চোখের পাতা বন্ধ হলেই তাঁদের সামনে ভাসে কালকার ছবি
কালকা মেলের এস-৪ কামরায় ছিলেন তাঁরা দু’জন। দু’জনেই এক প্রকার অক্ষত শরীরে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পরে ৫ দিন কেটে গেলেও চোখের পাতা এক করতে পারছেন না দুবরাজপুর পুরসভার বাসিন্দা দুই যুবক শেখ আসমত আলি এবং সাদেক আলি খান। প্রথম জন ১৩ নম্বর এবং দ্বিতীয় জন ৯ নম্বর ওয়ার্ডে থাকেন। চোখ বন্ধ করলেই দুর্ঘটনার স্মৃতি তাঁদের দু’জনকে তাড়া করছে। তবে তাঁরা বাড়ি ফিরে আসায় খুশি দুই পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা শুধু ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
শুক্রবার দুবরাজপুর থানায় দেখা গেল শেখ আসমত আলিকে। কপালে ব্যান্ডেজ বাঁধা। তিনি বুধবার বিকেলে অন্ডালে নেমে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছেন। রেল কর্তৃপক্ষ যদি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, সে জন্য তিনি থানায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে এসেছিলেন। তিনি জানান, এই প্রথম বাড়ি থেকে বেরোলেন। অভিজ্ঞতার কথা জিজ্ঞেস করতেই তাঁর চোখ জলে ভরে গেল। কখনও শিউরে উঠলেন কখনও বা অন্যমনস্কভাবে এদিক ওদিক তাকিয়ে রইলেন। তবে মোটামুটি ভাবে যা বললেন, সেটা এই, ‘বছরের বেশিরবাগ সময় দিল্লিতে থাকেন। ওখানে তঁর কাপড়ের ব্যবসা। দু’তিন মাস পরে ১০-১২ দিনের জন্য বাড়িতে আসেন। এ বারও প্রায় ১৫ দিন বাড়িতে কাটিয়ে কর্মস্থলে ফেরার জন্য রাতে আসানসোল থেকে কালকা মেল ধরেছিলেন। সঙ্গী ছিলেন প্রায় সমবয়সী সাবেক আলি খান। তিনি দুবরাজপুরেই ইলেকট্রিকের ব্যবসা করেন। মাঝে মধ্যে দিল্লি যান মালপত্র আনতে।
শেখ আসমত আলি এবং সাদের আলি খান। নিজস্ব চিত্র।
আসমতের কথায়, “মালওয়া স্টেশনে ঢোকার আগেই ট্রেন রীতিমতো জোরে চলছিল। ক্যান্টিন থেকে খাবার আসবে তার অপেক্ষায় ছিলাম। হঠাৎ ট্রেনটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিতে থাকে। সঙ্গে আওয়াজও হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উল্টে যায় কামরা। কতক্ষণ অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম জানি না। যখন জ্ঞান ফেরে দেখি সাদেকও আমার পাশে পড়ে আছে। চারি দিকে ছড়িয়ে রয়েছেন জখম, জ্ঞানশূন্য ও মৃত যাত্রীরা। আমরা যে বেঁচে আছি, প্রথমটায় বিশ্বাস করতে পারিনি। সাদেককে ডেকে কামরা থেকে বেরনোর পথ খুঁজতে থাকি।” তিনি আরও বলেন, “আমরাও ট্রেন থেকে বেশ কয়েক জনকে বের করছিলাম। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কে বেঁচে ছিলেন জানি না। শেষে এক বাচ্চা মেয়ে বের করতে গিয়ে আমার মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল। আবার জ্ঞান হারালাম।”
সাদেক আলির বাড়িতে গিয়েও একই অভিজ্ঞাতার কথা শোনা গেল। তিনি শুধু বলেন, “কী ভাবে বেঁচে ফিরলাম জানি না।” তবে বাইরে থেকে সাদেকের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নজরে পড়েনি। ডান পায়ে সামান্য কাটা দাগ। অসহ্য যন্ত্রনা রয়েছে তিনি জানান। তবে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বাড়ির লোকের কী অবস্থা হয়েছিল? আসমতের স্ত্রী সাবানা পরভীন এবং সাদেকের স্ত্রী নাসরিন বিবি বলেন, “খবর পাওয়া মাত্র হাত-পা ঠাণ্টা হয়ে গিয়েছিল। মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করছিলাম। বাচ্চারাও কান্নাকাটি করছিল। পরে দাদাদের কাছ থেকে খবর পাই তাঁরা বেঁচে আছেন।” তবে আসমত ও সাদেক দু’জনেই বলেন, “বেঁচে থাকার খবর শ্যালকদের দিই। বাড়িতে বুঝিয়ে বলতে বলেছিলাম। তবে চোখের পাতা বন্ধ করলেই ফিরে আসছে সেই স্মৃতি। ঘুমের ওষুধ খেয়েও লাভ হচ্ছে না।”
Previous Story Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.