উত্তর কলকাতা
সুরাহা কবে
নাকাল যাতায়াত
নামেই রাস্তা। অথচ, সে রাস্তায় কার্যত চলাফেরা করা যায় না।
কাশীপুর রোডে যাতায়াতকারীদের অভিযোগ এ রকমই। তাঁদের বক্তব্য, বিবিবাজার মোড় থেকে চিৎপুর থানা হয়ে কাশীপুর রোডের একটি অংশ চলে গিয়েছে শোভাবাজার বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ের দিকে। কিন্তু, এই চওড়া রাস্তার এক দিকে ফুটপাথ বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। এ ছাড়াও, রাস্তার সর্বত্র গর্ত, ভাঙাচোরা। সেই সব ভরাট করার জন্য সাময়িক ভাবে মাটি আর ঝামা ঢালা হলেও রাস্তা দিয়ে চলা ভারী গাড়ির চাপে সে সবটাই এখন গুঁড়িয়ে গিয়েছে। আর এক পাশের ফুটপাথ তুলনায় কিছুটা অক্ষত থাকলেও সুস্থ ভাবে হাঁটাচলার উপযুক্ত নয়। বিশেষত বৃষ্টির দিনে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কেইআইপি-র কাজের দীর্ঘসূত্রিতা। প্রায় আড়াই বছর ধরে কাশীপুর রোডে মাইক্রো টানেলিং পদ্ধতিতে মাটির তলায় পাইপ বসানোর কাজ চলছে। বিভিন্ন কারণে সময়ে সময়ে কাজ আটকেছে। বতর্মানে বিবিবাজারের মোড়ে এবং রিজেন্ট হলের কাছে খোঁড়াখুঁড়ি করে চলছে এই কাজ।
রাস্তার কাজের জন্য নিত্য যানজটের শিকার হচ্ছেন মানুষ। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির সমস্যায় জেরবার কাশীপুর রোড থেকে গঙ্গার ঘাটে যাওয়ার রাস্তা দিলারজং রোড এবং স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোড। কাশীপুর রোডের ধারের এক দোকানদার সরফরাজ আলম বলেন, “যখন-তখন গাড়ির জট পাকায়। যদিও গাড়ির নিয়ন্ত্রণে গার্ড রয়েছেন। তবু তাঁরা সব সময় সামলাতে পারেন না। রাস্তায় যানজট, গর্ত, খোঁড়াখুঁড়ির সমস্যা থাকায় অনেকে ফুটপাথ দিয়েই মোটরবাইক চালিয়ে চলে যান।”
পথচারীদের অভিযোগ, ক্রমাগত বৃষ্টিতে রাস্তার সর্বত্র তৈরি হচ্ছে জল-কাদা। হাঁটা তো দূর অস্ত্, গাড়ির যাতায়াতও দুষ্কর। দু’টি ফুটপাথের মাঝখানে জমে থাকা কাদা, আবর্জনা মাড়িয়ে নিত্য দিন যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। তার উপর বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এখানে মালপত্র ওঠানো-নামানোর কাজ চলে দিনভর। ফলে রাস্তার ধারে গাড়ি দাড়িয়ে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দা মৃণালিনী সিংহ বলেন, “ফুটপাথ দিয়ে হাঁটা যায় না। কাদায় জুতো আঠার মতো আটকে যায়। জামা-কাপড়-জুতোর
দফারফা অবস্থা। একটু বেখেয়াল হলেই পড়ে যান অনেকে।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এটি ব্যস্ত এলাকা হলেও রাস্তাঘাটের উন্নয়নে নজর নেই প্রশাসনের। এত বড় এলাকার জন্য ভরসা কেবল গুটিকয়েক বাস ও অটো। কিন্তু রাস্তার খারাপ অবস্থার জন্য সেগুলিও এখন চলছে যথেষ্ট বিপজ্জনক ভাবে।
স্থানীয় কাউন্সিলর কংগ্রেসের সুমন সিংহ বলেন, “৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এলাকার ভোটার সংখ্যা ৩৫ হাজার হলেও সব মিলিয়ে সংখ্যাটা লাখখানেক। এদের ৭৫ শতাংশই নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র। তাঁদের কথা মাথায় রেখে পরিবহণ পরিষেবার উন্নতির দিকটা ভাবা উচিত সরকারের। বাম সরকারের সময় এই নিয়ে অনেক দরবার করেছি। জানি না, কেন হল না। নতুন সরকারের সঙ্গে এখনও কথা হয়নি। এই নিয়ে আলোচনা করব।” রাস্তার বেহাল দশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কেইআইপি-র কাজের জন্য মানুষ নাজেহাল হচ্ছেন ঠিকই। তবে এ বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। গলির সঙ্গে মেন লাইনের সংযোগ দেওয়ার কাজটা বাকি। ২০০০ সাল নাগাদ রাস্তাটা পিচ করে ম্যাস্টিক করেছিলাম। চেষ্টা করব ওই রকম করে দিতে। রাস্তা সারাইয়ের কাজে নির্দিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে খানিকটা মতান্তর চলছে।”
কেইআইপি-র ডিরেক্টর জেনারেল (প্রজেক্ট) সৌম্য গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি দিলারজং ও স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের কাটা অংশটুকু সারাইয়ের কাজ শুরু হবে। বর্ষা চলে গেলে পুরো রাস্তার কথা ভাবা হবে। বিবিবাজারের মোড়ের বড় কাজটা এ মাসেই শেষ হবে। বিবিবাজার থেকে চিৎপুর পর্যন্ত অংশে বাকি কাজ শেষ করে পুজোর আগেই সম্পূর্ণ রাস্তাটা সারানো হয়ে যাবে।”
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.