|
|
|
|
প্রশাসনের উপেক্ষায় বেহাল ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্যবন্দর |
দিলীপ নস্কর • নামখানা |
বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্যতম প্রধান মৎস্যবন্দর ফ্রেজারগঞ্জ। দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট দফতর-সহ প্রশাসনের সর্বত্র জানানো হলেও সমাধানের জন্য কোনওরকন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের এবং ট্রলার মালিকদের।
১৯৯৫ সালে নামখানার অমরাবতী গ্রামের কাছে এডওয়ার্ড ক্লিক নদীর পাশে এই মৎস্য বন্দর গড়ে ওঠে। প্রায় ১০০ বিঘা জমির উপরে গড়ে ওঠা এই মৎস্য বন্দরের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। এলাকার অধিকাংশ ট্রলার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে এই বন্দর থেকেই তেল, জল খাবার নিয়ে যায়। মাছ ধরার পরে ট্রলারগুলি আবার ফিরে আসে এই বন্দরেই। বন্দরে মাছ নামিয়ে জাল বা ট্রলার মেরামতির পরে ফের সেগুলি রওনা হয় গভীর সমুদ্রে।
|
|
কিন্তু নামখানার ফ্রেজারগঞ্জে এই মৎস্য বন্দর উদ্বোধনের কয়েক বছর পর থেকেই উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমশ বেহাল হয়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বন্দরে ট্রলার মেরামতির জন্য তৈরি করা হয়েছিল ড্রাই ডক। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। ট্রলার মেরামতি নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন ট্রলার মালিকেরা। বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কোনওরকমে মেরামতির কাজ করিয়ে ফের ট্রলারগুলি সমুদ্রে চলে যাচ্ছে। এর ফলে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে। বর্তমানে বন্দরে কংক্রিটের যে পাকা ব্রিজটি রয়েছে তাও বেশ বিপজ্জনক। ওই ব্রিজের গায়েই বাঁধা থাকে ট্রলারগুলি। ব্রিজের গায়ে ট্রলারগুলি বাঁধার সময় ধাক্কা লেগে যাতে সেগুলির ক্ষতি না হয় সে জন্য মোটা টায়ার (গাড়ির চাকা) লাগানো থাকে। কিন্তু ব্রিজের অধিকাংশ জায়গাতেই তা প্রায় নেই বললেই চলে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে কিছুদিন সেখানে থাকতে হয় ট্রলারগুলিকে। সে ক্ষেত্রে ধরা মাছ সংরক্ষণের জন্য ট্রলারগুলি প্রচুর বরফ নিয়ে যায়। অথচ ট্রলারের সংখ্যা অনেক হলেও বন্দরে একটিই মাত্র বরফ তৈরির কল রয়েছে। ফলে সব ট্রলারকে ঠিকমত বরফের জোগান দেওয়া যায় না।
বন্দর এলাকাতেই মাছের নিলামের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সেই জায়গার অবস্থা খুবই শোচনীয়। বৃষ্টি হলে জলে ডুবে যায়। এ ছাড়া পানীয় জল, শৌচাগার, আলোর ব্যবস্থাও খারাপ। মৎস্য বন্দরের মধ্যে পাকা রাস্তার হালও অত্যন্ত খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। ট্রলার থেকে মাছ নামামোর পরে তা প্যাকিং করে রাখার জন্য শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গুদামঘরটিও বন্ধ। |
|
নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ অজয় পাত্র জানান, ওই বন্দর লাগোয়া নদীতে প্রতিবছর মাছ ধরার মরসুমে কয়েক হাজার ট্রলার ওই বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে যায়। গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীরা বিপদে পড়লে তা জানানোর জন্য বন্দর লাগোয়া জায়গায় তৈরি হয়েছিল অয়্যারলেস সেন্টার। কিন্তু তা আর চালু হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং ট্রলার মালিক শচীন মাইতি বলেন, “বন্দরের পরিকাঠানো অত্যন্ত বেহাল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে এই বন্দরই ব্যবহার করতে হচ্ছে। বন্দরের পরিকাঠামোর উন্নয়নে প্রশাসনেরও কোনও উদ্যোগ নেই। ফলে ভুগতে হচ্ছে সমস্ত মৎস্যজীবী এবং ট্রলার মালিকদের।”
নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কুমারেশ পণ্ডা বলেন, “রাজ্য সরকারের ওই মৎস্যবন্দরটির হাল ফেরাতে গত ২৩ জুন মৎস্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। বন্দর দ্রুত সংস্কার করা না হলে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়বেন মৎস্যদীবীরা।” তাঁর দাবি, মৎস্যবন্দর তৈরির সময় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার জমির মালিকদের কাছ থেকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে জমি নিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বহু ক্ষেত্রেই রাখা হয়নি।
নামখানার ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্যবন্দরের বেহাল অবস্থা নিয়ে মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনা বলেন, “এই বন্দরের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|
--নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|