যাঁরা যে উদ্দেশ্যেই বন্ধ ডাকুন, হেনস্থার হাত থেকে সাধারণ মানুষের যে কোনও রেহাই নেইষ শুক্রবারের বন্ধে ফের তা প্রমাণ হয়ে গেল। পাহাড়ে স্বশাসনের প্রতিবাদে আটটি সংগঠনের ডাকা বনধের জেরে এদিনও নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বাগডোগরা বিমান বন্দর, শিলিগুড়ির বিধান মার্কেট থেকে ধূপগুড়ির পাইকারি বাজারে সেই নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ থেকে গ্রামের সবজি চাষিরাই। শাসক দলের নেতাদের সামনেই নিউ জলপাইগুড়িতে ইচ্ছেমতো দাবি করা হল অটোর ভাড়া। ভাড়া নিয়ে প্রতিবাদ করায় মাঝপথেই নামিয়ে দেওয়া হল যাত্রীকে। বন্ধ ব্যর্থ করার স্লোগানের মধ্যেই বাসের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হল যাত্রীদের। এ দিন সবচেয়ে বেশি নাকাল হতে হয় ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামা যাত্রীদেরই। |
এদিন দাজিলিং মেলে কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়িতে নামেন কার্শিয়াঙে কর্মরত রেলকর্মী উমেশ সাউ। তিনি জানান, এনজেপি থেকে শিলিগুড়ি জংশনে পৌঁছতে দু’বার অটোয় চড়তে হয়েছে। মোট ২৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। ওই রেলকর্মী বলেন, “সরকারি কাজে কলকাতায় গিয়েছিলাম। সেখানে ট্যাক্সি ধর্মঘটে নাজেহাল হয়েছি। এ বার শিলিগিুড়িতে বন্ধের পাল্লায় পড়লাম।” এদিন নেপালের কাঁকরভিটায় যাবে বলে বাস টার্মিনাসে সকাল ৮টা থেকে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন বছর আঠারোর তরুণ রাম বিনায়ক। বাস না-পেয়ে হতাশ। হিন্দিতে ওই তরুণ বলেন, “ভেবেছিলাম সরকারি বাস অন্তত পাব। দু’ঘণ্টা হয়ে গেল বাসের দেখা নেই।” তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস থেকে শিবমন্দিরের ভাড়া ২০ টাকা দাবি করায় চম্পাসারির যুবক পেশায় রাজমিস্ত্রি শিবেন দাস তো চালককে মার দিতেই তেড়ে যাচ্ছিলেন। সঙ্গীরা আটকে দেন। তিনি বলেন, “বন্ধ হলেই অটোওয়ালাদের যা খুশি ভাড়া চায়। এসব কী বন্ধ হবে না?” |
একই ঘটনা ঘটে সবজি বাজারেও। ১৫ টাকা দামের লাউ এদিন ৩৫ টাকা দিয়ে কিনে বাড়িতে ফিরেছেন মালবাজারের দীপঙ্কর সরকার। তিনি বলেন, “শুনেছি, পাঁচদিন ধরে বন্ধ চলবে। কিছু খেতে তো হবে!” বনধের জেরে এদিন ক্ষতিগ্রস্ত হন ধূপগুড়ি, ফালাকাটা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষকরা। বহু কৃষক পটল, ঝিঙা, শশা, বেগুন ও কাঁচা লঙ্কার মতো সবজি ফসল মাঠ থেকে তুলে বাজারে আনার গাড়ি না-পেয়ে বিপাকে পড়েন। কিছু কৃষক ভ্যান রিকশায় কোনও মতে ফসল বাজারে আনতে পারলেও ভুটান, শিলিগুড়ি ও বিহারের ব্যবসায়ীরা আসতে না পারায় অবিক্রিতই থেকে যায় বহু পণ্য। ফালাকাটার কৃষক সুভাষ বর্মন বলেন, “গাছ থেকে তোলার এক দিন পরেই লঙ্কা পচে যায়। যাঁরা বন্ধ ডাকেন তাঁরা কী এসব বোঝেন না?” |