|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড |
নরকের কেন্দ্র |
কাজল গুপ্ত |
বাসে উঠতে গিয়ে পড়ে গিয়ে পিঠে আর কোমরে আঘাত নিয়ে বাড়ি ফিরলেন ডানলপের রঞ্জিত বসু। যেখানে বাস দাঁড়িয়েছিল, সেখানে ছিল জলে ভরা গর্ত। উপর থেকে দেখে গর্ত বুঝতেই পারেননি তিনি। শুধু গর্তই নয়, চার দিকে আবর্জনা, কাদা অথবা পিছল রাস্তা ও ফুটপাথ। স্বল্পবৃষ্টিতেই হাঁটু সমান জল। এ ছবি ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডের। রোজ এখান থেকেই বাসে ওঠানামা করেন অসংখ্য মানুষ।
এখানে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। অথচ তার নিকাশি ব্যবস্থা থেকে সৌন্দর্যায়ন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেও এখনও এই বাস টার্মিনাসের পরিকাঠামোর দিকে কোনও গুরুত্বই দিচ্ছেন না সরকার।
|
|
এই বাসগুমটিগুলি থেকে বিভিন্ন জেলা, রাজ্য, এমনকী অন্তর্দেশীয় বাসও চলাচল করে। ফলে অসংখ্য মানুষ এই টার্মিনাস ব্যবহার করেন। বাস টার্মিনাস জুড়ে রকমারি ব্যবসা ও দোকানপাট। আর সেই সব দোকানের রোজকার আবর্জনা যত্রতত্র পড়ে থাকে।
কিন্তু আবর্জনা ও টার্মিনাসের রাস্তার বেহাল দশা ছাড়াও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ নিকাশি নিয়ে। বৃষ্টি না হলেও টার্মিনাস এলাকা কাদায় মাখামাখি। স্বল্প বৃষ্টিতেই অবস্থা আরও খারাপ হয়।
গর্তগুলি জলে ভরে গেলে উপর থেকে তা বোঝা যায় না। নিকাশির উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় বাসস্ট্যান্ডগুলিতে জল জমে থাকে দীর্ঘক্ষণ। আবর্জনা ছাড়াও গোটা চত্বরই কার্যত গণ-প্রস্রাবাগারে পরিণত হয়েছে। চতুর্দিকে দুর্গন্ধ। ফলে রীতিমতো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে এখানে। |
|
শহিদ মিনারের তলার অবস্থা আরও খারাপ। গালিপিটগুলির মুখে আবর্জনার স্তূপ। তার মধ্যে বাস টার্মিনাসের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার অবস্থা বেহাল। বড় বড় গর্ত। উল্টো দিকে কার্জন পার্কের দিকে ট্রাম ও সরকারি বাসগুমটিগুলিতেও অবস্থা একই। রাস্তায় জমা জল, উপরন্তু গর্ত। বৃষ্টির দিনে সমস্যা আরও বেড়ে যায় বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। ব্যারাকপুরের বাসিন্দা তপেশ বসু বললেন, “প্রতি দিন এই টার্মিনাস থেকে বাসে উঠি। বছরভর এলাকাটি নোংরা থাকে। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ চরমে ওঠে। এক দিকে পিছল রাস্তা, তার উপর বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় গর্ত। নতুন রাজ্য সরকার কলকাতার সৌন্দর্যায়ন নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে। এই কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিয়ে তেমন তৎপরতা দেখছি না।” জায়গাটি প্রতিরক্ষা দফতরের হলেও তাদের অনুমতি নিয়ে নিকাশি, জঞ্জাল সাফাই ও রাস্তা মেরামতির কাজ করে কলকাতা পুরসভা ও পূর্ত দফতর। বাসচালকদের অভিযোগ, এই সমস্যা অনেক দিনের। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য দূর অস্ত্, তাঁদেরই সমস্যা হয়। |
|
যদিও বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে কলকাতার পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেব বলেন, “অভিযোগ শুনলাম। কেন জল জমে যাচ্ছে, কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা জানতে আধিকারিকদের রিপোর্ট দিতে বলেছি।
দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পাশাপাশি, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমরা সমস্যাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে, তবে দ্রুত সেই সমস্যা কাটিয়ে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করব।” কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, প্রতি মাসে এক বার গোটা এলাকার আবর্জনা পুরকর্মীরা সরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু দৈনন্দিন পরিষেবা পূর্ত দফতরের আওতায়। পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রূপা বাগচী বলেন, “কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত জায়গা। অসংখ্য মানুষ এই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করেন। ফলে সেখানে রাস্তা মেরামতি থেকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দূর করা প্রয়োজন। এখন পুরসভা ও রাজ্য সরকারে একই দল। ফলে কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” |
|
পূর্ত দফতরের সিটি ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কনকেন্দু সিংহ বললেন, “প্রতিরক্ষা দফতরের অনুমতি নিয়ে রাস্তা মেরামতির কাজ পূর্ত দফতরই করে। এই চত্বরের বেহাল রাস্তা মেরামতির কাজ দ্রুত করার জন্য প্রস্তুতি চলছে।”
|
ছবি শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|