আঙু্ল রেজ্জাকের দিকে
বাটার জমি-চুক্তিতে প্রশ্ন প্রাক্তন জেলাশাসকের
চুক্তি হয়েছে ৫ বছর আগে। বাম-জমানায় স্বাক্ষরিত সেই বাটা কারখানার জমি-চুক্তিতে ‘স্বচ্ছতার’ প্রশ্ন তুলে এত দিনে নতুন সরকারকে চিঠি দিলেন এক আইএএস অফিসার!
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাটানগরে বাটা কারখানার ফাঁকা জমি বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রির পরেও রাজ্য তার একাংশ কী ভাবে ‘উপহার’ হিসেবে ফিরিয়ে নিল, তদানীন্তন জেলাশাসক খলিল আহমেদকে তার কারণ দর্শাতে বলেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিসংস্কার দফতর। জবাবে ওই আইএএস বৃহস্পতিবার যে ন’পাতার চিঠি দিয়েছেন, তার ছত্রে ছত্রে মূল চুক্তিটি নিয়েই গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ প্রকট। যার প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের অবকাশ আছে কি না, সরকার আপাতত খতিয়ে দেখছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
বাটা কারখানার ৩০৯ একর খাস জমি নিয়ে রাজ্য চুক্তি করেছিল ২০০৬-এর এপ্রিলে। চুক্তি মোতাবেক, এর ২৬২ একর বিক্রি (ফ্রি হোল্ড) করা হয় বাটার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের সংস্থা রিভারব্যাঙ্ক হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিটেডকে, উপনগরী গড়ার জন্য। বাকি ৪৭ একর কর্মী-আবাসন তৈরির জন্য বাটাকে দেওয়া হয়। এ বাবদ সরকার পেয়েছিল মোট দেড়শো কোটি টাকা। কিন্তু তার ১০০ কোটি আবার কারখানা-সংস্কার ও আবাসনের খরচ হিসেবে বাটাকেই দিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি জমির দামে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ছাড় (কনসেশন) পায় রিভারব্যাঙ্ক। ফলে ৩০৯ একর খাস জমির বিনিময়ে রাজ্যের কোষাগারে আসে সাকুল্যে ১২ কোটির কিছু বেশি। রিভারব্যাঙ্ককে বিক্রি করা জমির মধ্যে স্কুল ও হাসপাতালও ছিল, যেগুলির অস্তিত্ব ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ে। এতে স্থানীয় স্তরে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে রিভারব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনায় বসে রাজ্য। শেষমেশ চুক্তির প্রায় চার বছর পরে, বিক্রি করা ২৬২ একরের মধ্য থেকে ১৩.২ একর রাজ্য ফিরিয়ে নেয় স্কুল-হাসপাতালের স্বার্থে। এর জন্য প্রয়োজনীয় দু’টো চুক্তিও হয়, সরকারি পরিভাষায় যার নাম ‘গিফ্ট ডিড।’ অর্থাৎ ‘উপহার’ হিসেবে সরকার তা ফেরত নেয়।
আর এই ‘উপহার-চুক্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলে গত জুনে খলিলকে ‘শো-কজ’ করে ভূমি দফতর। কারণ ‘গিফ্ট ডিড’ যখন হয়, ২০১০-এর সেই জানুয়ারিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ছিলেন খলিলই। সরকারের তরফে তিনিই চুক্তি দু’টোয় সই করেন। সরকারি সূত্রের খবর: কারণ দর্শানোর চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মূল চুক্তি নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি (জিও) থাকা সত্ত্বেও কেন তা অগ্রাহ্য করে জমি ফেরত নেওয়া হল? বর্তমানে রাজ্যের ‘মাইক্রো অ্যান্ড স্মল স্কেল এন্টারপ্রাইস’-এর ডিরেক্টর খলিল শো-কজের উত্তরে জানিয়েছেন: মূল চুক্তি হওয়ার পরেই বেসরকারি সংস্থাটি (রিভারব্যাঙ্ক) বাটানগর হাসপাতাল ভেঙে দেয়। তাদের কেনা জমিতে থাকা দু’-দু’টো সরকারি স্কুলও তারা ভাঙতে চেয়েছিল। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। তদানীন্তন ভূমিমন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে দু’টো স্কুলের জমি ও একটি নতুন হাসপাতাল তৈরি বাবদ ওই ১৩.২ একর ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মন্ত্রীর নির্দেশেই জেলা কালেক্টর হিসেবে তিনি সেই চুক্তিতে সই করেন বলে সরকারকে জানান খলিল। শো-কজের জবাব দিতে গিয়ে খানিকটা উপযাচক হয়ে ২০০৬-এর মূল চুক্তি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে কার্যত প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন প্রাক্তন জেলাশাসক। কী লিখেছেন তিনি?
