তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব
অশোকনগরের কলেজে বিঘ্নিত পঠনপাঠন
বিধানসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অশোকনগরের নেতাজি শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ে পঠনপাঠন বিঘ্নিত হচ্ছে। শুক্রবারেও ফের গোলমাল হল ওই কলেজে। সকালে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকেরা কলেজে জড়ো হয়। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার কয়েক জন কাউন্সিলরকেও সেখানে দেখা যায়। দু’পক্ষই স্লোগান দিতে থাকে। তা থেকে ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। ওই সময়ে কলেজে প্রথম বর্ষের অনার্সের ক্লাস চলছিল। বহু ছাত্রছাত্রী ভয়ে কলেজ ছেড়ে চলে যান।
অধ্যক্ষ সুধানাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পর পর দু’দিন কলেজে গণ্ডগোলের জেরে পড়ুয়ারা ভয়ে পালিয়ে যান। পঠনপাঠন বিঘ্নিত হয়েছে। কলেজে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। বহিরাগতদের ঢোকা বন্ধ করতে নিরাপত্তা কর্মী প্রয়োজন। নিয়োগের ব্যাপারটি পরিচালন সমিতির বিচারাধীন। কিন্তু রাজ্যপালের নির্দেশে এখন কলেজে কোনও নিয়োগ করা যাবে না।” এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অশোকরঞ্জন ঠাকুর বলেন, “আমি ওই কলেজের অধ্যক্ষের কাছে যাবতীয় ঘটনার খোঁজ নিচ্ছি। ক্লাস যাতে নিয়মিত হয়, তার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারও কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বহিরাগত কয়েক জন যুবকের হাতাহাতি হয়। এক তৃণমুল ছাত্র পরিষদ সদস্য জখম হন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, আগে সিপিএম করত, বর্তমানে তৃণমূলে এমন কিছু বহিরাগতই ওই গণ্ডগোলে জড়িত। ওই কলেজে রাজনৈতিক গণ্ডগোল অবশ্য মাত্র দু’দিনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এসএফআইয়ের সঙ্গে গোলমাল হত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। নির্বাচনের পরে তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসায় এখন কলেজে এসএফআইয়ের কাউকে খুঁজে পাওয়াই ভার। বহু এসএফআই কর্মী তৃণমূল ছাত্র পরিষদে চলে গিয়েছেন। কিন্তু তাতে গোলমাল থামেনি। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রেশ এসে পড়ছে কলেজে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দিনই গোলমাল বেঁধেছে।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, কলেজে ছাত্র পরিষদের উপরে প্রভাব কার বেশি থাকবে, তা নিয়েই দ্বন্দ্ব অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার দলীয় চেয়ারম্যান সমীর দত্ত এবং ভাইস-চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকারের অনুগামীদের। এ কথা অবশ্য ওই দু’জন মানতে চাননি। সমীরবাবু গণ্ডগোলের জন্য অধ্যক্ষকে দায়ী করেছেন। সমীরবাবু বলেন, “বহিরাগতদের কলেজে ঢোকা বন্ধ করতে পারলেই গণ্ডগোল মেটা সম্ভব। অধ্যক্ষকে বারবার বলা সত্ত্বেও তিনি উদ্যোগী হচ্ছেন না। পরিচালন সমিতির বৈঠকও ডাকছেন না।” প্রবোধবাবু বলেন, “কলেজে বারবার গণ্ডগোল অনভিপ্রেত। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ সব চলতে পারে না।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, “কলেজে এই পরিস্থিতির জন্য পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান বা বিধায়ক কারও ভূমিকাই পরিচ্ছন্ন নয়। সকলে মিলে আলোচনা করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সঞ্জয় রাহা বলেন, “অশোকনগরের এক তৃণমূল নেতা কলেজে নিজের প্রভাব বাড়ানোর জন্য গণ্ডগোল পাকাচ্ছে।” ওই নেতার নাম অবশ্য তিনি জানাতে চাননি।
শুক্রবারের গোলমালের সময়ে কলেজে থাকা তৃণমূল কাউন্সিলর অতীশ সরকার বলেন, “গণ্ডগোলের খবর শুনে ঠেকাতে যাই। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতির দুর্বল নেতৃত্বের জন্যই কলেজে গণ্ডগোল হচ্ছে। অবিলম্বে রাজ্য নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। না হলে গোলমাল থামানো যাবে না।” কলেজে গোলমাল বরদাস্ত করা হবে না জানিয়ে জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “কাল, রবিবার মধ্যমগ্রামে দলের জেলা কার্যালয়ে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হবে।”
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.