|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
পথ আছে |
যানবাহনের সংখ্যা, এই শ্লথগামী পশ্চিমবঙ্গে এবং তাহার শম্বুকগতি রাজধানীতেও, বৃদ্ধি পাইয়াছে, কিন্তু সেই অনুপাতে রাস্তার আয়তন বৃদ্ধি পায় নাই। যুগধর্ম। পূর্বে কতজন বঙ্গবাসীর ব্যক্তিগত যান ছিল ও এক্ষণে কতজন বঙ্গবাসীর ব্যক্তিগত যান রহিয়াছে, তাহার হিসাব গ্রহণ করিলে দেখা যাইবে, বঙ্গজগণ আর পদাতিকমাত্র নহেন। মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতা এখন বেশ, সেই ক্ষমতার ব্যবহারেও মতি হইয়াছে। তাঁহাদের অনেকেরই নিজস্ব গাড়ি হইয়াছে। গাড়িও আর বিলাস-সামগ্রী মাত্র নহে, কাজের প্রয়োজনেই তাহার ব্যবহার। আর রাস্তা! চাহিলে গাড়ি কেনা যায়, কিন্তু রাস্তা কেনা যায় না। ইচ্ছা মতো সর্বত্র রাস্তার সম্প্রসারণও সম্ভব নহে। সুতরাং ফল হইল যানজট। সাধারণ মানুষ তো জ্যাম-জমাট মহানগরের রাস্তায় আটকাইয়া থাকেন, বিশিষ্টদেরও রেহাই নাই। সম্প্রতি অমর্ত্য সেন কলিকাতায় যানজটকবলিত হইয়াছিলেন। চেষ্টা করিয়া সর্বত্র তাঁহাকে জটমুক্ত করা যায় নাই।
রাস্তা সম্প্রসারণ, যান নিয়ন্ত্রণের উন্নতিসাধন, হকার-আদি দখলদারি অপসারণ ইত্যাদি যাবতীয় বন্দোবস্ত নিশ্চয়ই জরুরি। কিন্তু তাহার সঙ্গে সঙ্গে শহরের ব্যস্ত অঞ্চলে যানের সংখ্যা কমানোও জরুরি। প্রশ্ন হইল, গাড়ি থাকিলেই সর্বত্র গাড়িতে যাইতে হয় কেন! একটি বড় কারণ, যে স্বাভাবিক পরিষেবা গণ-যানবাহনে পাওয়া উচিত তাহা পাওয়া যায় না। বসিবার উপযুক্ত জায়গা নাই, যত যাত্রী বহন করা উচিত তাহা অপেক্ষা ঢের বেশি যাত্রী তুলিয়া ঠাসিয়া দেওয়া হয়, যান চালকদের মর্জিমাফিক কখনও ধীরে কখনও তীব্রগতিতে চালানো হয়। এ সবই যাত্রী অস্বাচ্ছন্দ্যের কারণ। সুতরাং ব্যক্তিগত গাড়ি কিনিবার পর গণযানে চাপিবার ইচ্ছা মরিয়া যায়। এ পাড়া হইতে ও পাড়ায় যাইতেও গাড়ি সম্বল। সরু গলি যান কবলিত। সুতরাং জট কমাইতে গেলে এই গণ যানবাহনের মানোন্নয়ন আবশ্যিক। তবে মানোন্নয়ন করিলেই তো রাতারাতি সবাই সর্বত্র গাড়িগমনে লাগাম দিবেন না। তাহার জন্য বিশেষ আইন লাগিবে।
উদাহরণ হিসেবে লন্ডন বা বেজিংয়ের মতো শহরের যানবিধির কথা উল্লেখ করা যাইতে পারে। অনেক বড় শহরে ব্যক্তিগত যান লইয়া প্রবেশ করিতে হইলে চড়া অর্থমূল্য প্রদান করিতে হয়। গাড়ি লইয়া যাইবার জন্য পথকর এতটাই দিতে হয় যে ব্যক্তিগত যান ব্যবহার স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রিত হয়। কোনও কোনও শহরে আবার সপ্তাহে এক একটি দিন এক এক বর্গের নম্বরের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। ধরা যাক বুধবার যে গাড়ির নম্বর প্লেটে দুই রহিয়াছে সেগুলি চালানো হইবে না। নজরদারির ব্যবস্থা প্রখর এবং স্বয়ংক্রিয়। ফলে ফাঁকি দিয়া বিশেষ দিনে বিশেষ নম্বরের গাড়ি রাস্তায় নামানো যায় না। এই ভাবে আইনের মাধ্যমে যান ও জট উভয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কলিকাতাতেও অনুরূপ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। আর জনগণকেও বুঝিতে হইবে, নিয়ন্ত্রিত ভাবে যান ব্যবহার করিলে সকলেরই সুবিধা। যেমন টালিগঞ্জ হইতে শ্যামবাজার পাঁচমাথায় যাওয়ার জন্য তো গাড়ির চাহিতে মেট্রো সুবিধাজনক। দ্রুত যাওয়া যাইবে। মেট্রোর ফাঁক ও অসুবিধাগুলি মিটাইয়া দিলে মেট্রোর জবাব নাই। কাজেই বাস্তবে রাস্তার পরিমাণ আয়তন বৃদ্ধি করার সুযোগ সীমিত হইলেও জট কমাইবার উপায় বা রাস্তা যে একেবারে নাই তাহা নয়। প্রয়োজন সদিচ্ছার। এবং সুপরিকল্পনার। |
|
|
|
|
|