শ্রীরামপুর ওয়ালশ
বহু সমস্যায় জর্জরিত শতাব্দী প্রাচীন হাসপাতাল
কেই বোধ হয় বলে, গোদের উপর বিষফোঁড়া। একটু জটিল রোগী এলেই অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়— শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের এই বদনাম দীর্ঘদিনের। তার উপর গত প্রায় সাত মাস ধরে শল্য চিকিৎসকের অভাবে ভুগছে এই হাসপাতাল। ফলে, কলকাতার হাসপাতালে রোগী পাঠানোর সংখ্যাও একলাফে বেড়ে গিয়েছে অনেকটা।
শ্রীরামপুর ওয়ালশ রাজ্যের দ্বিতীয় প্রাচীনতম হাসপাতাল। জন্ম ১৮৩৬ সালে। এর এক বছর আগে তৈরি হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এই বছর ওয়ালশ হাসপাতালের ১৭৫ তম বছর। অথচ বিশেষ এই বছরটি নিঃশব্দে পেরিয়ে যেতে বসেছে। চিকিৎসা পরিকাঠামোর বহর দেখে বছরটি উদ্যাপনের রাস্তায় হাঁটেননি কর্তৃপক্ষ। শ্রীরামপুর মহকুমার সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন হলেও স্রেফ জেলার হাসপাতাল হওয়াতেই কোনও গুরুত্ব পায় না এই হাসপাতালটি। তবে সাধারণ মানুষ চাইছেন, অনুষ্ঠান-টনুষ্ঠান নয় পত্রপাঠ চিকিৎসা ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হোক।
সরকারি নির্দেশ বলছে, রোগী ফেরানো চলবে না। অথচ, এমনটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে এই হাসপাতালের। গত জানুয়ারি মাস থেকে শল্য চিকিৎসকের অভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখানে কমপক্ষে দু’জন শল্য চিকিৎসক প্রয়োজন। দু’জন শল্য চিকিৎসক ছিলেনও। গত জানুয়ারি মাসে তাঁদের মধ্যে সুপ্রভাত জানা কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে বদলি হয়ে যান। তার পরে এক জন চিকিৎসককে অস্থায়ী ভাবে (সুপি ডিউটি) পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতরে চলে যান। সেই থেকে এক জন শল্য চিকিৎসক দিয়েই হাসপাতাল চলছে। এখন সমীরকুমার মণ্ডল একাই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। মাঝে তিনিও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মাস খানেক ছুটি নেন। সেই সময় শল্য চিকিৎসক ছাড়াই হাসপাতাল চলছিল।
হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত সান্যাল বলেন, “সমস্যার কথা স্বাস্থ্যভবন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব দফতরগুলোই জানে। একজন চিকিৎসকের পক্ষে তো সপ্তাহে সাত দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিউটি করা সম্ভব নয়। তাই বেশ কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন এমন রোগীকে কলকাতার পাঠানো ছাড়া উপায় থাকছে না। চিকিৎসক নিয়োগ তো আমাদের হাতে নেই। কবে শল্য চিকিৎসক আসেন, সে দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নেই।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, সম্প্রতি চুঁচুড়া থেকে এক শল্য চিকিৎসককে এই হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ এসেছিল। কিন্তু এর পরেই ‘ডিটেলমেন্ট’ প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের তরফে। ফলে, ওই চিকিৎসক আর আসেননি। জয়ন্তবাবু বলেন, “আমি যেটুকু জানি, তাতে এই হাসপাতালে আসার জন্য দু’জন চিকিৎসকের অনুমোদন হয়ে আছে। কিন্তু তাঁদের জায়গায় অন্য চিকিৎসক না আসায় তাঁরা এখানে আসতে পারছেন না।”
চিকিৎসক ছাড়াও পরিকাঠামোগত নানা ‘রোগে’ ভুগছে হাসপাতালটি। হাজারো অভিযোগ সত্ত্বেও একশ্রেণির নার্স এবং আয়াদের দুর্ব্যবহার মাত্রা ছাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। চিকিৎসায় গাফিলতি এবং দুর্ব্যবহারের জেরে প্রায়ই হাসপাতালে বিক্ষোভ হয়। তবু বদলায় না পরিস্থিতি। গত মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে একটি সদ্যোজাতের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। শিশুটির বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, ভোর ৫টা পর্যন্ত বাচ্চাটি সুস্থই ছিল। এর কিছু পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন প্রসূতি বার বার নার্সদের ডাকলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। কিছুক্ষণের মধ্যে শিশুটির মৃত্যু হয়। ঘটনার পরেই উত্তেজিত বাড়ির লোকজন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।
শিশুটির বাবা রিষড়ার বাসিন্দা রবি মজুমদার বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। সেই কারণেই কী সরকারি জায়গায় এই অবহেলা আমাদের প্রাপ্য? হাসপাতালের গাফিলতিতে আমার বাচ্চাটা মরে গেল। এর পর যদি কেউ হাসপাতালে ভাঙচুর করত, তখন তো আমাদের জেলে ভরা হতো। কিন্তু, যাদের জন্য শিশুটিকে মরতে হল, তাদের সাজা দেবে কে?” অটোচালক রবিবাবু চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এ ব্যাপারে দরবার করতে। শুধু রবিবাবুই নন, নতুন রাজ্য সরকারের কাছে অনেকেরই অনুযোগ, কলকাতার হাসপাতালগুলিতে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং ছুটে গিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু জেলা বা মহকুমা স্তরের হাসপাতালগুলিতে একেবারেই নজর দেওয়া হচ্ছে না। জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবা রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।
এই পরিস্থিতিতে শ্রীরামপুর ওয়ালশে আগের মতোই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দালালরা। ভাড়া গাড়ির সারিতে গ্যারাজের চেহারা নিচ্ছে হাসপাতাল চত্ত্বর। কোনও অটোতে আবার তৃণমূলের পতাকা লাগানো। অভিযোগ রয়েছে কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ, ‘কমিশন’ আদায়ের জন্য এই চিকিৎসকেরা (বিশেষত এক স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ) হাসপাতালে মজুত থাকা ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে বলছেন রোগীর আত্মীয়দের। সুযোগ পেলেই নার্সিংহোমে চিকিৎসার কথাও বলা হচ্ছে রোগীদের।
কবে বদলাবে এই পরিস্থিতি? এটাই এখন জিজ্ঞাসা।
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.