কবে আধুনিক হবে টেকনিশিয়ান্স, প্রস্তাব ফাইলেই
স্টুডিও নয়, এ যেন জতুগৃহ!
এগারো বছর আগে ২০০০-এর ১৪ মার্চ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল রাজ্য সরকারের টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওর চার নম্বর ফ্লোর। কিন্তু তার পরেও অবস্থা কার্যত বদলায়নি।
যে পরিকল্পনা পাল্টে দিতে পারত এই পরিস্থিতি, আধুনিকীকরণের সেই প্রস্তাবই ফাইলবন্দি হয়ে মহাকরণে পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর।
রাজ্য সরকারের তিন স্টুডিওর মধ্যে টেকনিশিয়ান্স- ১ সবচেয়ে বড়। ২০০৬-এ রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, লজ্ঝড়ে ওই স্টুডিওর হাল ফেরানো হবে ‘যৌথ উদ্যোগ’-এ। ওই বছর জুলাইয়ের শেষে সমঝোতার আবেদনপত্র ছাড়া হয়। তিনটি সংস্থা আবেদনপত্র তুললেও শেষ পর্যন্ত তা জমা দেয় একটি সংস্থা। তাদের সঙ্গে ওই বছর ১৬ অক্টোবর চুক্তি হয় রাজ্য সরকারের। ঠিক হয়, তারা ১০ বছরে ৪০ কোটি টাকা দেবে সরকারকে। বিনিময়ে তাদের ৯৯ বছরের জন্য স্টুডিওটি লিজ দেওয়া হবে। এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু শর্ত চূড়ান্ত করার সময়েই কর্মী ও অভিনয় জগতের একাংশ এর বিরোধিতা শুরু করেন। অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ মহাকরণে এসে দেখা করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে। বামপন্থী শিল্পী-সংগঠনও প্রতিবাদে সামিল হয়। এর ফলে পিছিয়ে যায় সরকার। তাঁদের দাবি মেনে এর পর ওই স্টুডিওর মানোন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় কেএমডিএ-কে।
বহু ছবির স্মৃতি এই স্টুডিও ঘিরে। আগুন লাগার খবর পেয়েই
চলে এলেন প্রসেনজিৎ। সোমবার, ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওয়। বিশ্বনাথ বণিক
দায়িত্ব নিয়ে কী করল কেএমডিএ?
কেএমডিএ-র কর্তারা জানান, ২০১০-এর ৯ নভেম্বর ওই স্টুডিওর মানোন্নয়ন ও একটি চারতলা নতুন ভবন তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয় মহাকরণে। অগ্নি-নির্বাপণ থেকে আধুনিকীকরণের নানা প্যাকেজ ছিল এই প্রস্তাবে। কিন্তু তার পরে কাজ আর এগোয়নি। কেন? উত্তরে কেএমডিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “টাকা কোথায়? অর্থ মঞ্জুর না হলে কাজ হবে কী করে?” অর্থ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, টাকার অভাবে ১২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার এই প্রস্তাব ফাইলবন্দি হয়ে আছে। রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদলের পর গত ২১ জুন কেএমডিএ থেকে মহাকরণে ফের পাঠানো হয়েছে আর একটি প্রস্তাব।
এর মধ্যে কী অবস্থায় রয়েছে স্টুডিওটি?
কেএমডিএ-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার অরূপ ঘোষ বলেন, “স্টুডিওটি সত্যিই জতুগৃহ। টেকনিশিয়ান্স ১-এর এমন অবস্থা, আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি পর্যন্ত ঢুকতে পারবে না। আমরা পিছন দিকে একটা বড় ফটক তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছি। এ ছাড়াও অগ্নি-নির্বাপণের নানা ব্যবস্থা, পুরনো সেটগুলির বড় মাপের সংস্কার, দু’টি উন্নত মানের বাথরুম ও সবুজায়ন দরকার। এ সবের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ৪ কোটি ১৩ লক্ষ টাকার।”
টেকনিশিয়ান্স-২ নিয়ে কী হবে, তা অবশ্য এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি রাজ্য সরকার। অরূপবাবু বলেন, “আমরা ওখানে পরিদর্শনে গিয়ে সিঁড়ি দেখে হতভম্ব হয়ে যাই। এত বিপজ্জনক সিঁড়ি একটা বাড়িতে কী ভাবে থাকে, সেটাই বিস্ময়ের!”
অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। স্টুডিও পড়ে রয়েছে সেই তিমিরেই। কিন্তু এক সময় যাঁরা যৌথ উদ্যোগে আধুনিকীকরণের কাজে বাধা দিয়েছিলেন, এখন তাঁরা কী বলছেন?
ভগ্নদশায় টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও। ফাইল চিত্র
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সোমবার বলেন,“এটা ঠিক, প্রতিটি স্টুডিওই জতুগৃহ হয়ে আছে। যে কোনও সময়ে বড় বিপদ হতে পারে। অবিলম্বে আধুনিকীকরণ দরকার।” তা হলে সেই কাজে বাধা দিয়েছিলেন কেন? সৌমিত্রবাবুর জবাব, “এখনই সবিস্তার বলতে পারব না। তবে যৌথ উদ্যোগের ওই পরিকল্পনায় বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের কোনও উন্নতি হত না।”
সরকার তো টাকার অভাবে কাজে নামতেই পারছে না। তা হলে উপায় কী? সৌমিত্রবাবু বলেন, “আমরা নানা সময়ে সরকারকে নানা পরিকল্পনা দিয়েছিলাম। কোনওটাই হয়নি।” কেন? সৌমিত্রবাবুর জবাব, “সে তো আর আমাদের হাতে নেই।”
সৌমিত্রবাবু এ ব্যাপারে আর বিশেষ কিছু বলতে না চাইলেও, এ নিয়ে খোলাখুলি বামফ্রন্ট সরকারকেই দায়ী করেছেন নির্দেশক হরনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তো টালিগঞ্জকে গুরুত্বই দিতেন না। তিনি ব্যস্ত ছিলেন নন্দন নিয়ে। খুব বেশি হলে তিনি কথা বলতেন পছন্দের কয়েক জনের জন্য। তাই কাজের কাজ কিছুই হয়নি।”
তা হলে কি টাকার অভাবেই আটকে থাকবে টেকনিশিয়ান্সের ভবিষ্যৎ?
অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য আশাবাদী। তাঁর কথায়, “সরকারের কাছে সব কাজেরই একটা অগ্রাধিকারের প্রশ্ন থাকে। সেই তালিকায় টেকনিশিয়ান্সের পুনর্গঠন নিশ্চয়ই উপরের দিকে রয়েছে। কারণ, এখন তো বাংলা ছবির বাজার ভালই।”
এক নজরে
ভারতলক্ষ্মী স্টুডিও
১৯৩৩ সালে তৈরি।
প্রথম মালিক: বাবুলাল চোখানি। তার পরে ছেলে জগদীশ।
বর্তমানে জগদীশের দুই ছেলে, নবীন ও জ্যোতি। নবীনের নামেই ‘নবীনা’ প্রেক্ষাগৃহের নামকরণ।

