|
|
|
|
৩ নেতাকে মুক্তি দিলে কথা, ধন্দ মাওবাদীদের নয়া প্রস্তাবে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরাতে মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনার কথা বার বার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনার জন্য সরাসরি নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ারও আহ্বান রেখেছেন। এত দিন সেই ডাকে তেমন সাড়া মেলেনি। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে পৌঁছনো মাওবাদী নেতা বিক্রমের এক বিবৃতিতে আলোচনার এক নতুন শর্ত রাখা হয়েছে। জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘আংশিক’ (৯০ শতাংশ তা তার ‘কিছুটা কম’) প্রত্যাহার এবং আপাতত তিন নেতাকে মুক্তি দিলেই আলোচনা শুরু সম্ভব বলে জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতাসীন হওয়ার সময় থেকে মাওবাদীরা প্রায় দু’মাস ধরে একতরফা ‘যুদ্ধবিরতি’ পালন করছে বলেও দাবি করা হয়েছে। যে তিন জেলবন্দি নেতাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে, তাঁরা মাওবাদী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পতিতপাবন হালদার এবং দলের দুই প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক হিমাদ্রি সেন ওরফে সোমেন এবং সুদীপ চোঙদার ওরফে কাঞ্চন। বন্দিমুক্তির প্রথম পর্যায়ে এই তিন নেতাকে মুক্তি দিয়ে তাঁদের সঙ্গেই আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিক্রমের বিবৃতিতে।
মাওবাদী সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক আকাশ দু’দিন আগেই বিবৃতিতে জঙ্গলমহল সফরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত উন্নয়ন ‘প্যাকেজ’ও কার্যত খারিজ করে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান সত্ত্বেও অস্ত্র সমপর্ণ যে তাঁরা করবেন না, তা-ও জানান আকাশ। জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী ‘পুরোপুরি’ প্রত্যাহার ও ‘সব’ রাজনৈতিক বন্দির ‘নিঃশর্ত’ মুক্তি ছাড়া আলোচনাই যে সম্ভব নয়, তা-ও জানানো হয় আকাশের বিবৃতিতে। সংগঠনের সম্পাদকের সেই অবস্থানের থেকে ভিন্ন সুরেই নতুন বিবৃতি দেন বিক্রম। যিনি মূলত পুরুলিয়ায় সক্রিয় বলেই গোয়েন্দাদের বক্তব্য।
বিক্রমের এই ‘আলোচনাপন্থী’ অবস্থান মাওবাদী সংগঠনের মধ্যেই বা কতদূর গ্রাহ্য, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে। আকাশ এবং বিক্রমের বিবৃতির ‘ফারাক’ অন্তত এ রাজ্যে মাওবাদী সংগঠনে একাধিক মত ও ভিন্ন-ভিন্ন শিবিরের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে সুবিধা এবং অসুবিধাদু’রকমই রয়েছে বলে মনে করছেন জঙ্গলমহলে দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনিক কাজে যুক্ত অফিসারেরা। তাঁদের বক্তব্য, সংগঠনে বিভাজন মাওবাদীদের অপেক্ষাকৃত দুর্বল করবে। তার সুযোগ নিয়ে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব মজবুত করা সম্ভব। এটা যদি প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সুবিধা’ হয়, তা হলে সমস্যা অন্য জায়গায়। কোনও সংগঠনের কেন্দ্রীয় অবস্থান না থাকলে আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। যাদের নিয়ে কেন্দ্রও চিন্তিত, সেই মাওবাদীদের কোনও এক রাজ্যের এক স্থানীয় পর্যায়ের নেতার আলোচনার পক্ষে বিবৃতির মূল্য কতটা, সে নিয়েও সংশয় রয়েছে। মাওবাদীরা কৌশলগত ভাবে দু’ধরনের অবস্থান নিচ্ছে কি না, সে নিয়েও সন্দিহান কোনও কোনও মহল। পুলিশের একাংশের সন্দেহ, আলোচনা নিয়ে আপাত ভিন্ন অবস্থানের আড়ালে জঙ্গলে নিজেদের সংগঠিত করতে সময় নিচ্ছে মাওবাদীরা।
জঙ্গলমহলে ফের রাতের ট্রেন চালু করার উদ্যোগকেও স্বাগত জানান বিক্রম। সরকারের কাছে তা বিশেষ ইতিবাচক। এমনকী তাদের ‘গেরিলাবাহিনী জঙ্গলপথে ট্রেনের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে’ বলেও ঘোষণা করেন এই মাওবাদী নেতা। |
|
|
|
|
|