মাসখানেক আগে উদ্ধার হয়েছিল বোমা ও অস্ত্র। এ বার সেখান থেকেই ধরা পড়ল দুই দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থল, হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজ।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার স্নাতক স্তরে ভর্তির কাউন্সেলিং চলার সময়ে জানা যায়, কলেজের ক্যান্টিনে অনেক বহিরাগতের ভিড় জমেছে। তখনই পুলিশ গিয়ে তল্লাশি চালালে ভিড়ের মধ্যে থেকে ধরা পড়ে সুকুমার মাজি এবং সদানন্দ মইশ ওরফে ‘টাকলা’ নামে দুই স্থানীয় সমাজবিরোধী। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের ধারণা, কলেজে গোলমাল বাধাতেই জড়ো হয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
গত ৪ জুন ওই কলেজেরই ছাত্র সংসদের ঘর থেকে কয়েকটি তাজা বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সে সময়ে এসএফআই অভিযোগ করেছিল, দীর্ঘদিন ধরে কলেজের ছাত্র সংসদ তাদের দখলে রয়েছে। তাই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পূর্ব-পরিকল্পিত ভাবে এই কাণ্ড ঘটিয়ে তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
ঠিক কী ঘটেছিল শুক্রবার? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা ১১টা থেকে ওই কলেজে স্নাতক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিং শুরু হয়। কলেজ-চত্বরে উত্তেজনা থাকায় আগে থেকেই সেখানে পুলিশি প্রহরা ছিল। শান্তিতেই চলছিল কাউন্সেলিং। বিকেলে পুলিশ খবর পায়, কলেজের ক্যান্টিনে বসে রয়েছে এলাকার কুখ্যাত দুই দুষ্কৃতী। এর পরে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে সুকুমার ও টাকলাকে ক্যান্টিন থেকে ধরে।
পুলিশের দাবি, মধ্য হাওড়ার ত্রাস ছোটুর দুই ঘনিষ্ঠ শাগরেদ হল ধৃত দুই দুষ্কৃতী। ছোটুর হয়ে তারা ব্যাঁটরা এলাকায় তোলাবাজি করে। তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই চুরি, ডাকাতি এবং তোলাবাজির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কয়েক বার অস্ত্র-সহ ধরাও পড়েছিল ওই দু’জন।
জেলা পুলিশ সুপার রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কলেজে গোলমাল পাকানোর জন্যই দুষ্কৃতীরা জড়ো হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। তবে পুলিশ থাকায় তারা কোনও গণ্ডগোল করতে পারেনি। ওই দুই দুষ্কৃতীর সঙ্গে কলেজের মধ্যে আরও কয়েক জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী ছিল বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তল্লাশির সময়ে তারা গা-ঢাকা দেয়। তাদের খোঁজ চলছে।”
কিন্তু কলেজে দুষ্কৃতীরা কেন? জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি কিরণ হাসান সর্দারের দাবি, “কলেজের ছাত্র সংসদ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে এসএফআই পরিকল্পিত ভাবে এর আগে বোমা ও অস্ত্র রেখে গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করেছিল। শুক্রবার তারা আবার ওই দুষ্কৃতীদের জড়ো করেছিল একই মতলবে।”
এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ পাল্টা বলেন, “এর আগেও ছাত্র সংসদের ঘরে বোমা ও অস্ত্র রেখে ওরা আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল। এ বার দুষ্কৃতী জড়ো করে গোলমাল পাকাতে চেয়েছিল। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই পরিষ্কার হবে, তারা কোন রাজনৈতিক দলের আশ্রিত।” এ দিকে, ওই ঘটনার পরে আগামী কয়েক মাস কলেজ-চত্বরে পুলিশ মোতায়নের জন্য জেলা পুলিশের কাছে আবেদন জানান কর্তৃপক্ষ। কলেজের অধ্যক্ষ প্রশান্ত মাহাতো বলেন, “ঠিক কী ঘটেছে, জানি না। কাউন্সেলিংয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এখন থেকে কলেজে পুলিশ পোস্টিংয়ের স্থায়ী ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করি।” |