পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
যশোহর রোড |
মরণ ফাঁদ |
সত্যজিৎ চক্রবর্তী |
আন্তর্জাতিক রুট যশোহর রোড। অথচ, চূড়ান্ত বেহাল অবস্থার জন্য এই রাস্তায় দুর্ঘটনা কার্যত নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কলকাতার সঙ্গে পেট্রাপোল সীমান্ত, উত্তরবঙ্গ ও নদিয়ার একমাত্র সংযোগকারী রাস্তা যশোহর রোড। প্রতি দিন অসংখ্য ছোট-বড় যানবাহনের যাতায়াত এই রাস্তা দিয়ে। অথচ গাড়িচালকদের অভিযোগ, রাস্তাটি রীতিমতো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। রাস্তার মাঝে মাঝে পিচের চাঙড় উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টি হলে খানাখন্দগুলো জলে ডুবে যায়। তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। যশোহর রোডের এয়ারপোর্টের এক নম্বর গেট থেকে বারাসতের চাঁপাডালি মোড় পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশার চিত্রটা প্রায় একই রকমের।
|
|
যাত্রীদের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই রাস্তার দ্রুত মেরামতি হয় না। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষার মরসুম শেষ হওয়ার পরে রাস্তার সংস্কার হচ্ছে। অথচ একাধিক নতুন রুট তৈরি হয়েছে এই রাস্তায়। যানের সংখ্যাও আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু তৈরি হয়নি পিচ বা পাথরের মোটা আস্তরণের শক্তপোক্ত চওড়া রাস্তা। ফলে ঘন ঘন যান চলাচলের দরুণ রাস্তার মাঝে মাঝে পাথর বা পিচ উঠে গিয়ে এবড়োখেবড়ো হয়ে গিয়েছে। তার উপর সরু রাস্তার দু’পাশের ফুটপাথ রাস্তা থেকে বেশ নিচু। ফলে সাইকেল, মোটর সাইকেল ও অটোরিকশাকে যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংস্কার কাজ শুরু হতে হতে পেরিয়ে যায় বেশ কয়েক মাস। তত দিনে ঘটে যায় বহু দুর্ঘটনা। কিছু দিন আগেই গভীর রাতে বহরমপুরগামী একটি বাস ২৭ জন যাত্রী নিয়ে কলকাতা থেকে যাওয়ার সময় খানাখন্দ এড়াতে গিয়ে যাত্রী-সহ উল্টে যায়। নিত্যযাত্রী জয়ন্ত দে বলেন, “দুর্ঘটনা এড়াতে সাময়িক ভাবে রাস্তার মাঝের গর্তগুলি ইটের টুকরো দিয়ে ভরাট করে দেওয়া উচিত ছিল।” |
|
এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের এ হেন বেহাল দশা নিয়ে সরব হয়েছেন পুরপ্রধানেরাও। যেমন, মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের রথীন ঘোষ বললেন, “যশোহর রোডের এই অবস্থার জন্য এখানে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা হয়। তা সামলাতে তখন পুর প্রশাসনকেই প্রথম হস্তক্ষেপ করতে হয়।” পাশাপাশি, বারাসতের পুরপ্রধান তৃণমূলের সুনীল মুখোপাধ্যায়ের কথায়: “এই রাস্তা দিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মুমূর্ষু রোগীদের কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। রাস্তা খারাপের জন্য সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় তাঁদেরই। দুর্ঘটনাও লেগে আছে।” |
|
যশোহর রোডে যাতায়াতকারী গাড়িচালকদের দাবি, অবিলম্বে যশোহর রোডের মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে রাস্তার পূর্ণ সংস্কার করা হোক। রাস্তায় অসংখ্য খানাখন্দ থাকায় এমনিতেই যানবাহনকে অত্যন্ত ধীর গতিতে চলতে হয়ে। তার উপর ডিভাইডার না থাকায় খানাখন্দ এড়িয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই মুখোমুখি হয়ে যায় গাড়িগুলি। তখন সামান্য অসতর্ক হলে বা গতি বাড়ালেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।
বাসচালক শিবু দাসের কথায়: “খারাপ রাস্তায় সামান্য জোরে বাস চালালেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু আমাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাতায়াত করতে হয়। যানজটে আটকে থাকার সময় পূরণ করতে বাসের গতি বাড়াতেই হয়। তা ছাড়া আস্তে গাড়ি চালালে তেল বেশি খরচ হয় ও বেশি পরিমাণে কালো ধোঁয়া বেরোয়। এখনই এই রাস্তা ভাল করে সারাই করা উচিত। তাতে সবার জীবন বাঁচবে।” |
|
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে প্রকল্প অধিকর্তা (কৃষ্ণনগর) গৌতমকুমার দত্ত বললেন, “যশোহর রোডে অতিরিক্ত যান চলাচলের জন্য রাস্তার পিচের চাঙড় অল্প দিনের ব্যবধানে উঠে যায়। এর আগেও বছরখানেক আগে এক বার এই রাস্তা মেরামত করা হয়েছিল। এই মরসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের জন্য রাস্তার সর্বত্রই খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি কমলেই আমরা আবার রাস্তা সংস্কার শুরু করব।”
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “যশোহর রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দ্রুত মেরামতি করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে। ফলে পুলিশের পক্ষেও যান নিয়ন্ত্রণের কাজটা সহজ হয়।”
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|