অগ্নি নির্বাপক নামমাত্র
মাসও পেরোল না, সত্যি হয়ে গেল সচিবের আশঙ্কা
সিনেমার শু্টিং হয় এখানে!
স্টুডিওর দশা যে এমন হতে পারে, তা কল্পনাও করতে পারেননি রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতিসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ২০ জুন এক দল প্রতিনিধি নিয়ে তিনি টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওয় গিয়েছিলেন। সব দেখে বিস্ময় চেপে রাখতে পারেননি। বলে ওঠেন, “এ কী অবস্থা! আগুন লাগলে কী হবে?”
এক মাসও কাটেনি। সোমবার তাঁর সে আশঙ্কাই সত্যি হয়ে উঠল পাশের ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওয়!
টেকনিসিয়ান্সে সে দিন কী দেখে চোখ কপালে তুলেছিলেন সচিব? দেখেছিলেন, জীর্ণ সেটের চারদিকে মাকড়শার জালের মতো ঝুলছে বিদ্যুতের তার। অতিদাহ্য জিনিসপত্র ফ্লোরের যেখানে-সেখানে ডাঁই করে করে রাখা। কোথাও পড়ে প্লাইউড, কোথাও আঠা, কোথাও বা থার্মোকল। চতুর্দিকে কাঠের ফ্রেম আর চট ছড়ানো।
এবং এ হেন ‘জতুগৃহে’র চৌহদ্দিতে কোথাও নেই অগ্নি-নির্বাপনের পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত!
একই অবস্থা টালিগঞ্জের অধিকাংশ স্টুডিওর। কর্মীদের অভিযোগ, অগ্নি-নির্বাপন ব্যবস্থার বালাই না-রেখে দিনের পর দিন চলছে স্টুডিওপাড়া। আগুনের বিভিন্ন দৃশ্যের শু্যটিংও হামেশা হচ্ছে। এ দিন ভারতলক্ষ্মীর অগ্নিকাণ্ডের পরেও টালিগঞ্জের কয়েকটি স্টুডিওয় গিয়ে দেখা গিয়েছে একই ছবি। যেমন, টালিগঞ্জ ট্রামডিপো লাগোয়া ইন্দ্রপুরী স্টুডিও। বেসরকারি মালিকানার ইন্দ্রপুরীতে চারটে ফ্লোর। প্রতিটায় নানা টিভি সিরিয়ালের শু্যটিংয়ের জন্য দাহ্য বস্তু দিয়ে সেট তৈরি হচ্ছে। অথচ আগুন নেভানোর বন্দোবস্ত বলতে এক-একটা ফ্লোরে সাকুল্য দু’টো ‘ফায়ার এক্সটিংগুইশার।’ অর্থাৎ অতিকায় স্টুডিওর সব ফ্লোর মিলিয়ে মাত্র আটটা! সে রকম আগুনের মুখে যা খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্টুডিওরই কিছু কর্মীর।
এ ছাড়া রাজ্য সরকারের অধীনে রয়েছে টেকনিশিয়ান্স-১। খোলামেলা স্টুডিও চত্বরে তিনটে ফ্লোর। প্রতিটায় দু’টো করে আগুন নেভানোর যন্ত্র। মোট ছ’টা। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, আগুন নেভানোর নিজস্ব ‘পরিকাঠামো’ তৈরি করেছেন তাঁরা। কী রকম?
কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ফ্লোর এলাকার চারপাশে জলের লাইন করা হয়েছে। আগুন লাগলে স্টুডিও-র জলাধার থেকে জল বয়ে এনে নেভানোর চেষ্টা করা হবে। কিন্তু এতে লাভ কতটা হবে, সে সম্পর্কে স্টুডিও-কর্মীরাই ঘোর সন্দিহান। তাঁদের বক্তব্য, “আগুন লাগলে ওই সামান্য জল কোনও কাজেই আসবে না।” স্টুডিও-র প্রশাসক দেবানন্দ সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, “ওটা আগুন নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থা। পরে দমকল এসে যা করার করবে।”
স্টুডিও-কর্তৃপক্ষদের আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত ছিল না কি? প্রশাসনেরও কি উচিত ছিল না এ দিকে আরও বেশি নজর দেওয়ার?
দমকলের এক কর্তার কথায় সেই আক্ষেপেরই সুর। যিনি বলেন, “দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরির উপাদানগুলোকে অগ্নি-নিরোধক রাসায়নিকে চুবিয়ে নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্টুডিওর সেট তৈরির জিনিসপত্রেও ওই রাসায়নিকের প্রলেপ লাগানো আবশ্যিক করা দরকার। সেই সঙ্গে ফ্লোরে ফ্লোরে রাখা দরকার প্রচুর সংখ্যায় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, বালি ও ফোম। টালিগঞ্জের কোনও স্টুডিওয় এ সবের বালাই নেই!” উল্লেখ্য, রাজ্যের প্রাক্তন দমকলমন্ত্রী প্রতিম চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং টালিগঞ্জে নিয়মিত অভিনয় করেছেন। তা সত্ত্বেও এই অতি জরুরি বিধিগুলো চালু করা যায়নি বলে স্টুডিও-কর্মীদের অভিযোগ। সাধে কি ভারতলক্ষ্মীর ঘটনার পরে নির্দেশক হরনাথ চক্রবর্তী বলেন, “আগুন এত দিন লাগেনি, এটাই ভাগ্যের!”
Previous Story Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.