‘চোর’ সন্দেহে এক যুবককে শনিবার প্রকাশ্যে পিটিয়ে মেরেছিল কিছু লোক। ওই যুবকের সঙ্গী গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে। তারই প্রতিবাদে সোমবার উত্তাল হয়ে উঠল সিউড়ি শহরের হাটজনবাজার এলাকা।
পিটিয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে পথ অবরোধ করলেন এলাকাবাসীর একাংশ। পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়ে উত্তেজিত জনতা। বেশ কিছু গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে।
অবরোধকারীদের মধ্যে তিন মহিলা-সহ চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। উত্তেজনা থাকায় এলাকায় পুলিশ পিকেট বসেছে। পুলিশ এবং এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা জানিয়েছেন, মৃত ও আহত যুবক নানা রকম সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত। মৃতের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও ছিল। |
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিন ভোরে হাটজনবাজার কলোনির হরিসভাপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় নৈশরক্ষী পার্থ সাহাকে মারধর করে তাঁর মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনতাই করার অভিযোগ ওঠে ওই পাড়ারই দুই বাসিন্দা কিশোর গোস্বামী এবং স্থানীয় রেলপাড়ার বাসিন্দা কালু দাসের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার জেরে এলাকারই কিছু লোক নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে প্রথমে কালুকে বেধড়ক মারধর করেন। সকাল ১০টা নাগাদ তাকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইতিমধ্যে কিশোরকে খুঁজে পেয়ে তাঁকেও পেটায় ওই লোকজন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কিশোরকেও (২৫) দুপুর ১২টা নাগাদ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার বিকেলে সেখানেই মারা যান তিনি।
এর পরেই ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। পিটিয়ে মারার ঘটনার প্রতিবাদ জানান স্থানীয় মানুষের একাংশ। রবিবার বিকেলে ময়না-তদন্তের পরে কিশোরের দেহ নিয়ে হাটজনবাজারে সিউড়ি-বোলপুর সড়কে কিছুক্ষণ অবরোধও করেন তাঁরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। এ দিন বিকেলে ফের ওই রাস্তায় অবরোধ শুরু হলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। অবরোধকারীদের দাবি, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের ধরতে হবে বলে রবিবার পুলিশ আশ্বাস দিলেও তা পালন করেনি। বরং বিনা প্ররোচনায় লাঠি চালিয়েছে। পিটিয়ে মারার ঘটনায় দোষীদের না ধরে উল্টে আমাদেরই চার জনকে গ্রেফতার করেছে।”
বীরভূমের পুলিশ সুপার নিশাদ পারভেজ এ দিন বলেন, “কিশোর ও কালু, দু’জনেই পুলিশের খাতায় দাগি দুষ্কৃতী। শুধু তাই নয়, ২০০৮ সালে হাটজনবাজারেরই বাসিন্দা দিলীপ মালোকে খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিল কিশোর। তাকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত তপন দাস-ও ওই খুনের মামলায় অভিযুক্ত। ওই মামলা এখনও চলছে।” পুলিশ সুপারের আরও বক্তব্য, “যাই হোক না কেন, এই ভাবে কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। কিশোরকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” লাঠি চালানো প্রসঙ্গে তিনি জানান, অবরোধের খবর পেয়ে ডিএসপি (ডিঅ্যান্ডটি) প্রশান্ত চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান। অবরোধকারীরা পুলিশ দেখে মারমুখী হয়ে ওঠেন। বাস-সহ ৮-১০টি গাড়ি ভাঙচুর হয়। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। এর পরেই পুলিশ ও র্যাফ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে তাঁর দাবি।
হরিসভাপাড়ার বাসিন্দা তপন দাস, তপন ঘোষাল, রাজীব ঘোষাল-সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছে মৃতের পরিবার। কিশোরের মা সবিতা গোস্বামী এ দিন বলেন, “আমার দুই মেয়ে, এক ছেলে। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল ওই ছেলে। আমরা চাই দোষীদের কঠোর সাজা হোক।” তাঁর অভিযোগ, এ দিন অবরোধের সময় পুলিশ এমনকী মহিলা পুলিশকর্মীরাও তাঁদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেন। কিশোরের বাবা স্বপন গোস্বামীর দাবি, “আমার ছেলে চোর নয়। পুরনো শত্রুতাবশত ওকে খুন করে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ ছেলে বাড়িতে ফিরছিল। পথে তপন, রাজীব-সব বেশ কয়েক জন কিশোরকে বাইকে চাপিয়ে বাড়ি থেকে কিছু দূরে নিয়ে যায়। ওকে বেঁধে শাবল, লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। মুখ-চোখও বেঁধে দেয়।” কিন্তু পুরনো শত্রুতা কী, তা গোস্বামী দম্পতি ভেঙে বলেননি। |