|
|
|
|
বিহার-নেপাল সীমান্ত জঙ্গিদের পারাপারের পথ |
অত্রি মিত্র • পটনা |
আপাতদৃষ্টিতে ‘শান্ত’। মুম্বই, বারাণসী বা দেশের অন্য বড় শহরে যে ধরনের সন্ত্রাসবাদী হামলা ঘটেছে বা ঘটছে, বিহারের মাটিতে তার আঁচ পড়েনি। যদিও দেশের কোথাও এমন কাণ্ড ঘটলে বিহারেও ঘটা করে জারি হয় সতর্কতা। কিন্তু মাসখানেক পরেই শিথিল হয়ে যায় যাবতীয় কড়াকড়ি। আর এই শৈথিল্যের সুযোগ নিয়েই বিহারের নেপাল সীমান্তকে জঙ্গি সংগঠনগুলি সারা বছর ধরেই ‘ সেফ প্যাসেজ’ হিসেবে ব্যবহার করে। আর এটাই বিহার পুলিশ ও প্রশাসন-কর্তাদের বড় রকমের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে।
রাজ্যের এক পদস্থ পুলিশ কর্তার কথায়, “এ রাজ্যে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা কম। কারণ, বিহারের নেপাল সীমান্ত দিয়েই জঙ্গিরা নিশ্চিন্তে ভারতে ঢোকে। তাই কখনওই তারা বিহারে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায় না।” এই পুলিশকর্তা জানান, নেপাল সীমান্তে পাহারা জোরদার করতে একাধিক বার কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছে বিহার সরকার। এমনকী, খোদ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও কেন্দ্রকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুই পাল্টায়নি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক অফিসার এ প্রসঙ্গেই জানান, “চলতি মাসেও নেপাল সীমান্ত লাগোয়া জেলা থেকে জাল নোট-সহ একাধিক ব্যক্তি ধরা পড়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে জাল-পাসপোর্টও।” নেপাল সীমান্তকে যে জঙ্গি সংগঠনগুলি ভারতে ঢোকার ‘সেফ প্যাসেজ’ হিসেবে ব্যবহার করছে, তা নিয়ে প্রথম আলোড়ন শুরু হয় ২০০৯ সালে দিল্লিতে মধুবনির বাসোপট্টির বাসিন্দা এবং নেপাল লস্কর-ই-তইবার প্রধান মহম্মদ ওমর মদনি ধরা পড়ার পরে। তার আগেই অবশ্য মধুবনির আরও দুই বাসিন্দা কামাল আহমেদ এবং খালিদ আজিজ মুম্বই বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ধরা পড়ে। অতঃপর যে ঘটনায় খোদ গোয়েন্দারাও থ হয়ে গিয়েছিলেন তা হল তালিবানি জঙ্গি গুলাম রসুল খান ওরফে মির্জা খান ধরা পড়ার ঘটনা। গত বছর ১৩ জানুয়ারি পূর্ণিয়ায় গ্রেফতার হয় সে।
বিহারের আরারিয়া জেলার নেপাল সীমান্তবর্তী শহর যোগবিান দিয়ে ভারতে ঢুকে ট্রেনে চেপে পূর্ণিয়ায় আসে মির্জা। পরে পূর্ণিয়া থেকে বাসে কিষানগঞ্জ যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। পুলিশের জেরায় মির্জা জানায়, কিষানগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ যাওয়ার কথা ছিল তার। আল কায়দার সংগঠন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই বিহারে পাঠানো হয়েছিল তাকে। আল-কায়দার খরচ ওঠানোর জন্য কিষাণগঞ্জ-আরারিয়া এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামের যুবকদের আফিম চাষে উৎসাহ দিত মির্জা। ওই আফিম বিক্রি করেই আল-কায়দা সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ তোলা হত।
বর্তমানে দ্বারভাঙ্গা রেঞ্জের ডিআইজি এবং তদানীন্তন পূর্ণিয়ার পুলিশ সুপার নাইয়ার হোসেন খান জানিয়েছেন, মির্জার কাছ থেকে পাকিস্তানের একটি জাল-পাসপোর্ট এবং পুশতু ভাষায় লেখা একটি ডায়েরি উদ্ধার করে পুলিশ। মির্জা এখন ভাগলপুর জেলে বন্দি। তার বিরুদ্ধে আল-কায়দার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ-সহ পূর্ণিয়া আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে পুলিশ।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তার কথায়, “নেপাল সীমান্ত একমাত্র ‘সফ্ট বর্ডার’ হিসেবে পরিচিত। এর সুযোগ নিয়ে চোরাকারবার এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলির রমরমা বাড়ছে। জাল-নোটের কারবারও এ দেশে ছড়াচ্ছে নেপাল দিয়েই। যত দিন যাচ্ছে নেপাল সীমান্ত নিয়ে আমাদের উদ্বেগ ততই বাড়ছে।” |
|
|
|
|
|