পাহাড় চুক্তির প্রতিবাদে ডাকা বনধ পুরোপুরি আটকানো গেল না। যদিও সরকারের তরফে চেষ্টা ছিল যথেষ্টই।
সপার্ষদ গাড়িতে অনুগামীদের নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব দিনভর ঘুরলেন। দোকানবাজার খোলা রাখার আপ্রাণ চেষ্টাও করলেন। এমনকী ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে বাড়ি থেকে ডেকে আনলেন। স্টেশন থেকে ট্রেনযাত্রীদের গাড়ির বন্দোবস্তও করে দিলেন। কিন্তু ওই অবধিই।
শুক্রবার ৮টি সংগঠনের ডাকা বন্ধের জেরে উত্তরবঙ্গের একাংশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল। যাতায়াতের মাধ্যম বলতে হাতে গোনা গুটি কয়েক সরকারি বাস এবং অটোরিকশা। তবে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর আদিবাসী বিকাশ পরিষদ কাল, রবিবার বন্ধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আজ, শনিবার তরাই-ডুয়ার্সের বন্ধে চা বাগানকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এ দিন সকাল ৯টাতেই এনজেপি স্টেশনে পৌঁছন মন্ত্রী। সরকারি বাসের ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। স্টেশনের ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে দার্জিলিং মেল, কাঞ্চনকন্যা, পদাতিক এক্সপ্রেসের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের যাতায়াতের ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন।
১০টা নাগাদ মন্ত্রী হিলকার্ট রোডের হাসমিচক থেকে মহানন্দা সেতু লাগোয় মোড় পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটি দোকান ও অফিস খোলার আবেদন করেন। মন্ত্রীর আশ্বাসের পরেও অবশ্য বেশি দোকানপাট খোলেনি। এক ব্যবসায়ী বলেন, “মন্ত্রী বলছেন ঠিকই, কিন্তু কোনও ক্ষতি হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যাব।” গৌতমবাবুর অবশ্য দাবি, “বন্ধ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সকাল থেকে আমরা মানুষের পাশে ছিলাম। সিপিএমের প্ররোচনা মানুষ
প্রত্যাখ্যান করেছেন।” |
এ দিন হাসমিচক থেকে ৩ জন বন্ধ সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, “বন্ধে কোথাও কোনও গণ্ডগোল হয়নি। ৩ জন বন্ধ সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে।” শিলিগুড়ি পুরসভায় অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। পুরসভা লাগোয়া এলাকায় কয়েকটি দোকান খোলা ছিল। তৃণমূল জেলা কংগ্রেস দফতর এলাকায় একটি মাত্র স্টেশনারি দোকান ছাড়া সব কিছু বন্ধ ছিল। সকালে সাড়ে ১০টা অবধি তৃণমূল অফিস তালাবন্ধ দেখা গিয়েছে।
সকাল ৮টা নাগাদ শিলিগুড়ি জংশনের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাসে গুটি কয়েক সরকারি বাস ছাড়া কিছুই ছিল না। বেসরকারি বাসস্ট্যান্ড সুনসান। পেট্রোল পাম্প বন্ধ। স্থানীয় বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য হিলকার্ট রোডে একটি দোকান খোলান। গৌতমবাবু বলেন, “এক জন ম্যানেজারকে বাড়িতে থেকে তুলে এনে ব্যাঙ্ক খোলাতে হল।”
বন্ধে ময়নাগুড়িতেও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় নাকাল হয়েছেন মানুষ।
মালবাজারে এ দিন বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নামেন জনজাগরণের সদস্যরা। পাল্টা রাস্তায় নামেন তৃণমূল এবং কংগ্রেস কর্মীরাও। দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে রাস্তায় তর্কাতর্কিও হয়। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। জনজীবন কিন্তু বিপর্যস্ত হয়েছে।
জলপাইগুড়িতে বেসরকারি বাস চলাচল করেনি, সরকারি বাস ছিল হাতেগোনা। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন বা রোড স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলিতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। শহরের বেশ কিছু বাজার এলাকার দোকানপাট বন্ধ ছিল। জেলাশাসকের দফতরে কর্মীদের হাজিরা ছিল কম। ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ চা বলয়ে অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সচিব অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “চা বাগানগুলিতে শ্রমিকরা অন্য দিনের মতো কাজ করেছেন।”
কোচবিহার শহরে বন্ধ হয়েছে। দোকানপাট কিছু বন্ধ ছিল। গাড়ি কম চলাচল করে। ৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জেলার অন্য মহকুমায় বন্ধের প্রভাব পড়েনি। আলিপুরদুয়ারে বেসরকারি পরিবহণ ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। সরকারি অফিস খোলা ছিল। কালচিনি ব্লকের জয়ঁগা শহর ও আলিপুরদুয়ার জংশন এলাকায় দোকানপাট আংশিক খোলা ছিল। দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর এবং মালদহে কোনও রকম বন্ধই হয়নি। |