|
|
|
|
কালকা-দুর্ঘটনা |
জ্ঞান ফিরতে দেখলাম ডান হাতটাই নেই, বললেন যাত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
দুপুরে স্ত্রী, বড় ছেলে, বউমাকে নিয়ে সবেমাত্র খেতে বসেছিলেন শিবু সর্দার। সেই সময়ে উঠোনে এসে দাঁড়ায় ছোট ছেলে প্রসেনজিৎ। কিন্তু তাঁর তো এখন দিল্লিতে থাকার কথা! বিধ্বস্ত প্রসেনজিতকে দেখে তাই চমকে উঠেছিলেন শিবুবাবু এবং পরিবারের অন্যরা। ছেলের দিকে এগিয়ে যেতেই চোখ যায় প্রসেনজিতের ডান হাতের দিকে। কব্জির উপর থেকে হাতটাই নেই। ব্যান্ডেজ বাঁধা।
বুধবার দুপুরে কাটা হাত নিয়ে বাড়ি ফিরলেন অভিশপ্ত কালকা মেলের যাত্রী প্রসেনজিৎ সর্দার। তেহট্টের নফরচন্দ্রপুরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ কালকা মেলে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন। ইচ্ছে ছিল রাজমিস্ত্রির কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ফেরানো। তা তো হলই না বরং দুর্ঘটনায় কাটা গেল ডান হাত। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে একটাই চিন্তা, “ডান হাতটাই নেই। সারাজীবন খাব কি করে?” এ দিন বাড়ি ফিরতেই তাঁকে ভর্তি করানো হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে।
গ্রামে দিনমজুরি করতেন প্রসেনজিৎ। প্রতিবেশীদের কয়েকজন দিল্লিতে দিনমজুরের কাজ করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনিও পাড়ি দিয়েছিলেন দিল্লিতে। প্রথমবার দূরপাল্লার ট্রেনে চড়া। কোনও সংরক্ষণ নেই। সাধারণ টিকিট কেটে যাত্রা। বসার জায়গা মেলেনি। ট্রেনে দাঁড়িয়েই ছিল সে। আচমকা কি যে হল! হাসপাতালে শুয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, “কিছুই বুঝতে পারিনি। একটা ঝাঁকুনি লাগল তারপরই সব অন্ধকার। জ্ঞান ফিরতে দেখি হাসপাতালে শুয়ে আছি। হাতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা। পরে দেখি ডান হাতটা কাটা গিয়েছে।”
এ দিকে, দুর্ঘটনায় প্রসেনজিতের আহত হওয়া তো দূরের কথা এতবড় একটা ঘটনার কথা জানতেনই না প্রসেনজিতের বাড়ির লোক। প্রসেনজিতকে দেখে তাই চমকে ওঠেন শিবুবাবু। তিনি বলেন, “আমরা মূর্খ মানুষ। ছেলে কোন ট্রেনে চেপেছিল সেটাই জানতাম না। শুধু বলেছিল ও দিল্লি যাচ্ছে। এমন দুর্ঘটনার কথা কেউ আমাদের জানায়নি।” রবিবার দুর্ঘটনার পর প্রসেনজিতকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্থানীয় একটি হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসা হয়। ডান হাতের কব্জির উপর থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয়। পরে ‘রিলিফ’ ট্রেনে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বর্ধমান স্টেশনে। সেখান থেকে পুলিশের গাড়ি বুধবার তাঁকে পৌছে দেয় বেতাই বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে ভ্যানে বাড়ি পৌছন প্রসেনজিৎ। দুর্ঘটনায় জখম হলেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি তিনি। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য কৃষ্ণনগর স্টেশন ম্যানেজারকে চিঠি লিখেছেন শিবুবাবু। কৃষ্ণনগর উপ-স্টেশন অধিকর্তা রজত রায় বলেন, “ছেলেটির যাতে উপযুক্ত চিকিৎসা হয় সে জন্য কলকাতার হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা পায় সে জন্য উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।” |
|
|
|
|
|