|
|
|
|
|
|
|
সিনেমা সমালোচনা ১... |
|
আমিরের পরিমিতিবোধ |
তাই ‘শিট হ্যাপেন্স’ নয়। ভরপুর প্রাপ্তমনস্কতা। লিখছেন জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায় |
শিট হ্যাপেন্স!
আলবাত হ্যাপেন্স। শুধু নীতিনের নয়। সকলেরই হ্যাপেন্স, কখনও না কখনও। সেটাকে ভাল কথায় কেউ বলেন, ‘স্টমাক আপসেট’! চলতি কথায় বলে, পেট খারাপ। সাহেবরা বলত ‘দিল্লি বেলি’। দিল্লির জলহাওয়ায় প্রায়ই তাদের ‘স্টমাক আপসেট’ হত কিনা!
এ রকম একটা ট্যাগলাইন নিয়ে যখন একটা ছবি তৈরি হয়, তার মেজাজটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু ব্ল্যাক কমেডি হিসেবে ‘দিল্লি বেলি’ ঠিক কতটা প্রাপ্তমনস্ক, সেটা বুঝতে হলে ছবিটা দেখতে হবে। ইতর শব্দ আর যৌনতার স্থূল বিজ্ঞাপনী চিত্র নয়। বরং ওই দু’টি উপাদানের ব্যবহারে অসামান্য পরিমিতিবোধই ‘দিল্লি বেলি’র প্রাপ্তমনস্কতার সব চেয়ে বড় চিহ্ন।
ছবির গল্পে ‘দিল্লি বেলি’র প্রত্যক্ষ শিকার নীতিন (কুণাল রায় কপূর)। প্রকৃতির বদহজমি ডাক বেচারাকে নাকে দড়ি দিয়ে ছোটাচ্ছে। সেই সঙ্গে তার দুই রুমমেট তাশি (ইমরান খান) এবং অরূপ (বীর দাস), সকলেরই জীবনটা আরও নানাবিধ কারণে পূতিগন্ধময় হয়ে উঠেছে। আর এই সমস্তটা ঘটছে খাস দিল্লিতেই। এই দিল্লি ঝাঁ-চকচকে রাজধানী পাড়া নয়। এই দিল্লি নোংরা ঘিঞ্জি গলিঘুঁজির দিল্লি। পুরনো ঝুরঝুরে সব বাড়ি, সকালে দু’ঘণ্টার বেশি কলে জল থাকে না।
এ হেন দিল্লির একটা ঘরেই একসঙ্গে থাকত ওরা তিন জন। তাশি সাংবাদিক, নীতিন ফোটোগ্রাফার আর অরূপ কার্টুন আঁকিয়ে। গল্প শুরু হচ্ছে যে দিন, সে দিন সকালে গড়িমসি করে টয়লেটে জল ধরে রাখা হয়নি। তার মধ্যে তাশির হবু বৌ এসে এক দফা চোটপাট চালিয়ে তাশিকে একটা প্যাকেট গছিয়ে দিয়ে গেল। সেটা যেন কোথায় একটা পৌঁছে দিতে হবে। তাশি সেটা গছিয়ে দিল নীতিনকে। নীতিন প্যাকেটটা নিয়েই বেরোল। মনের সুখে চিকেনের ঠ্যাং চিবোতে চিবোতে নিষিদ্ধ পল্লিতে ধাওয়া করে বাড়িওয়ালার গোপন কীর্তিকলাপের ছবিও তুলে ফেলল। কিন্তু তার পরেই পেটে এমনই মোচড়, নীতিনের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুলিয়ে গেল। অরূপ বাড়ি ফিরে দেখে, নীতিন রীতিমতো কাতরাচ্ছে। ফ্রিজে যে ক’টা অরেঞ্জ জুসের প্যাকেট ছিল একটাও নেই। কী হল? নীতিন বলল, খেয়ে ফেলেছি। এতগুলো প্যাকেট খেয়ে ফেলল কী করে? নাকি, রুটির বদলে কেক খাওয়ার মতো জলের অভাবে জুস দিয়েই...! অরূপ আর ভাবতে পারে না! একেই অফিসে নানা ঝঞ্ঝাটে ফেঁসেছিল, এ বার জীবন থেকে অরেঞ্জ জুসও বিদায় নিল!!! শুধু তার কমলা টি-শার্টে জেগে রইল একটা জলের কলের মোটিফ! আর এই ভয়ঙ্কর ট্র্যাজিক মুহূর্তে কিনা অরূপকে আবার বেরোতেও হল! এ বার তার জিম্মায় দু’টো প্যাকেট। একটা সেই তাশির বান্ধবীর দেওয়া, আর একটায় নীতিনের স্টুল স্যাম্পল! |
