|
|
|
|
আতঙ্কে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তালা দিলেন ডাক্তার ও কর্মীরা |
পীযূষ সাহা• মালদহ |
অভিযোগ, তিনি হাসপাতালের কর্মীদের কাছে টাকা দাবি করেছেন। হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার জন্য ‘চাপ’-ও দিচ্ছিলেন। এখানেই শেষ নয়, জুন মাসে খোদ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে রিভলভার দেখিয়ে খুনের হুমকি দেন বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানত সবই। ধরা পড়েননি বরুণ ঘোষ নামে এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত ওই ব্যক্তি। শনিবার রাতে তিনিই ফের হাঁসুয়া নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে এক চিকিৎসকে খুনের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। আতঙ্কে রাতারাতি ভর্তি থাকা সমস্ত রোগীকে ‘রেফার’ করে হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার বেদরাবাদ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা। রবিবার সকালেই নিরাপত্তার দাবিতে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে সদলবলে ছুটে আসেন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্ত চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী। এ দিন বহু রোগী ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটে তালা দেখে ফিরে যেতে বাধ্য হন। গোটা ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। |
|
বন্ধ বেরাদাবাদের ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |
দলীয় কর্মীর বিরুদ্ধে এমন মারাত্মক অভিযোগ ওঠায় দৃশ্যতই অস্বস্তিতে মালদহ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের শিশু, নারী ও সমাজকল্যাণ উন্নয়ন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেছেন, “কিছুদিন আগে বেদরাবাদের বিএমওএইচ আমার কাছে এসেছিলেন। তখনই পুলিশকে ফোন
করে ওই ব্যক্তিকে ধরার জন্য বলি। পুলিশ সেই সময় অভিযুক্তকে ধরলে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না। এই ঘটনার জন পুলিশই দায়ী!” একই কথা বলেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্রীকান্ত রায়। তাঁর কথায়, “বেদরাবাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার, নার্সরা বেশ কিছুদিন ধরেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিশ ওই ব্যক্তিকে ধরেনি। বাধ্য হয়েই ডাক্তার ও নার্সরা এলাকা ছেড়ে চলে এসেছেন।”
জেলাশাসক রাজেশ সিংহ বলেন, “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা আমার কাছে এসেছিলেন। পুলিশ সুপারকে বলেছি ওই সমাজবিরোধীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে। চিকিৎসক ও নার্সদের দ্রুত হাসপাতালে ফেরার অনুরোধও করা হয়েছে।” পুলিশ সুপার ভূবন মণ্ডলের বক্তব্য, “বৈষ্ণবনগরের আইসিকে বলেছি, যে ভাবেই হোক ওই সমাজবিরোধীকে গ্রেফতার করতে হবে। হাসপাতালে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ না-ফেরা পর্যন্ত পুলিশ পিকেট থাকবে।”
স্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া পাড়াতেই বাড়ি অভিযুক্ত বরুণ ঘোষের বাড়ি ওই এলাকাতেই। ৩০ শয্যার বেদরাবাদ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫ জন চিকিৎসক, ৫ জন নার্স এবং ৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রয়েছেন। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভরঞ্জন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “আমার বুকে রিভলবার ধরে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেনি। এ ভাবে হাসপাতাল চালানো সম্ভব নয়।” কর্মীদের অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশকর্মীদের একাংশের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ রয়েছে অভিযুক্তের। তাই বারবার তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে এ ভাবে হুমকি দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন।
শনিবার রাতে হাঁসুয়া-কাণ্ডের পরেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগে ভর্তি ৩৫ জন রোগীকে মালদহ সদর হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। ভয়ে রাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বেরোননি চিকিৎসক ও কর্মীরা। সকাল হতেই তিনটি গাড়ি নিয়ে সোজা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে চলে যান তাঁরা।
এর পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। বরুণের বাড়িতে হানা দিলেও তিনি স্ত্রী ও চার ছেলেকে নিয়ে ততক্ষণে গা ঢাকা দিয়েছেন। অভিযুক্তের দাদা আনন্দ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছে। এ দিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটে তালা। স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু ঘোষ, রাজকুমার ঘোষ, মিঠুন ঘোষরা বলেন, “শনিবার রাতে ডাক্তারবাবুরা জোর করে হাসপাতালের সমস্ত রোগীকে ছুটি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এখানে পরিষেবা ঠিকই চলছিল। বরুণই সব গোলমাল পাকাচ্ছে। আগে কংগ্রেস করত। এখন তৃণমূল করে। তবে রোগীদের বার করে দেওয়াটাও ঠিক নয়।” সদর হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ‘রেফার’ করা কোনও রোগীই সেখানে যাননি। |
|
|
|
|
|