জঙ্গলমহল
সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে উচ্চ মাধ্যমিক করার চিন্তা
ঙ্গলমহলের সব মাধ্যমিক স্কুলকে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। স্কুলগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই সার্কুলার জারি করেছে। সেই মতো জঙ্গলমহলের মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে পরিদর্শনে যাচ্ছেন শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা। কতগুলো শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত হলে কটি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন, শিক্ষক-শিক্ষিকা ক’জন, গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত বই রয়েছে কি নাএ সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর, এই তিন জেলার মোট ২৩৫টি স্কুলকে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত করার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে এ জেলার জঙ্গলমহলের স্কুলগুলোয় পরিদর্শন শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। সেই কাজ এখন শেষের পথে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় বলেন, “পরিদর্শন শুরু হয়েছে। শীঘ্রই রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।”
ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৮টি ব্লক ও মেদিনীপুর (সদর) মহকুমার ৩টি ব্লক নিয়েই পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল। মাওবাদী প্রভাবিত এই ১১টি ব্লকে মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে সব মিলিয়ে ১০১টি। সব স্কুলেরই পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশপাশে উচ্চমাধ্যমিক স্কুল না থাকায় জঙ্গলমহলের বহু পড়ুয়াই মাধ্যমিকের পরে লেখাপড়ায় দাঁড়ি টানতে বাধ্য হয়। যারা দূরের স্কুলে ভর্তি হয়, তাদের সমস্যা হয় যাতায়াতে। জেলায় সব মিলিয়ে মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে ৭৪৬টি। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ২১১টি। এ ছাড়া মাদ্রাসা, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে খবর, জেলা থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল ৭২,৭০১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৮৭৬১ জন, ছাত্রী ৩৩৯৪০ জন। পরীক্ষার্থী সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা বাড়েনি। এ বারও ভর্তির সমস্যা দেখা দিয়েছে। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে না পেরে জঙ্গলমহলের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দ্বারস্থ হয়েছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই জেলার ৬টি স্কুলকে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়েছে। সব ক’টি স্কুলই জঙ্গলমহলের। এ বার আরও বেশি সংখ্যক স্কুল উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত হবে।
তবে জঙ্গলমহলের সব স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক চালু হলে সমস্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করছে শিক্ষক মহলের একাংশ। কারণ, এখনই বেশ কিছু স্কুলে অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকে। জেলা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “মাধ্যমিক পাশের পর অনেকেই শহর ও সংলগ্ন এলাকার স্কুলে ভর্তি হয়। শহরে প্রাইভেট টিউশনের সুযোগ বেশি। ফলে, গ্রামের কিছু উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও আসন ফাঁকা থাকে।” যেমন শালবনি ব্লকের মৌপাল হাইস্কুল। গত শিক্ষাবর্ষ থেকে এখানে উচ্চমাধ্যমিকে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। কলা বিভাগে ১০০টি আসন। এ বার ভর্তি হয়েছে ৭৪ জন। বিজ্ঞান বিভাগ চালু থাকলেও কেউই ভর্তি হয়নি। প্রধান শিক্ষক প্রসূণ পড়িয়ার মতে, “শহরের স্কুলে ভর্তি হওয়ার ঝোঁক বেড়েছে। অনেকে মনে করছে, গ্রামের স্কুলে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। কিন্তু এই ধারণা ভুল।” সরকার অবশ্য জঙ্গলমহলের ১০১টি মাধ্যমিক স্কুলকেই উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত করার পক্ষপাতী।
স্কুলছুটের সংখ্যা কমানোরও চেষ্টা চলছে পাশাপাশি। প্রতিটি শিশুকে কী ভাবে স্কুলমুখী করা যায়, তা নিয়ে সম্প্রতি কলকাতায় বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল। এ নিয়ে তৎপর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও। জেলা সর্বশিক্ষা প্রকল্প আধিকারিক শাশ্বতী দাস বলেন, “প্রতিটি শিশুকে শুধু স্কুলে পাঠানো নয়, স্কুলে যেতে যাতে তাদের ভাল লাগে সে জন্য নানা পদ্ধতি রূপায়ণে জোর দিচ্ছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো উন্নয়নেও জোর দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা সেই কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে প্রথমেই নানা তথ্য সংগ্রহ করছে প্রশাসন। যেমন, কোন কোন গ্রামে এখনও রোজগারের জন্য অন্য জেলায় লোকজনকে কাজে যেতে হয়, সেই গ্রামে পড়ুয়া কত জন, গ্রাম থেকে স্কুলের দূরত্ব কত সব তথ্যই নথিবদ্ধ করা হবে। যে শিশুটি ভাই বা বোনকে দেখভালের জন্য স্কুলে যেতে পারছে না, বা যে শিশুকে মাঠে বাবাকে খাবার পৌঁছতে যেতে হয়, তাদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হবে। বিভিন্ন সার্কেলে স্কুল পরিদর্শকের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে। সেই সব শূন্য পদ পূরণেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। লক্ষ্য একটাই, প্রতিটি শিশুকে স্কুলমুখী করা।
First Page Medinipur Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.