ে দেখেন, সকলের হাতে রড, লাঠি, শাবল। সালামতকে প্রশ্ন করা হয়, কী কী অস্ত্র আছে তাঁর কাছে। সিপিএমের জমানায় কার কাছ থেকে তিনি কী জরিমানা আদায় করেছেন, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। বছর পাঁচেক আগের একটি মামলা প্রত্যাহারের জন্যও চাপ দেওয়া হয় তাঁকে। সালামত এলাকায় সিপিএম কর্মী হিসাবেই পরিচিত। যদিও নিজেকে ‘প্রাক্তন সিপিএম কর্মী’ বলেই দাবি করেছেন তিনি। সালামত বলেন, “ওদের অভিযোগ অস্বীকার করি। তবে আমি উত্তর দিতে গেলেই মারছিল। মামলা তুলতে পারব না বলায় ক্লাবের ভিতরে ফেলে প্রচণ্ড মারধর করল। ৭ লক্ষ টাকাও দাবি করে। প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে একটি সাদা কাগজে জোর করে সই করিয়ে নেয়। পুলিশকে জানালে বা হাসপাতালে গেলে ঘর জ্বালিয়ে গোটা পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ওরা।” টাকা না দেওয়া পর্যন্ত তৃণমূলের লোকজন তাঁকে চাষ বন্ধ রাখার ফতোয়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ সালামতের।
তিনি জানান, ঘটনার দিন দশেক পরে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা কালাম মুন্সিকে বিষয়টি তিনি জানান। চাষ শুরু করার পরামর্শ দেন ওই তৃণমূল নেতা। তাতে বাধা দেয় তৃণমূলেরই সশস্ত্র কিছু লোক। সালামত জানান, ওই তৃণমূল নেতা তাঁকে ঘটনার কথা প্রশাসনকে জানাতে বলেন। স্থানীয় আর এক তৃণমূল নেতা জাকির হোসেন ঘটনাটি পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেন।
তৃণমূলেরই একাংশ গোটা ঘটনার পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দেখছেন। অন্য দিকে, সিপিএমের আরামবাগ জোনাল কমিটির সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন। কিন্তু তিনি নিজের দলের কাছে কী বার্তা পাঠাচ্ছেন তা বোধগম্য হচ্ছে না।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মহম্মদ হোসেনের বক্তব্য, “ঘর ভাঙচুর, লুঠপাটের পুরনো মামলাটি নিয়ে কথাবার্তা হয়। কিন্তু মারধর, জরিমানা, চাষ বন্ধের সঙ্গে আমাদের যোগ নেই।” বিষয়টি তাঁর ‘কানে উঠেছে’ বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা। |
|
|
|
|
|