তিন দিনে দু’টি হাসপাতালে মৃত্যু ২৭ শিশুর |
নিজস্ব সংবাদদাতা• বহরমপুর |
মুর্শিদাবাদের দুটি হাসপাতালে শিশু-মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৭। রবিবার সকালে বহরমপুর সদর হাসপাতালে দুজন ও জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে একটি শিশু মারা যায়। তার আগের ৪৮ ঘন্টায় ওই দুটি হাসপাতালে ২৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়।
এদিকে ওই শিশু-মৃত্যুর তদন্তে রবিবার স্বাস্থ্য ভবনের দুজন কর্তা-সহ নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের বিশেষজ্ঞ বীরেন্দ্রনাথ রায় বহরমপুরের জেলা সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগ সরজমিনে খতিয়ে দেখেন। এর পরেই স্বাস্থ্য কর্তাদের নির্দেশে তাঁদের উপস্থিতিতেই শিশু বিভাগে তড়িঘড়ি অতিরিক্ত ৫টি বেড চালু করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে এজন্য ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’ তৈরি করে শিশু বিভাগে ভর্তি থাকা এক দিন থেকে ২০ দিন বয়সী সদ্যোজাত ১৫ জন শিশুকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের উপ-সহ অধিকর্তা (ডিএডিএইচএস) শুভাশিস সাহা বলেন, “শিশু-মৃত্যুর খবর পেয়েই গোটা বিষয়টি আমরা সরজমিনে খতিয়ে দেখতেই বহরমপুরে এসেছি। কলকাতায় ফিরে গিয়েই স্বাস্থ্য ভবনে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই স্বাস্থ্য ভবন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” |
|
শিশু মৃত্যুর পরে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞেরা। নিজস্ব চিত্র। |
এদিন হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েই বহরমপুর সদর হাসপাতালের পরিকাঠামোগত ত্রুটি থেকে জেলার বিবিধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রোগী পাঠানো পদ্ধতির সমালোচনা করেন ওই স্বাস্থ্যকর্তা।
শুভাশিসবাবু বলেন, “হাসপাতালের পরিকাঠামোগত কিছু ত্রুটি তো রয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রোগী পাঠানোর পদ্ধতিগত সমস্যাও রয়েছে। এই সব সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে জেলা হাসপাতালে আরও উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার দেওয়ার জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকরী করা হবে।”এদিন শুভাশিসবাবুর সঙ্গে সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগ পরিদর্শন করেন ভারপ্রাপ্ত হাসপাতাল (প্রশাসন) সুপ্রিয় সরকার। স্বাস্থ্যকর্তাদের কথায়, শেষ সময়ে বহরমপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করার ফলেই শিশু-মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বহরমপুর সদর হাসপাতালে ১৭ জন ও জঙ্গিপুর হাসপাতালে ১০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে সদর হাসপাতালে যে সমস্ত শিশু মারা গিয়েছে, তাদের সকলেরই বয়স এক দিন থেকে ১০ দিন। দেড় মাস থেকে তিন বছর বয়সের রয়েছে মাত্র তিন জন। |
বহরমপুর সদর হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনা |
• ৬ অক্টোবর ২০০৮ সাত দিনে ২৫ শিশুর মৃত্যু হয়।
|
•৩০ অগস্ট ২০১০ পাঁচ দিনে ১৪ শিশুর মৃত্যু হয়। |
|
শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে এদিন পরিষদীয় দফতরের প্রতিমন্ত্রী মনোজ চক্রবর্তী হাসপাতালে যান। তিনি হাসপাতালের অব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যকর্তার সামনেই সরব হন। অন্য দিকে পূর্ত দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলাশাসক এবং সিএমওএইচ-কে জানিয়েছি।”
হাসপাতালের অব্যবস্থার কারণেই পর পর শিশু-মৃত্যু ঘটছে অভিযোগ তুলে এদিন বহরমপুর শহর কংগ্রেস ১০ দফা দাবি জানিয়ে বহরমপুর সদর হাসপাতালের সুপার পার্থ দে-র কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। সেই সঙ্গে মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা কমিটি যৌথ ভাবে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। পার্থবাবু বলেন, “২০-৫০ কিমি দূরের হাসপাতাল থেকে শিশুরোগীদের পাঠিয়ে দেওয়ার ফলেই চাপ পড়ছে বহরমপুর হাসপাতালের শিশু বিভাগে। কিন্তু শারীরিক অবস্থা ভাল না থাকার জন্য ওই শিশুদের আমরা কলকাতায় পাঠাতে পারছি না। সেক্ষেত্রে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথেই ওই শিশুদের মৃত্যু ঘটলে বাড়ির লোকজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দুষবে। তাই হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হচ্ছে।”
এদিন শিশু বিভাগে ৬১ জন শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে। বেড মাত্র ২৮টি। এই শিশু রোগীদের সঙ্গে ৬১ জন মা বা তাঁদের আত্মীয়-পরিজন, স্বাস্থ্যকর্মী সব মিলিয়ে শিশুবিভাগে এখন উপচে পড়া ভিড়। শিশু বিশেষজ্ঞ অমিয় ঘটক বলেন, “শিশু বিভাগে এখন যা ভিড়, তা শিশুরোগীদের পক্ষে স্বাস্থ্যসম্মতও নয়। এর পাশাপাশি সর্বক্ষণ ভিড় থাকায় সঠিক ভাবে চিকিৎসাও করা যাচ্ছে না।” |
|