লক্ষ্য আদিবাসী উন্নয়ন
ল্যাম্পস পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা
দিবাসী উন্নয়নের লক্ষ্যেই তৈরি হয়েছিল ল্যাম্পস (লার্জ সাইজড এগ্রিকালচারাল মাল্টিপারপাস সোসাইটি)। ল্যাম্পসকে আদিবাসীদের নিজস্ব সম্পত্তি হিসাবে ভাবতে শেখানোরও প্রচেষ্টা হয়েছিল। পরে অবশ্য রাজনীতির আবর্তে বেশিরভাগ ল্যাম্পস-ই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়। ফের ল্যাম্পসকে কেন্দ্র করেই আদিবাসী উন্নয়নে উদ্যোগী হল প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গ তফসিলি জাতি ও উপজাতি বিত্তনিগমের পশ্চিম মেদিনীপুরের ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার জ্যোতির্ময় তাঁতি বলেন, “পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে ল্যাম্পস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কয়েকটি ল্যাম্পস তা করছেও। প্রতিটি ল্যাম্পসকেই যাতে ওই কাজে ব্যবহার করা যায় এ বার তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ২১টি ল্যাম্পস রয়েছে। তার মধ্যে চারটি বন্ধ। বেলপাহাড়ির গিদিঘাটি ও কাঁকড়াঝোর ল্যাম্পস মাওবাদী বাড়বাড়ন্তের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওই দু’টি ল্যাম্পস ছিল সিপিএমের প্রভাবাধীন। দলীয় নেতৃত্ব এলাকা ছাড়ার পরেই ল্যাম্পস দু’টি বন্ধ হয়ে যায়। গড়বেতা-১ ব্লকের একটি ল্যাম্পস কর্মীর অভাবে দীর্ঘ দিন বন্ধ। অভিযোগ, সিপিএমের নির্দেশেই ওই ল্যাম্পস খোলার ব্যবস্থা করতে পারেনি প্রশাসন। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই অধিকাংশ সিপিএম নেতা এলাকা ছেড়েছেন। ফলে, বন্ধ গড়বেতা-৩ ব্লকের ল্যাম্পসও। এটি আবার সিপিএম কার্যালয়েই চলত। প্রথমে চন্দ্রকোনা রোডে একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে শুরু হলেও পরে ল্যাম্পসটি সিপিএমের নয়াবসত পার্টি অফিসে উঠে যায়। কী ভাবে এমন ঘটল, প্রশাসনই বা কেন পার্টি অফিসে ল্যাম্পস চালানোর অনুমতি দিল, তার সদুত্তর মেলেনি। যদিও এক আধিকারিকের কথায়, “প্রশাসনের কী-ই বা করার ছিল। কোনও আধিকারিক বাধা দিলে তাঁরই তো বদলি হয়ে যেত, ল্যাম্পসের জায়গা বদল আটকানো যেত না।”
ল্যাম্পসগুলি নানা ভাবে কাজ করে। বিশেষত, কেন্দুপাতা কেনার ক্ষেত্রে ল্যাম্পসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জঙ্গলমহলের ৭টি ল্যাম্পস কেন্দুপাতা কেনার কাজ করে। ৩৫ টাকায় ২০০০ পাতা কেনা হত। তার পরে সেই পাতা ট্রাইবাল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন কো-অপারেটিভ সোসাইটিকে (টিডিসিসি) বিক্রি করা হত। কাঁচা পাতা কেনার অর্থ দেয় টিডিসিসি-ই। কাঁচা পাতার দাম বৃদ্ধির দাবিতেই জেলায় মাওবাদীরা প্রথম আন্দোলন শুরু করে। সরকার দাম বাড়ায়নি। তবে মাওবাদী হুমকির জেরে নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুরের ল্যাম্পস কেন্দু পাতার দাম ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করে। ল্যাম্পস থেকে এক সময়ে কম দামে শাড়ি ও অন্য সামগ্রীও বিক্রি হত। তখন আদিবাসীদের মধ্যে ল্যাম্পস নিয়ে আগ্রহও ছিল। ক্রমে সে সব বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তে অন্য প্রকল্প শুরু হয়।
আদিবাসী মহিলা স্ব-শক্তি যোজনা (আমসি) চালু করে বিভিন্ন দলকে ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয় স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে। সেই প্রকল্পের জায়গায় পরে আবার চালু হয় ‘দিশা’ প্রকল্প। এ ক্ষেত্রে দলের সদস্যদের ১০ হাজার টাকা করে সাহায্য দিয়ে স্বনির্ভর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১১৫টি দলকে সেই টাকা দেওয়াও হয়। এ ছাড়াও একটি ল্যাম্পসকে কৃষিযন্ত্র দিয়ে সাহায্য করা হয়। সেই যন্ত্র নামমাত্র খরচে ব্যবহার করতে পারবেন গরিব মানুষেরা। ল্যাম্পসের মাধ্যমে শস্যগোলা গড়ে তোলা হয়। গরিব মানুষ অসময়ে সেই ধান ঋণ হিসেবে নিতে পারতেন। এক কুইন্টাল ধান ঋ ণ নিলে ফেরৎ দেওয়ার সময়ে এক কুইন্টাল দশ কেজি ফেরত দিতে হত। মহাজনি প্রথা থেকে গরিব কৃষিজীবী মানুষকে রক্ষা করতেই এই ভাবনা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজস্ব শস্যগোলা না থাকায় সমস্যা দেখা দেয়।
প্রশাসন জানিয়েছে, এ বার প্রতিটি ল্যাম্পসকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি এক একটি ল্যাম্পসে একাধিক শস্যগোলা তৈরি করা হবে। সেখানে কর্মী নিয়োগ করা হবে। অন্য কাজকর্মও নিয়মিত খতিয়ে দেখা হবে। গরিব আদিসাবীরা যাতে ল্যাম্পসকে নিজেদের সম্পদ ভাবেন এবং তার থেকে উপকৃত হন সেই লক্ষ্যে সব রকম ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
Previous Story Medinipur Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.