|
দিল্লি বেলি
ইরফান, কুণাল, বীর, বিজয়, পূর্ণা |
গল্পটা এর বেশি আর না বলাই ভাল। শুধু এটুকু বলা যাক, স্মাগলার-চাঁই (বিজয় রাজ), তাশির সহকর্মী মেনকা (পূর্ণা জগন্নাথন), মেনকার প্রাক্তন স্বামী, বাড়িওয়ালা, নাচের মাস্টার, উঠতি অভিনেত্রী ইত্যাদি প্রভৃতি আরও অজস্র চরিত্র আর কিম্ভূতকিমাকার ঘটনা-ঘনঘটায় গোটা ছবিটা যে ভাবে প্রায় নিখুঁত একটা বুনোটে বেঁধেছেন, তার জন্য পরিচালক অভিনয় দেওকে সেলাম না ঠুকে উপায় নেই। এতটুকু গেঁজিয়ে যাওয়া নেই, টেনে লম্বা করা নেই, কাহিনির লাটাই গোটানোর সময় খিচুড়ি পাকিয়ে যাওয়া নেই ‘দিল্লি বেলি’ একটি আদ্যন্ত মেদহীন ছবি। এবং যতগুলো চরিত্র, যত রকম উপকরণ এ ছবিতে ব্যবহার করেছেন পরিচালক, প্রত্যেকটির সদ্ব্যবহার করেছেন। অত্যন্ত সুসংহত ভাবে সেগুলো যথাস্থানে ফিরিয়েও এনেছেন। তা সে ‘ডিস্কো ফাইটার’ পোস্টারই হোক, বা ‘আই হেট ইউ’ গানের লাইনই হোক।
অভিনয়ে ইমরান-কুণাল-বীর শুধু একে অন্যের সঙ্গে পাল্লাই দেননি, চমৎকার ভারসাম্য রেখে গিয়েছেন। এত মাপা, এত নিচু তারের অভিনয় প্রাপ্তমনস্ক পরিমিতির এ-ও আর এক অভিজ্ঞান। তার পর ধরুন, ‘ডি কে বোস’-এর মতো গান পুরো না রাখার প্রলোভন জয় করার পরিমিতিও খুব সুলভ নয় কিন্তু! ‘যা চুড়েইল’ গানটা আছে। দুর্দান্ত ভাবেই আছে। এ বাদে দু’টো কথা শুধু বলার ছিল। সব মিটে যাওয়ার পরে তাশির বাইলাইনে ‘স্মাগলার র্যাকেট বাস্টেড’ বলে খবর বেরোল। ভাল কথা। কিন্তু এক জন পেশাদার সাংবাদিক তার আগে অতগুলো চূড়ান্ত অপেশাদার কাণ্ড ঘটিয়ে বসল কী করে? চোরাই হিরে বেচে টাকা করার মতো অবিমৃষ্যকারিতা সে করল কী করে? পুলিশ তাকে সে জন্য কিছু বলল না? দ্বিতীয় কথা হল, এ ছবির মহিলা চরিত্রদের প্রতি চিত্রনাট্যকার-পরিচালক কি একটু বেশি নির্মম? নাকি কমেডির স্বার্থে ওটুকু মেনে নিতে হবে?
সমকালে নির্মিত সব ছবিই এক অর্থে সমকালীন বটে। তবে কোনও কোনও ছবি খুব প্রোজ্জ্বল ভাবে সমকালীনতার দাগগুলো নিজের গায়ে ধারণ করে। ‘দিল্লি বেলি’ এই দ্বিতীয় গোত্রের ছবি। ইতিহাসের কোনও অমোঘ গতিতেই বোধহয় এ ছবির প্রযোজক আমির খান। সমকালীন প্রজন্মকে নিয়ে এর আগে একাধিক ‘কাল্ট’ ছবির মুখ ছিলেন তিনি। ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘রং দে বসন্তি’, ‘থ্রি ইডিয়টস’..। ইমরানকেও তিনিই শুরু করিয়েছিলেন ‘জানে তু ইয়া জানে না’ দিয়ে। পাপু থেকে তাশি এই বিবর্তনের কর্ণধারের নাম আমির খান। ‘পাপা কহতে হ্যায়’ থেকে ‘ড্যাডি নে কহা তু গলতি হ্যায় মেরি’ এই বিবর্তনের কান্ডারির নাম আমির খান। ‘দিল্লি বেলি’তেও তাঁকে পাওয়া যাবে। কোথায়? কী ভাবে? হলে গিয়ে দেখে নিন। |
|
|
|
|
|