|
|
|
|
শহরের নিরাপত্তা |
এমন নজরদারি বছরভর থাকে না কেন, উঠছে প্রশ্ন |
শমীক ঘোষ ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায় |
যেন কলকাতাতেই হয়ে গিয়েছে বড়সড় জঙ্গি-হানা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহর জুড়ে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা দেখে বহু শহরবাসীরই প্রশ্ন, এমন পুলিশি তৎপরতা সারা বছর দেখা যায় না কেন?
বেলা পৌনে ১২টা। শিয়ালদহ স্টেশনে ঢোকার মুখে যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করছে পুলিশ। ক্ষুব্ধ এক যাত্রী দেবু সাহা তল্লাশিরত অফিসারকে প্রশ্ন করলেন, “কোথাও বোমা বিস্ফোরণ হলে তবেই রাস্তায় নামবেন? কাল, পরশু, তার পরদিন এমন তল্লাশি চালু থাকবে তো? তা যদি না থাকে, তবে তল্লাশি বন্ধ করুন। না হলে ট্রেন ধরতে পারব না।” |
|
মুম্বই বিস্ফোরণের পরে এ শহরেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি। ধর্মতলায় গাড়িতে পুলিশি তল্লাশি। রাজীব বসু |
প্রায় সব মেট্রো স্টেশনে সকাল থেকে পুলিশ-কুকুর তো আছেই, আছেন বাড়তি পুলিশকর্মীও। মাছি গলার উপায় নেই। অফিসপাড়ায় ফুটপাথে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলও নজর এড়াচ্ছে না পুলিশের। মালিকের সন্ধান না পেলেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মোড়ে গার্ড-রেল লাগিয়ে দেখা হচ্ছে গাড়ির নথি। এমন কড়াকড়ি ছিল শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশনেও। হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে যাত্রীদের ব্যাগ ও দেহ তল্লাশি হয়। দূরপাল্লার ট্রেনগুলি ছাড়ার আগে প্রতি কামরায় রেলপুলিশের কর্মীরা তল্লাশি চালান।
বুধবার রাতের মুম্বই বিস্ফোরণের পরে এই শহরের নিরাপত্তা নিয়েও কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না কলকাতা পুলিশ। রাত থেকেই শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, শিয়ালদহ, হাওড়া ও মেট্রো স্টেশনে তল্লাশি অভিযান দেখতে গিয়েছেন পুলিশ কমিশনার-সহ অন্য কর্তারা। বুধবার রাত থেকেই লালবাজারের কর্তারা শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈঠক শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবারও তা চলেছে দফায় দফায়। রেলপুলিশের কর্তারাও বড় স্টেশনগুলিতে নজরদারি কেমন চলছে, তা খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে পড়েন।
কিন্তু শহরবাসীর প্রশ্ন, একটা হামলার পরের দিনই অন্য কোনও শহরে হামলার ঘটনা কি বড় একটা দেখা যায়? সারা বছরই এ শহরে জঙ্গি-হানার আশঙ্কা থাকে। বুধবার কলকাতা পুলিশের ভাড়াটে সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিই তার প্রমাণ। সারা বছর তার প্রেক্ষিতে কেন পুলিশি তল্লাশি হবে না, মানুষ সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
পুলিশের হিসেবে কলকাতায় জঙ্গিদের সহজ ‘টার্গেট’ মেট্রো রেল। তাই নিয়মিত মেট্রোযাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু রোজের তল্লাশি কেমন হয়? অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, টিকিট কাউন্টারের সামনে যাত্রীকে তাঁর ব্যাগ খুলতে বলে অন্যদের সঙ্গে খোশগল্প করেন পুলিশকর্মীরা। বড়জোর ব্যাগের দিকে এক ঝলক তাকিয়েই যাত্রীদের চলে যেতে বলেন কর্তব্যরত কর্মী। |
|
শিয়ালদহ স্টেশনে যাত্রীর ব্যাগ পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার। দেশকল্যাণ চৌধুরী |
অন্যান্য দিন শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশনেও নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে ঢিলেঢালা। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, কয়েকটি বাঙ্কারে পুলিশ থাকে। কিন্তু বহু সময়েই যাত্রীদের দিকে তাঁদের বিশেষ নজর থাকে না। ব্যাগ পরীক্ষাও বড় একটা হয় না। মেটাল ডিটেক্টর ফ্রেমগুলিও সব সময়ে কাজ করে না।
কী বলছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা? তাঁদের পক্ষে যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “কোথাও বিস্ফোরণ ঘটলে তবে পুলিশের টনক নড়ে, এই অভিযোগের ভিত্তি নেই। অন্তর্ঘাত এড়াতে যা যা করণীয়, ২৪ ঘণ্টা তথা সারা বছরই সেই কাজে ব্যস্ত থাকেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরা। প্রত্যেক ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার থেকে শুরু করে যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) সকলেই সেই কাজের দৈনিক রিপোর্ট নেন এবং কমিশনারের কাছে জমা দেন।” লালবাজারের এক কর্তার দাবি, অন্যত্র বিস্ফোরণ ঘটলে কলকাতায় পুলিশকর্তারা খতিয়ে দেখেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি রয়েছে কি না বা আরও বাড়তি নজরদারি কী ভাবে দেওয়া যায়।
রেলপুলিশের ডিজি দিলীপ মিত্র অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কারও অভিযোগ থাকলে তিনি লিখিত ভাবে জানাতে পারেন। |
|
|
|
|
|