|
|
|
|
চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে |
ক্যানসার-প্রচার কেন পিছিয়ে, প্রশ্ন রোগীর |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
‘বুলাদি’র জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হত। ক্যানসারের জন্য হয় না কেন? এই প্রশ্ন যিনি তুলেছেন, তিনি নিজে এক জন ক্যানসার রোগী। দু’-দু’বার মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। এবং দু’বারই বহু লড়াইয়ের পরে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। লড়াই এখনও তাঁর নিত্য সঙ্গী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি লিখে তিনি জানতে চেয়েছেন, যে মারণ রোগ ক্রমশ গ্রাস করছে জনসংখ্যার একটা বড় অংশকে, তার বিষয়ে সরকারি তরফে প্রচার এখনও এত কম কেন? এ বিষয়ে এড্স-এর প্রচারে ‘বুলাদি’র প্রসঙ্গ এনেছেন তিনি। লিখেছেন, “ওই রোগে ক’জন মারা যাচ্ছেন? সংখ্যাটা ক্যানসারের তুলনায় অনেক কম। অথচ, সে নিয়ে প্রচারে কোটি কোটি টাকার যজ্ঞ চলে। ক্যানসার নিয়ে সরকারি তরফে কোনও হেলদোল নেই।”
ওই রোগীর নাম তরুণকুমার বসাক। রবীন্দ্র সরণির বাসিন্দা, ৫৩ বছরের ওই প্রৌঢ়ের মুখে ইতিমধ্যেই দু’বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। ২০০৬ সালে তাঁর মুখের বাঁ দিকের চোয়ালে ক্যানসার ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচার, তার পরে রেডিওথেরাপি হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁর ডান দিকের চোয়ালে ক্যানসার হয়। এ বারেও অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি। তরুণবাবুর আক্ষেপ, “রেডিওথেরাপির আধুনিক যন্ত্র সরকারি হাসপাতালে বসার কথা হয়েও বসছে না। বেসরকারি হাসপাতালে রেডিয়েশন নিতে গেলে ৮০ হাজার টাকা বা তারও বেশি খরচ। সাধারণ মানুষের সেখানে পৌঁছনোর সাধ্য কোথায়? স্বাস্থ্য খাতে নাকি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। তা হলে এ দিকে নজর নেই কেন?”
মুখ্যমন্ত্রীকে তরুণবাবু লিখেছেন, “এ রাজ্যে দক্ষ চিকিৎসকের অভাব নেই। কিন্তু সরকারি স্তরে আধুনিক চিকিৎসার পরিকাঠামো কোথায়? দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসেন। কিন্তু এসেও তাঁরা অনেকেই চিকিৎসার সুযোগ পান না। তাঁদের পরিবারের লোকেদের অল্প খরচে থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে দালালেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। দয়া করে এ দিকে নজর দিন।”
তরুণবাবু নিজে বহু বছর পানমশলা, গুটখা খেতেন। বললেন, “এর যে কী ক্ষতি, তা তখন বুঝিনি। অনেকে এখনও বোঝেন না। তাঁদের সতর্ক করতে সরকারের অনেক বেশি চেষ্টা দরকার। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে হোর্ডিং লাগানো দরকার। ধূমপান-বিরোধী আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করুন। মহাকরণ আর স্বাস্থ্য ভবনকে দিয়ে এর শুরু হোক।” ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সরকারকে একটি টাস্ক ফোর্স গড়তেও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
তরুণবাবুর অস্ত্রোপচার করেছেন যে চিকিৎসক, সেই গৌতম মুখোপাধ্যায়ও বললেন, “সচেতনতা বাড়ানোর কাজ যা করার, সবটাই মূলত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি করে। সরকার এগিয়ে এলে খুব ভাল হত। কেন যে আসে না, সেটাই আশ্চর্যের।”
কী ভাবছে স্বাস্থ্য দফতর? তাদের যে এ বিষয়ে কোনও সম্যক ধারণাই নেই, তা আরও স্পষ্ট হয়ে যায়, যখন ক্যানসারের প্রচারের খাতে বার্ষিক কত টাকা বরাদ্দ, সেই প্রশ্নের কোনও জবাব মেলে না। ক্যানসার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত, স্বাস্থ্য দফতরের সহ-অধিকর্তা গঙ্গাধর মহাপাত্র বলেন, “সচেতনতা বাড়ানোর কোনও চেষ্টাই চলছে না, তা নয়। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সামিল করে ধূমপান-বিরোধী প্রচার শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই কোচবিহার ও মুর্শিদাবাদে কাজ শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে রাজ্যের সর্বত্র হবে।”
শুধুই ধূমপান-বিরোধী প্রচার? ক্যানসার প্রতিরোধে আর কোনও সচেতনতার কথা ভাবনায় নেই? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। |
|
|
|
|
|