|
|
|
|
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় |
‘থুতু কাণ্ডে’ অভিযুক্তের কোর্ট সদস্য মনোনয়ন নিয়ে সরব বিদ্বজ্জনেরা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
‘থুতু কাণ্ডে’ অভিযুক্ত শিলিগুড়ির ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা ও কাউন্সিলর জয়দীপ নন্দীকে সরকারের তরফে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট সদস্য মনোনীত করা নিয়ে বিতর্ক চলছেই বৃহস্পতিবার ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়েই বিদ্বজ্জনেরা নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদার যেমন এ ঘটনাকে ‘দুভার্গ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন, তেমনই ‘পরিবর্তনপন্থী বিদ্বজ্জন’ হিসাবে জলপাইগুড়ি শহরে পরিচিত উমেশ শর্মা শিক্ষাক্ষেত্রে বাম আমলের রাজনীতিকরণের পুনরাবৃত্তি খুঁজে পেয়েছেন। তৃণমূলের রাজ্য এবং জেলা স্তরের নেতাদের একাংশ নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, ঘটনাটি মানুষের কাছে উচ্চ শিক্ষা দফতরের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অন্য সঙ্কেত দিতে পারে। |
রঞ্জন শীলশর্মা |
জয়দীপ নন্দী |
|
সাহিত্যিক তিলোত্তমা দেবী এই দিন বলেন, “যিনি থুতু কাণ্ডের মতো ঘৃণ্য কাজে অভিযুক্ত, তাকে কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটি দায়িত্বে রাখা হয়, তা মাথায় ঢুকছে না। এমন ঘটনা মানুষ মেনে নিতে পারবেন না।” চলচ্চিত্র পরিচালক রাজা সেনও বিষয়টি শুনে বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও কমিটিতে থুতু কাণ্ডে অভিযুক্তের মতো কেউ যুক্ত হলে রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় না। প্রশাসন সম্পর্কে সন্দেহ দানা বাঁধে।” এ দিন শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবে এই বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী, তৃণমূল জেলা সভাপতি গৌতম দেব বলেন, “কোর্ট সদস্য মনোনীত করার প্রক্রিয়া মেনেই রঞ্জন শীলশর্মা ও জয়দীপ নন্দীকে নির্বাচিত করা হয়েছে। বিদ্বজ্জনেরা এটা নিয়ে সমালোচনা করলে মাথা পেতে নেব ও তাঁদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলব।”
১১ জুলাই রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র ও এক কাউন্সিলরকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট সদস্য হিসাবে মনোনীত করে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়শোনা করা রঞ্জনবাবুকে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধি হিসাবে এবং জয়দীপবাবুকে শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া হয় বলে উচ্চ শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়। বুধবার বিষয়টি জানাজানির পরে উত্তরবঙ্গের বিদ্বজ্জন এবং তৃণমূলের একাংশে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
যিনি এক স্কুল পরিদর্শকের মুখে থুতু ছেটাতে পারেন তাঁকে কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট সদস্য করা হল, তা বুঝতে পারছেন না আবৃত্তিকার শোভনসুন্দর বসু। তাঁর সন্দেহ, “মনে হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখেই এ সব সিদ্ধান্ত হচ্ছে। না হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না।” সমাজকর্মী অনুরাধা তলোয়ারের কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে উচ্চশিক্ষিত এবং সাধারণের কাছে ভাবমূর্তি ভাল, এমন লোকজনকে রাখা উচিত।” কবি ও সাহিত্যিক, জলপাইগুড়ি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক বেণু দত্তরায় বলেন, “নয়া সরকারে শিক্ষাক্ষেত্রে দলতন্ত্রে পরিবর্তন হবে, এমন আশা করিনি। যাঁরা প্রকৃত শিক্ষক, শিক্ষাবিদ তাঁরা কখনও কাজের সুযোগ পাননি।”
বালুরঘাট শহরের বাসিন্দা, বিশিষ্ট নাট্যকার হরিমাধব মুখোপাধ্যায় মনে করেন, নয়া সরকার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারছে না। তিনি বলেন, “অনেক যোগ্য লোক রয়েছে। এঁদেরই কেন দিতে হবে? এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে পারছি না।” আলিপুরদুয়ার কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক ও গবেষক অর্ণব সেনের মতে, রাজনীতি বিচার করে পদ দেওয়া উচিত নয়। মালদহ বিএড কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শক্তি পাত্র উচ্চশিক্ষায় যুক্ত নয়, এমন কাউকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও পদে রাখার পক্ষপাতী নন। দুই তৃণমূল নেতার মনোনয়নের সমালোচনা করেছেন আলিপুরদুয়ারের অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসুও। কবি এবং মাথাভাঙা হাইস্কুলের শিক্ষক সন্তোষ সরকার বলেন, “কী ভাবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না।” যদিও এই প্রসঙ্গে মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূল। দলের জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, “সরকারি প্রতিনিধি কে হবেন, ঠিক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সিদ্ধান্ত নেত্রীর। আমি মন্তব্য করব না।” |
|
|
|
|
|