বছরভর বইমেলার আনন্দ দিতে বাঁকুড়ায় ‘আনন্দ’
বেশ কিছুক্ষণ ধরেই ভিড় ঠেলে সামনে পৌঁছনোর চেষ্টা করছিলেন অজিত মিশ্র।
বাড়ি স্থানীয় মিশ্রপাড়ায়। অশীতিপর এই চিত্রগ্রাহকের সংগ্রহে রয়েছে রামকিঙ্কর বেজের বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি। কোনও মতে সামনে পৌঁছেই তাক থেকে পেড়ে ফেললেন ‘দেখি নাই ফিরে’। রামকিঙ্করের জীবন নিয়ে কালকূটের লেখা বই হাতে ধরেই একগাল হাসি। বললেন, “এই বইটা পড়ার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিনের। আজ সেই সাধ পূরণ হল।”
পাঠকের আনন্দে এ ভাবেই সামিল হয়ে গেল ‘আনন্দ’।
শুক্রবার বিকেলে বাঁকুড়া শহরের রানিগঞ্জ মোড়ে খুলল আনন্দ গ্রন্থবিপণি।
অজিতবাবু একা নন। খুশি উপচে পড়ছিল আট থেকে আশির চোখে। ঘরের কাছেই এ বার মিলবে আনন্দ পাবলিশার্সের বই।
উদ্বোধন করছেন লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়।
ওন্দা কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক বিশ্বরূপ গোস্বামী কিনলেন প্রশান্তকুমার পালের লেখা ‘রবিজীবনী’। বইয়ের দোকানে হাজির প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক চণ্ডী মুখোপাধ্যায়ও। বললেন, “আনন্দ’র কত বই যে কেনার ইচ্ছে হয়! যখনই কলকাতা যাই, ওদের বই কিনে আনি। স্থানীয় বইয়ের দোকানে অর্ডার দিলে বই আসতে সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। এ বার ইচ্ছে হলেই প্রিয় বই আমার হাতে।” সঙ্গীতশিল্পী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক ছাদের তলায় এত বৈচিত্র্য, এত উন্নত মানের বই। এ আমাদের গর্বের দিন।” চিত্রশিল্পী উৎপল চক্রবর্তীর কথায়, “মফস্সল শহরে এই ধরনের ভাল মানের বই পাওয়া এত দিন প্রায় অসম্ভব ছিল। এ বার আমাদের সেই আক্ষেপ মিটল।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন আনন্দ পাবলিশার্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর মিত্র। তিনি বলেন, “জেলায় জেলায় বইমেলাগুলিতে আমরা পাঠকদের মধ্যে দেখেছি আনন্দ’র বই কেনার আগ্রহ। আমরা চাই আনন্দ’র বই সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক। পাঠকদের আমরা বঞ্চিত করতে চাই না। ভাল সাড়া পেয়েছি।” তিনি জানান, কলকাতা-সহ রাজ্যের ১২টি জেলা শহরে ও অসমে ২টি জায়গায় আনন্দ’র বইয়ের দোকান রয়েছে। বাঁকুড়ায় হল ১৪তম গ্রন্থবিপণি। বাকি জেলাগুলিতেও বইপ্রেমীদের একেবারে ঘরের কাছে পৌঁছে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
প্রদীপ জ্বেলে এ দিন গ্রন্থবিপণির উদ্বোধন করেন চিকিৎসক তথা সাহিত্যিক লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এটি বাঁকুড়ার সাহিত্যপ্রেমী মানুষের কাছে পরমপ্রাপ্তি। বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্পে এই জেলার অবদান রয়েছে। সেই মুকুটে এ বার আরও একটি পালক যুক্ত হল।” নাট্যকার অনাদি বসু বলেন, “এই সংস্থা শুধু লেখা ছাপে না, লেখকও তৈরি করে। বাঁকুড়ায় এর বড় প্রয়োজন ছিল।”
প্রথম দিনেই নতুন বিপণিতে ভিড়।
অনুষ্ঠানে ছিলেন সাহিত্যিক হর্ষ দত্ত, তিলোত্তমা মজুমদার। বই কেনার ফাঁকে অনেকেই দুই সাহিত্যিকের সঙ্গে আলোচনা করে নিলেন, নতুন কেনা বইয়ের পাতায় তাঁদের ‘অটোগ্রাফ’ বাড়তি পাওনা হয়ে থাকল অনেকের। তিলোত্তমার উপলব্ধি, “বিশ্বাস করি, বই হাতে করে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারলে বই পড়ার আগ্রহ বাড়বে। শুনেছিলাম, বাঁকুড়ার মানুষ বই পড়তে ভালবাসেন। প্রথম দিনেই ভাল সাড়া পেলাম।”
আনন্দের সংগ্রহে রয়েছে ৩৮টি বিষয়ের প্রায় ২৫০০ বই। নতুন উপহার, ফেলুদা ও শঙ্কু ‘স্পেশাল’ টি-শার্ট। থাকছে, বই কিনলে আরও বই পাওয়ার বিশেষ সুবিধা। আরও আছে। প্রিয়জনের জন্য আনন্দ থেকে বই কেনার জন্য ‘গিফট কুপন’। বাঁকুড়া মিশন গার্লস স্কুলের প্রাক্তন এক শিক্ষিকা তাই বলেই ফেললেন, “এত দিন ছোটদের ভাল বই উপহার দেওয়ার সময় হিমশিম খেতে হত। এ বার আমার সেই চিন্তা দূর হল।”
বই কিনতে এসেছিল, ছোট্ট উৎসব পাল, সুতনু চট্টোপাধ্যায় ও জয়িতা রায়। তাদের চোখেমুখে অদ্ভুত আনন্দের রেশ, “এ বার আর বইমেলার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে হবে না। বাড়ির পাশেই আনন্দ চলে এসেছে। এ বার থেকে সারা বছরই আমাদের বইমেলা।” আনন্দ’র এই গ্রন্থবিপণির দায়িত্বে রয়েছেন সাহিত্যিক অবনী নাগ। বললেন, “বইমেলার মতোই এখানে তাক থেকে নামিয়ে, পাতা উল্টে বই কেনার সুযোগ পাবেন ক্রেতারা। ছুটি শুধু রবিবার। বাকি সব দিনই আনন্দ।”

অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।
Previous Story Business Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.