বস্তুত বাটা-চুক্তিতে ‘বিধিভঙ্গের’ একাধিক অভিযোগ খলিলের। যেমন,
l চুক্তিতে ২৬২ একর খাস জমির ‘ফ্রি হোল্ড’ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ মালিকানা। সল্টলেকেও যা দেওয়া হয়নি।
l এলাকাবাসীকে বিভিন্ন সামাজিক পরিষেবা দেওয়ার জন্য বেসরকারি সংস্থাটিকে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ‘ছাড়’ দেওয়া হলেও হাসপাতাল বা স্কুলে কোনও ‘ফ্রি বেড’ বা ‘ফ্রি সিট’ রাখার কথা চুক্তিতে নেই। বিভিন্ন পরিষেবা ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণের সংস্থানও রাখা হয়নি। উল্টে চুক্তিতে বলা হয়েছে ‘ওপেন টু লোকাল পাবলিক’-এর কথা। খলিলের মতে, যা ‘ফ্যালো করি মাখো তেল’ নীতি ছাড়া কিছুই নয়।
l ৩০৯ একরের মোট দাম কী করে দেড়শো কোটি টাকা হল, তা ভূমিসংস্কারের ফাইলেও জানানো হয়নি। প্রাক্তন জেলাশাসকের মতে, তখনকার বাজারদর অনুযায়ী বাটানগরের ওই ৩০৯ একরের বিনিময়ে সরকারের প্রাপ্য ছিল অন্তত ৩৫৪ কোটি। অথচ রাজ্যের ঘরে এসেছে মাত্র ১২ কোটি ২২ লক্ষ!
l চুক্তির কয়েক বছর পরেও ভূমি দফতর খতিয়ে দেখেনি যে, বাটাকে দেওয়া ১০০ কোটি টাকা ঠিক কাজে খরচ হল কি না।
l তথ্য-প্রযুক্তি পার্কের জন্য জমি ফেরত চাওয়া হলেও বেসরকারি সংস্থাটি দেয়নি।
উপরন্তু বেচে দেওয়া ওই জমিতে স্কুল-হাসপাতাল থেকে শুরু করে ধর্মীয় স্থান-খেলার মাঠ-ময়দান-বস্তি-মাছের বাজার, মায় কেএমডিএ-রও পরিকাঠামো ছিল বলে জানিয়ে চুক্তির ‘স্বচ্ছতা’ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন জেলাশাসক খলিল আহমেদ।
বাটার জমি-চুক্তি নিয়ে এ বার কি তদন্ত হবে? রাজ্যের ভূমি-সচিব আর ডি মিনা বলেন, “সংশ্লিষ্ট ফাইল খতিয়ে দেখছি। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লার প্রতিক্রিয়া, “এখন কিছু বলব না। তদন্ত কমিটি হলে জানাব।” রিভারব্যাঙ্ক হোল্ডিংয়ের অধিকর্তা সুমিত ডাব্রিয়ালের বক্তব্য, “চুক্তি করে জমি পেয়েছি। এমনকী, সরকার যে জমি ফেরত নিয়েছে, তারও গিফ্ট ডিড হয়ে গিয়েছে। আমাদের জোরকদমে।” কিন্তু এত কম টাকায় জমি পেলেন কী করে? সুমিতের জবাব, “এ নিয়ে মন্তব্য করব না।”
First Page South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.