|
|
|
|
কমিটি গড়লেন দমকলমন্ত্রী |
দু’ঘণ্টার আগুনে পুড়ে ছাই ভারতলক্ষ্মীর সেট |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কথা ছিল একটি মেগা ধারাবাহিকের যজ্ঞের দৃশ্যের শু্টিং হবে। সেই মতো প্রস্তুতিও চলছিল প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওয়। তৈরি হয়েছিল সেট। কিন্তু শু্যটিং শুরুর আগেই সোমবার সকালে ভস্মীভূত হয়ে গেল দাহ্য পদার্থে ঠাসা সেটটি। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হল স্টুডিও-র আরও তিনটি সেট। দমকলের ১৫টি ইঞ্জিন ঘণ্টা দু’য়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। স্টুডিও লাগোয়া হোগলাপাড়া বস্তিতে আগুন না ছড়ালেও সেখানকার তিনটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বস্তির বাসিন্দা শেখ নাজু আলি ও টুনা নামে দুই ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও আঘাত গুরুতর নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কী ভাবে লাগল আগুন? সে সম্পর্কে এখনও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি দমকলের কর্মী-অফিসারেরা। তবে তাঁদের অনুমান, শু্যটিংয়ের প্রস্তুতির সময়েই কোনও ভাবে আগুনের ফুলকি ছিটকেই এই ঘটনা। দমকলের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, যজ্ঞের সেট-সহ ঘটনাস্থল এমনকী গোটা স্টুডিওতেই অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই! মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “ওই স্টুডিও-তে কোনও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না।” অথচ সেট তৈরির কাজে প্লাইউড, থার্মোকল, ছোবড়া, ডিমের খোল-সহ নানা রকম দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যে মেগা ধারাবাহিকটির শু্যটিং চলছিল, সেই ‘মেঘের পালক’-এর ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তিও বলেন, “অগ্নি-নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা ছিল না এখানে।” আগুনে আহতদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি পুরসভার জঞ্জাল বিভাগকে ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। |
|
বিপর্যয়ের পরে। ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওয় চলছে আগুন নেভানোর কাজ। সোমবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি। |
স্টুডিওয় অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওর মালিক জ্যোতি চোখানি। অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারেও তাঁদের দায় অস্বীকার করে জ্যোতি বলেন, “বেলা সাড়ে ১০টায় শু্যটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার আগে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দিই না। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। সেটের ভিতরের ঘটনার দায় আমাদের নয়। আর স্টুডিওতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, এ কথাও ঠিক নয়। তবে আমরা যখন খবর পাই, তখন আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।”
ঘিঞ্জি এলাকার মধ্যে হলেও শহরের সবক’টি স্টুডিওই যে দীর্ঘ দিন ধরে দাহ্য পদার্থের ঠাসাঠাসিতে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, সোমবার ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওয় আগুন লাগার ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠল। এ দিনের অগ্নিকাণ্ডের পর একটি কমিটি গড়ে টলিউডের স্টুডিওগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান।
পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন আগুন লাগে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ। তখন এক তলা ওই স্টুডিওর চারটি সেটের একটিতে চলছিল ‘মেঘের পালক’-এর শু্যটিংয়ের প্রস্তুতি। আগুনে প্রায় গোটা সেটটিই পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্য তিনটি সেটও। এর মধ্যেই পাশের বস্তির বাসিন্দারা আগুন টের পান। তাঁরাই নিজেদের উদ্যোগে জল-ভর্তি বালতি হাতে আগুন নেভাতে নেমে পড়েন। স্থানীয় বিধায়ক অরূপ বিশ্বাসও স্বীকার করেন, বস্তিবাসীরা সময় মতো ঝাঁপিয়ে না পড়লে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হত। খবর যায় দমকলে। বস্তির অন্য প্রান্তের বাসিন্দারা অনেকেই ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করতে শুরু করে দেন। স্টুডিও-র অন্য সেটগুলি থেকেও মালপত্র বের করতে থাকেন কর্মীরা। পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় স্টুডিও-র অন্য সেটগুলিতে শু্যটিং না চললেও আগুনের জেরে এ দিন সবক’টি সেটের কাজকর্মই ব্যাহত হয়েছে। অন্য সেটগুলিতেও একাধিক মেগা ধারাবাহিকের শু্যটিং হওয়ার কথা ছিল। ‘মেঘের পালক’-এর শু্যটিং যে প্রযোজক সংস্থার তত্ত্বাবধানে চলছিল, তার মালিক নিপ্পল রাণে বলেন, “লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। পাঁচটা ক্যামেরা পুড়ে গিয়েছে। তবে কাল থেকেই ফের শু্যটিং শুরু করার কথা ভাবছি।” |
|
|
|
|
|