|
|
|
|
পাকা রাস্তা মেলেনি, হাঁটুজল পেরিয়ে স্কুলে যায় পড়ুয়ারা |
নির্মল বসু • বাদুড়িয়া |
কখনও হাঁটু জল পার হয়ে, কখনও পাট খেতের মধ্য দিয়ে স্কুলে পৌঁছতে হয় ওদের। আর এ ভাবে যেতে গিয়ে ছোটখাট দুর্ঘটনা প্রায় লেগেই থাকে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে আড়াই কিলোমিটার হেঁটে ওই পথেই স্কুলে আসে পড়ুয়ারা। না হলে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে স্কুলে আসতে হবে। সে আরও যন্ত্রণার। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার নয়াবস্তিয়া মিলনি পঞ্চায়েতের মেদিয়া হাইস্কুলে এ ভাবেই যাতায়াত করতে হয় কাঁকড়াসুতি গ্রামের ছেলেমেয়েদের।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, “মাঠের পথ বিপজ্জনক। বর্ষার সময়ে মাটির রাস্তায় আছাড় খেতে হয়। স্কুলে আসতে গিয়ে জলকাদায় মাখামাখি হওয়ায় প্রায় অনেকেই নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না। স্কুলে এসে অথবা মাঝপথ থেকে বাড়ি চলে যায়। স্কুলের ছাত্রচাত্রীদের কথা ভেবে একটা পাকা রাস্তা তৈরি হলে ভাল হয়।”
ইছামতী নদীর পাড় ঘেঁসে কাঁকড়াসুতি। গ্রামের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে মেদিয়া হাইস্কুলে। গ্রাম থেকে স্কুলে যাওয়ার একটি রাস্তা রয়েছে। তবে তা কাঁচা। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষ দাবি জানালেও রাজনৈতিক টালবাহনায় রাস্তা আর পাকা হয়নি। বছরের অন্য সময় কোনওভাবে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষার সময়ে পিচ্ছিল ওই পথ পার হয়ে স্কুলে যেতে নাকাল হতে হয় পড়ুয়াদের। রাস্তার অবস্থার কথা ভেবে সময়ে স্কুলে পৌঁছতে কয়েক ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। পিচ্ছিল, কোখাও কোথাও জলে ডোবা পথে আছাড় খেয়ে হাত-পা ভাঙার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সব জানা সত্ত্বেও নিরুপায় পড়ুয়াদের ওই পথেই স্কুলে যেতে হচ্ছে। |
|
জলে ডোবা এমন রাস্তা দিয়েই স্কুলের পথে পড়ুয়ারা।--নিজস্ব চিত্র। |
কারণ তা না হলে যে বিকল্প রাস্তা রয়েছে সেই পথ ধরলে স্কুলে পৌঁছতে আরও দেরি হয়ে যাবে। অন্যদিকে, মাঠের মধ্য দিয়ে গিয়ে সোজাসুজি স্কুলে পৌঁছনো যায়। যদিও বছরের অধিকাংশ সময় মাঠে ফসল থাকে। বিশেষ করে বর্ষার সময় পাট চাষের জন্য সরু আলপথ বেশ বিপজ্জনক। দুষ্ট লোকের ভয়ের পাশপাশি রয়েছে সাপ ও বিষাক্ত পোকার ভয়। রয়েছে পা পিছলে জলে পড়ে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। তবুও সময় কম লাগার জন্য ওই আলপথই ভরসা কাঁকড়াসুতির ছেলেমেয়েদের। আর ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকেন বাবা-মায়েরা। নবম শ্রেণির ছাত্রী নাসরিন সুলতানা, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তুহিনা খাতুন বলে, “দু’ধারে মাথা ছাড়িয়ে বেড়ে ওঠা পাটগাছের মধ্যে সরু আলপথ দিয়ে স্কুলে আসতে গা ছমছম করে। সাপ-পোকার ভয় রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাস্তা খারাপের কারণে ওই পথ ধরতে হয়।” সপ্তম শ্রেণির আশিক মণ্ডল, অষ্টম শ্রেণির রাকিবুল বলে, “জল-কাদায় মাখামাখি ঘুরপথ পেরিয়ে স্কুলে যেতে গেলে সকালে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। রাস্তার যা অবস্থা তাতে নিশ্চিত করে বলা যায় না কখন স্কুলে পৌঁছতে পারব। প্রায়ই পা পিছলে জলে হাবুডুবু খেতে হয়। জামাকাপড়, বইখাতা ভিজে যায়। তখন ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরি। গ্রামে একটা পাকা রাস্তা হলে ভাল হয়।” অভিভাবকদের পক্ষে জিয়ারুল মণ্ডল, হালিমা বিবিরা বলেন, “একে ফাঁকা মাঠ, তার উপরে পাট গাছের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কখন যে কী হয় সেই ভয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকা যায় না।” অভিভাবকদের আশঙ্কা যে একেবারেই অমুলক নয়, তার প্রমাণ কয়েক দিন আগে এক ছাত্রীর উপরে পাটখেতের মধ্যে হামলার চেষ্টা হয়েছিল বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, “রাস্তা পাকা করার জন্য অনেক দিন ধরেই ইটের খোয়া জড়ো করে রাখা রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েনে সেই খোয়া আর রাস্তায় পড়েনি। এ ব্যাপারে বিডিওকেও জানানো হয়েছে।”
|
|
|
|
|
|