|
|
|
|
সাঁইথিয়া |
দুই সহকর্মীকে খুন, মৃত্যুদণ্ড তেলকল কর্মীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সিউড়ি |
বিভিন্ন আদালতে যখন বছরের পর বছর ধরে মামলা পড়ে থাকে, তখন দশ মাস আগের একটি খুনের ঘটনার নিষ্পত্তি হয়ে গেল সিউড়ি জেলা আদালতে। এবং নিজের দুই সহকর্মীকে খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড হল এক তেলকল কর্মীর। শুক্রবার সিউড়ি জেলা আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারক হরিশঙ্কর দ্বিবেদি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন দোষী সাব্যস্ত শম্ভু লোহারকে।
সাঁইথিয়া পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ওল্ড কান্দি রোড বা ময়ূরাক্ষী সরণির ধারে একটি তেলকলে গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল। সে রাতে ওই তেলকলে কাজ করছিলেন অমুয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহন দাস (৫৫), সাঁইথিয়ার আমড়াসাংড়াপাড়ার বিশ্বনাথ বাগদি (৪০) এবং তেলকল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা শম্ভু লোহার। ওই তেলকলের উপরেই মালিকের বাড়ি। |
|
শম্ভু লোহার। নিজস্ব চিত্র। |
সরকারি আইনজীবী অশোক ধর বলেন, “৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পাড়ার লোকের চিৎকারে মিল মালিকেরা নীচে নেমে দেখেন ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তেলকলের ভিতের মোহনবাবু ও বিশ্বনাথবাবুর অগ্নিদগ্ধ নিথর দেহ পড়ে আছে। তাঁদের উপরে জড়ানো বস্তা থেকেও ধোঁয়া বেরোচ্ছে।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান ছিল, প্রথমে ভারী কিছু দিয়ে ওই দু’জনের মাথায় আঘাত করা হয়। পরে প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তেলকলেও আগুন ধরানোর চেষ্টা হয়েছিল। পুলিশ শম্ভুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তার বয়ানে অসংলগ্নতা পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশি জেরার মুখে শম্ভু বলেছিল, রাত ১টা নাগাদ পিছনের দরজা খুলে সে বেরিয়েছিল প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে। মিনিট দশেক পরে তেলকলে ঢুকতে গেলে দেখে ভিতরে ডাকাতি হচ্ছে। বিশ্বনাথবাবু ও মোহনবাবুকে কয়েক জন দুষ্কৃতী মারধর করছে। বিশ্বনাথ শম্ভুকে হাতের ইশারায় চলে যেতে বলেন। শম্ভু পাঁচিল টপকে প্রথমে রেলপুলিশে খবর দেয়। রেলপুলিশের কথায় সে সাঁইথিয়া থানায় যায়। থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, শম্ভু জেরায় তেলমিলে ডাকাতির কথা জানানোর পরেই পুলিশের সন্দেহ হয়। টানা জেরায় এক সময় সে খুনের কথা কবুল করে। সিউড়ি আদালতে তুলে তাকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে দফায় দফায় জেরা করা হয়। যে শাবল দিয়ে ও নিজের দুই সহকর্মীকে খুন করেছিল, সেটিও শম্ভু বার করে দেয়। পুলিশের দাবি, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই শম্ভু তার দুই সহকর্মীকে খুন করেছিল। জেরায় সে জানায়, নিহত দুই ব্যক্তি বারবার তাকে ও তার পরিবারকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করতেন।
সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, এই খুনের মামলায় মোট ২৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ২৫ দিনের মাথায় পুলিশ চার্জশিটও জমা করে দেয় আদালতে। বিচারক বৃহস্পতিবার শম্ভুকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এ দিন তাকে ফাঁসির সাজা শোনান।
এ দিন আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন শম্ভুর মা চম্পা লোহার। তাঁর অভিযোগ, “মিল কর্তৃপক্ষই আমার ছেলেকে চক্রান্ত করে ফাঁসিয়েছে। কারণ ওদের সঙ্গে আমাদের অনেক দিন ধরে জায়গা নিয়ে বিবাদ চলছে। আমাদের জায়গা ওরা দখল করতে চাইছিল। এই জন্যই শম্ভুকে ফাঁসানো হয়েছে।” শম্ভুর আইনজীবী শিশির বৈতণ্ডি বলেন, “এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।” তবে নিহতদের বাড়ির তরফে কাউকে এ দিন আদালতে দেখা যায়নি। ওই তেলকলের মালিক নিমাইচন্দ্র দত্তের বড় ছেলে, সাঁইথিয়া শহর কংগ্রেসের সভাপতি পিনাকী দত্ত অবশ্য চম্পাদেবীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “শম্ভুর সঙ্গে যদি আমাদের বিবাদই থাকত, তা হলে আমাদের তেলকলে ওর কাজ করা কোনও প্রশ্নই থাকত না। পুলিশ তদন্ত করে ওকে দোষী পেয়েছে। এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” পাশাপাশি তিনি জানান, নিহত দুই কর্মীর পরিবারকে যথাসাধ্য সাহায্য করা হয়েছে। বিশ্বনাথবাবুর স্ত্রী জ্যোৎস্না বাগদি ও তাঁর একাদশ শ্রেণিতে পাঠরত আশিস জানিয়েছেন, তাঁদের খুবই কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে। আশিসের কথায়, “আজও ভাবতে পারি না, বাবা নেই।” একই অবস্থা মোহনবাবুর স্ত্রী জ্যোৎস্না দাসেরও। |
|
|
|
|
|