প্রথমে ৬-৭টি ফ্লোর ছিল স্টুডিওতে। একটি ভেঙে ‘নবীনা’, আর একটি ভেঙে বহুতল।
এই স্টুডিওরই প্রযোজনা সংস্থা ‘ভারতলক্ষ্মী পিকচার্স’। ১৯৪৪-এ সেই সংস্থার প্রযোজনায়
মুক্তি পায় ছবি বিশ্বাস, অহীন্দ্র চৌধুরী ও মলিনা দেবী অভিনীত জনপ্রিয় ছবি ‘মাটির ঘর’।

‘রাজপথ’, ‘মেয়ে ও ছেলে’ এবং ‘অবতার’ ছবির শু্যটিং এখানেই। সে সময়ে প্রভাত ফিল্ম কোম্পানি,
নিউ থিয়েটার্স, বম্বে টকিজ-এর সঙ্গে এক সারিতেই ছিল ভারতলক্ষ্মী পিকচার্স-এর নাম।

প্রযোজনা সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে বিভিন্ন সময়ে গুদামঘর
হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে স্টুডিওটি।

ভিতরে একটি ঘরে কিছুটা অযত্নের সঙ্গেই বহু পুরনো সিনেমার শু্যটিংয়ের যন্ত্রপাতি রাখা আছে।
মাঝে বহুদিন বন্ধ ছিল স্টুডিও। ৯০-এর দশকে টিভির দৌলতে আবার কাজ শুরু হয়।
শু্টিং হয়েছে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘কালপুরুষ’-এর। ছবিটির শিল্প নির্দেশক ছিলেন সমীর চন্দ।
ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’র শু্যটিং-এর সময়ে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের জন্য বিশেষ মেক-আপ ঘর।
ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘দ্য লাস্ট লিয়র’-এ অমিতাভ বচ্চনের শু্টিং।
রাজ চক্রবর্তীর ‘লাকি ম্যাসকট’ এই স্টুডিও। ছবির অন্তত একটি দৃশ্য তিনি এখানে শু্ট করবেনই।
Previous Story Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.