|
|
|
|
জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে ভোগান্তি বাঁকুড়া মেডিক্যালে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঁকুড়া |
দুর্ঘটনায় জখম যুবকদের চিকিৎসা করানো নিয়ে রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন জুনিয়র ডাক্তাররা। পরে তাঁদের মধ্যে মারামারি হয়। এর পরেই নিরাপত্তার দাবি তুলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোগী দেখা বন্ধ করে দিলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ঘটনাটি ঘটেছে খোদ বাঁকুড়া মেডিক্যালে।
এ দিকে, জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করায় ওই দিন রাত প্রায় ১০টা থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ড চিকিৎসক শূন্য হয়ে পড়ে। রোগীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে। বাঁকুড়ার জয়পুরের তসরারার বাসিন্দা জয়দেব মহান্তি, বাঁকুড়ার মাচানতলার রাজীব দত্তদের অভিযোগ, “প্রসূতি বিভাগে রোগীরা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কিন্তু, তাঁদের দেখার জন্য কোনও চিকিৎসক নেই।” মালিয়াড়ার রাজেশ পরামানিকের অভিযোগ, “শিশু বিভাগে সদ্যোজাত ভাইপোর অক্সিজেন চলছে। চিকিৎসক না থাকায় কী যে হবে, খুব চিন্তায় রয়েছি।” গভীর রাত থেকে কয়েকজন চিকিৎসক ওয়ার্ডে এলেও তাতে রোগীদের ভোগান্তি কমেনি বলে অভিযোগ।
যদিও হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু দাবি করেছেন, “ভুল বোঝাবুঝির জেরে রোগীর আত্মীয়রা কয়েক জন জুনিয়র চিকিৎসকে মারধর করেন। নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে জুনিয়র ডাক্তাররা বৃহস্পতিবার রাত থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে, সিনিয়র চিকিৎসকদের দিয়ে ঘাটতি মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চিকিৎসা করছেন।” |
|
সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ রোগীর আত্মীয়দের। ছবি: অভিজিৎ সিংহ। |
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে কয়েক লোক জখম তিন যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এক যুবকের দাদা কাজল দাস জানান, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে ওই তিন জনকে ভর্তি করানো হয়। এক জনের চোট গুরুতর ছিল। মাথার স্ক্যান করার পর এক্স-রে বিভাগে সেই রোগী ছিলেন। অপারেশন থিয়েটারে থাকা এক শল্য চিকিৎসকের সেই রোগীকে দেখার কথা ছিল। তাঁর অভিযোগ, “অপারেশন থিয়েটারের সামনে আমরা ওই চিকিৎসকের অপেক্ষায় ছিলাম। এক জন চিকিৎসক ভিতর থেকে বের হতেই আমরা জিজ্ঞাসা করি, অপারেশন হল? আমাদের রোগীকে দেখবেন? তিনি কোনও জবাব না দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। তখন বিরক্ত হয়ে বলি, আমাদের সঙ্গে কী কথা বলার প্রয়োজন মনে করেন না? একথা বলার পরেই তিনি আমাদের বলেন, ‘আপনারা কোন হরিদাস পাল?’ এরপরেই আমাদের তর্কবিতর্ক শুরু হয়। অপারেশন থিয়েটার থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে কয়েক জন চিকিৎসক আমাদের একজনের পায়ে কাঁচি চালিয়ে দেন। হোস্টেল থেকে কয়েকশো জুনিয়ার ডাক্তাররা ও ডাক্তারি পড়ুয়ারা এসে আমাদের মারধর করেন।”
এর পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এবং নিরাপত্তার দাবিতে রাতে বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র চিকিৎসকেরা হাসপাতাল সুপারের ঘরে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে অধ্যক্ষ মনোজ চৌধুরী, সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু, ডেপুটি সুপার নিমাইচাঁদ দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ২ ঘণ্টা বিক্ষোভ চলে। জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার পরে রোগীর আত্মীয়রা বিক্ষোভ দেখান।
জুনিয়র চিকিৎসকদের মতামত নিতে গেলে সুপারের অফিসের সামনে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁরা খারাপ ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। ছবি তুলতেও বাধা দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ পরে বলেন, “রোগীর আত্মীয়দের মারে তিন জন জুনিয়র চিকিৎসক জখম হয়েছেন। তাই ওঁদের সঙ্গীরা উত্তেজিত ছিলেন। এর জন্য ওঁদের ভুল বুঝবেন না।”
তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালের হাউসস্টাফ, ইনর্টান ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের চিকিৎসক-সহ ২৩৯ জন কর্মবিরতি পালন করছেন। তাঁদের কাজে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|